ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এটাই বড় পাওয়া: নাছির

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২০
মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এটাই বড় পাওয়া: নাছির মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: মেয়র হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দায়িত্ব নেওয়ার ৫ বছর পূর্ণ করেছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে মেয়র হিসেবে তিনি শপথ নিয়েছিলেন ওই বছরের ৬ মে।

এরপর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২৬ জুলাই।


গত ৫ বছর দায়িত্ব পালনকালে চসিক মেয়রের বেশকিছু জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই নগরের বিভিন্ন এলাকায় সিটি করপোরেশনের ভাউজারে করে জীবাণুনাশক পানি ছিটানোর পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষদের অর্থ সহায়তাও দেন তিনি।


নগর ঘুরে আ জ ম নাছির উদ্দীন নিজেই চালিয়েছেন প্রচারণা, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের অনুরোধ জানিয়েছেন।  


গত ১৩ জুন নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে সিটি কনভেনশন হলে চসিকের ২৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার যাত্রা শুরু করে মেয়রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।


গত ৫ বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। অথচ ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে নগরে উন্নয়নকাজ হয়েছিল আড়াই হাজার কোটি টাকার।


যারা পৌরকর পরিশোধে অক্ষম তাদের জন্য রিভিউ বোর্ড গঠন করে কর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে মেয়র নাছিরের সময়ে। অসহায় অনেককে নামমাত্র এক টাকা, দুই টাকা করে কর নির্ধারণ করে দেন মেয়র।


এই সময়ের মধ্যে আ জ ম নাছিরের গৃহীত নানা পদক্ষেপ ও নির্বাচনের আগে দেওয়া ৩৫ দফা প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই তিনি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করছেন নগরবাসী। লাখো নারী-পুরুষকে লালদীঘির মাঠে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, যৌতুক ও দুর্নীতি প্রতিরোধে শপথ করিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সিটি মেয়র। নগরকে ক্লিন ও গ্রিন সিটিতে রূপান্তরে অনেকদূর এগিয়ে গেছেন তিনি।


২০১৫ সালের আগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ছিল উন্মুক্ত ডাস্টবিন। তখন যেখানে-সেখানে ফেলা হতো ময়লা-আবর্জনা। ময়লার দুর্গন্ধে অনেক স্থানে চলাচল করাও কষ্টকর ছিল। কিন্তু আ জ ম নাছির দায়িত্ব গ্রহণের পর ডোর টু ডোর প্রকল্প গ্রহণ করে নগরবাসীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন ময়লা রাখার ৯ লাখ প্লাস্টিক বিন। এ উদ্যোগের ফলে এখন গৃহস্থালি বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে সহজে।


নগরে সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা ছিল কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। বিলবোর্ড দিয়ে পুরো নগরীর আকাশ যারা ঢেকে রেখেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন মেয়র। তাই দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের মধ্যেই উচ্ছেদ করেন প্রায় চার হাজার বিলবোর্ড, ইউনিপোল ও মেগা সাইন। এর জন্য অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন। হকারদের শৃঙ্খলায় ফেরাতে গিয়েও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন।


নগরকে শতভাগ আলোকায়ন করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও তিনি পূরণ করেছেন শতভাগ। আগে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা সন্ধ্যার পরই অন্ধকারে নিমজ্জিত হতো। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর এক হাজার ৫৫৬টি সুইচিং পয়েন্টের মাধ্যমে ৫১ হাজার এনার্জি, টিউব, হাইপ্রেসার সোডিয়াম, এলইডি ও অন্যান্য বাতি দিয়ে সড়ক আলোকায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধান প্রধান সড়কে এলইডি বাতি স্থাপন করা হয়েছে।


