চট্টগ্রাম: সালেহ আহমদ জিয়া বোমাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। নারী নির্যাতন, হত্যাচেষ্টা, বোমাবাজির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রয়েছে আটটি মামলা।
অভিযোগ রয়েছে, যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বায়েজিদ এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ কর্মীদের সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছেন দখল সাম্রাজ্য। তার দখল থেকে বাদ যায় না মসজিদও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এত সব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকলেও পুলিশের ‘নমনীয়তায়’ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন সালেহ আহমদ জিয়া। আর সালেহ আহমদ জিয়ার এমন দুঃসাহসের উৎস তার শ্বশুর পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর। শ্বশুর পুলিশ সদস্য হওয়ায় দখলবাজিতে কাউকে তোয়াক্কাও করেন না তিনি।
সালেহ আহমদ জিয়া বায়েজিদ থানাধীন শেরশাহ কলোনী দিঘীরপাড় এলাকার মহিউদ্দীন আহমদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় সাতটি, ঢাকা সাভার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটিসহ মোট আটটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, করোনাকালে বায়েজিদ পূর্বাচল সমবায় বসতি লিমিটেডের অধীনে গড়ে উঠা একটি আবাসিক এলাকার মসজিদ ভুয়া দলিল তৈরি করে রাতের আঁধারে দখল করেন সালেহ আহমদ জিয়া। রাতারাতি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও করেন।
পরে পূর্বাচল সমবায় বসতি কর্তৃপক্ষ বায়েজিদ থানায় সাধারণ ডায়রি করলে পুলিশ ঘটনা তদন্ত করে পূর্বাচল সমবায় বসতি কর্তৃপক্ষকে মসজিদের দখল বুঝিয়ে দেয়।
পূর্বাচল সমবায় বসতি লিমিটেডের সভাপতি দিদারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, রাতের আঁধারে এসে আমাদের আবাসিক এলাকার মসজিদের জমিটি দখল করে ফেলে সালেহ আহমদ জিয়া। পরে আমরা থানায় জিডি করলে পুলিশের হস্তক্ষেপে মসজিদের জায়গাটি তার হাত থেকে ফেরত পাই।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, পূর্বাচল সমবায় বসতি লিমিটেডের আবাসিক এলাকার মসজিদের জায়গা দখল নিয়ে সমস্যা হয়েছিল সেটি সমাধান হয়েছে।
সালেহ আহমদ জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা, অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া প্রসঙ্গে ওসি প্রিটন সরকার বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছিল। কারাগার থেকে জামিন নিয়ে বের হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো ওয়ারেন্ট নেই থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিতাম।
পুলিশ সদস্যের মেয়ের জামাই তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না স্থানীয়দের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি প্রিটন সরকার বলেন, পুলিশের মেয়ের জামাই হোক আর যাই হোক আমাদের কাছে অপরাধী সবসময় অপরাধী। এমন পরিচয়ে ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই।
আবাসিক এলাকায় কারখানা চালু
এদিকে পূর্বাচল সমবায় বসতি লিমিটেডের অধীনে গড়ে উঠা আবাসিক এলাকায় আরেকটি ১৩ নম্বর প্লটের জায়গাটি দখল করে কারখানা তৈরির অভিযোগ উঠেছে।
পূর্বাচল সমবায় বসতি লিমিটেডের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়ে পরিবেশ অধিদফতর বরাবর অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
পূর্বাচল সমবায় বসতি লিমিটেডের সভাপতি দিদারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আবাসিক এলাকায় আরেকটি ১৩ নম্বর প্লটের জায়গাটি দখল করে সেখানে ফোম কারখানা তৈরি করছেন সালেহ আহমদ জিয়া। আবাসিক এলাকায় কোনো কারখানার নিয়ম নেই। আমরা পরিবেশ অধিদফতর বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম শহরের ভেতরে সিডিএ ঘোষিত কোনো আবাসিক এলাকায় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া কারখানা তৈরি করার সুযোগ নেই।
পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের মো. নূরুল্লাহ নূরী বাংলানিউজকে বলেন, আবাসিক এলাকার ভেতরে কারখানা করার বিষয়টি দেখছি। একজন পরিদর্শককে দায়িত্ব দিয়েছি। রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নিব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সালেহ আহমদ জিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মসজিদের জায়গাটি আমার খালু নুর আহমদ কমিশনারের। তারা আমাকে জায়গাটি দেখভালের জন্য পাওয়ার দিয়েছিলেন। আমি দখল করতে যাইনি।
কারখানা করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কোনো কারখানা করছি না। সেখানে একটি গোডাউন ভাড়া দিয়েছি।
সালেহ আহমদ জিয়া দাবি করেন, তিনি সুতা ও ফোমের ব্যবসা করেন। কোনো দখলের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। বরং তাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২০
এসকে/টিসি