গ্রিন সিটি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ফুটপাতকে অনেক জায়গায় নান্দনিক করা হয়েছে। আগে যেসব এলাকার ফুটপাতে দুর্গন্ধের জন্য হাঁটা যেত না, এখন সেখানে দেখা মিলছে সবুজের। ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে নৌকার ওপর বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। আউটার স্টেডিয়ামের একাংশে সুইমিং পুল করা হয়েছে। জাতিসংঘ পার্ক সংস্কার করা হয়েছে।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র পদ ব্যবহার করে কোথাও কোনও অন্যায় সুবিধা নেননি। বরং নিজের বেতনের টাকা অসহায় ও অসচ্ছল মানুষের কাছে বিলিয়ে দিয়েছেন। প্রতি মাসে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা সম্মানী পেলেও সেই টাকা দান করছেন অটিজম স্কুল, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহায় শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীদের জন্য।


শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে তিনি আমূল পরিবর্তন এনেছেন। দায়িত্ব নিয়ে ৬টি স্কুল ও ৩টি কলেজের এমপিও, ৭টি স্কুল-কলেজে কলেজ শাখার স্বীকৃতি ও ৩টি কলেজের স্কুল শাখা থেকে কলেজ শাখা পৃথকীকরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০টি কলেজে নতুন ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও মেরামত কার্যক্রম চলমান আছে। ২০ প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ চলমান আছে।


দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত ৯৪ জন প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপকে পদোন্নতি দিয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগও দিয়েছেন। অ্যাডুকেশন ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করেছেন।


মেয়র অনেকগুলো স্বাস্থ্যকেন্দ্র আধুনিকায়ন ও সেবার মান বৃদ্ধি করেছেন। আলকরণ ওয়ার্ডে জেনারেল হাসপাতালে প্রতিবন্ধী কর্নার, দন্ত ও চক্ষু বহিঃর্বিভাগ ও হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে ম্যাটস কোর্স চালু করেছেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কৌশলপত্র চূড়ান্তভাবে প্রণয়ন এবং বহিঃর্বিভাগে রোগীদের রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে ১০ টাকা করে দিয়েছেন।


নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ‘ডিজিটাল চট্টগ্রাম’ গড়ার লক্ষ্যে চসিক মেয়র প্রতি বছর ২শ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ দেন। কোর্ট বিল্ডিংসহ নগরের বিভিন্ন এলাকা ওয়াইফাই জোন করেন। হোল্ডিং ট্যাক্স, এস্টেট ম্যানেজমেন্ট, অনলাইন ফাইলিং ও ট্রেড লাইসেন্সকে ডিজিটালাইজেশন করার উদ্যোগ নেন তিনি। অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চালু হয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস।


সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ ও কালুরঘাট বিএফআইডিসি রোডের জায়গায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ কাজ চলছে। ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি চালু করেন ‘কল সেন্টার’। কল সেন্টারের হান্টিং নম্বরে সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত যেকোনও মোবাইল থেকে ফোন করেই নাগরিক সেবা সংক্রান্ত তথ্য, অভিযোগ বা পরামর্শ দিতে পারছেন নাগরিকরা।


আইন অনুযায়ী আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ আগস্ট। দায়িত্ব পালনের শেষ সময়ে এসে কতটুকু সফল এমন প্রশ্নে চসিক মেয়র বাংলানিউজকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের তিনটি প্রধান কাজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়ক সংস্কার ও সড়ক আলোকায়নের ব্যবস্থা করা। এই তিনটি কাজই আমরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করতে পেরেছি। জলাবদ্ধতা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সার্ভে ও ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছিলাম। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এ প্রকল্প নিয়ে তারাই বিষয়টি দেখছে।  


মেয়র বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তা কার্যকর করতে গিয়ে প্রশাসনিক ব্যয় বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ। তাছাড়া আগের মেয়াদের মেয়রের আমলের ২৯৫ কোটি ২৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৪ টাকা দেনা ছিল। যেটা সামগ্রিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে। করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে আইন অনুযায়ী আমি পৌরকর পুনর্মূল্যায়ন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছি।


আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমি সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে রাজনীতি করছি। আমৃত্যু এই আদর্শেই থাকবো। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও রাজনীতি করতে গিয়ে সবার ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই বড় পাওয়া।


এদিকে চসিকের প্রশাসক পদে নিয়োগ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। চসিকের প্রশাসক পদে নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র কোনো নেতা বা বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকেও নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২০
এসি/এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।