ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

করোনায়ও পিএইচপির ১০ হাজার কর্মীর মুখে হাসি!

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২০
করোনায়ও পিএইচপির ১০ হাজার কর্মীর মুখে হাসি! পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানায় রোবটিক হ্যান্ডস । ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: করোনাকালে একের পর এক দুঃসংবাদে দিশেহারা চাকরিজীবীরা। অনেক প্রতিষ্ঠান ছাঁটাই, অবৈতনিক ছুটি, বেতন-ভাতা কাটার মতো নির্মম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে টিকে থাকার লড়াইতে।

এরই মধ্যে ব্যতিক্রম পিএইচপি ফ্যামিলি। প্রফিট শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে ১০ হাজার শ্রমিকের বেতন-ভাতা সঠিক সময়ে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
 

স্টিল, ফ্লোট গ্লাস, পেট্রো রিফাইনারি, অটোমোবাইল, অ্যালুমিনিয়াম, গ্রিন শিপ ইয়ার্ড, বিমাসহ পিএইচপির ৩০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার কর্মীর মাসে বেতন আসে ১১ কোটি টাকা। এ শিল্প গ্রুপের বছরে টার্ন ওভার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করা পিএইচপি কয়েকদিন আগে ২১ বছরে পা দিয়েছে।     

পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মাথায় একটা ফিলোসফি ঢুকিয়ে দিয়েছেন-দুর্দিন আসবে, আসতে পারে। এর জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- ঘাম শুকানোর আগে শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে দাও। এ দুইটি ফিলোসফি আমরা সবসময় ফলো করি। যখন আমরা প্রফিট করি তখন শেয়ার করি। যখন লস করি তখন আমরা তাদের ওপর বোঝা চাপাই না, হয়তো বোনাস কমিয়ে আনি। গত বছর আমরা ১২টা বোনাস দিয়েছি। এ বছর ৬টি বোনাস দিয়েছি। করোনা না থাকলে ১৪টি বোনাস দেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো।     

এ পর্যন্ত কোনো কর্মচারীকে আমরা ইচ্ছকৃতভাবে ছাঁটাই করিনি। করোনাকালে বাসায় থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছি। আমাদের মাইন্ডসেট বা মূলমন্ত্র হচ্ছে-‘কম খাবো সবাই মিলে খাবো’। এ নীতিতে আমরা কিছু অপচয় বা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাচ্ছি আমরা। বেশিরভাগ মিটিং অনলাইনে করছি। শুধু জরুরি সভা ফিজিক্যালি হচ্ছে। জ্বালানি থেকে শুরু করে অপ্রয়োজনীয় খরচ, অপচয় বন্ধ করছি। হোয়াটস অ্যাপে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। বিলাসিতা দরকার নেই। বাড়তি খরচে যাওয়ার দরকার নেই। সুস্থতা দরকার।

সরকারের দেওয়া সব স্বাস্থ্যবিধি, নীতিমালা গাইডলাইন ফলো করি। তাই আমাদের দু-একজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু সুস্থ হয়েছেন। যখন সব ফ্যাক্টরি বন্ধের ঘোষণা আসে তখন আমরা কিছু ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে পারিনি। কারণ এসব কারখানা একবার চালু করলে ১০-১২ বছর বন্ধ করা যায় না। যেমন গ্লাস ফ্যাক্টরি। বন্ধ করলে সব বিনিয়োগ লস। এ ক্ষেত্রে আমরা শ্রমিকদের অপশন দিয়েছি। কারা ছুটিতে যাবে, কারখানার ভেতরে সুরক্ষিত অবস্থায় থেকে কাজ করবে। যারা কাজ করতে রাজি ছিলো তাদের পিপিই, স্যানিটাইজার, থাকা-খাওয়া সব কারখানার ভেতরেই ব্যবস্থা করেছি। তারা খুশি মনে কাজ করেছেন। লকডাউনকালে তারা বের হয়নি, বাইর থেকে কেউ কারখানায় ঢোকেওনি।  

তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানির বয়স বেশি দিন নয়। কিন্তু ২০ বছরে আমরা দ্রুত এগিয়েছি। অন্যরা যদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত করে আমরা কাজ করেছি সকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। শুধু আমি নই। আমাদের ১০ হাজার কর্মীও সমান অংশীদার। এটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। করোনা থেকে সুরক্ষায় আমরা উন্নততর সুরক্ষাসামগ্রী, সরঞ্জাম দিয়েছি শ্রমিকদের। আমাদের রেসপনসিবিলিটি আছে।     

আমাদের বিক্রি কমেছে, কিন্তু কমিটমেন্টের কারণে বাজারে টিকে আছি। কারণ আমরা মানের সঙ্গে আপস করি না। আমরা জানি না করোনাকাল কত দিন স্থায়ী হবে। একাত্তরে আমরা জানতাম না কতদিন যুদ্ধ হবে। আমাদের হাতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ছিলো না। কিন্তু দেশপ্রেম, দৃঢ় মনোবল, সদিচ্ছ থাকার কারণে আমরা একটি সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। এখন আমাদের করোনাযুদ্ধে জেতার জন্য, পথ বের করার জন্য পজেটিভ চিন্তা থাকতে হবে, মানসিক মনোবল চাঙা রাখতে হবে। তাহলে আমরা জয়ী হবো।

করোনার কারণে আমদানির ওপর ধাক্কা এসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে পরিমাণ টাকা আয় করার কথা তা হচ্ছে না। ভারী শিল্পকারখানার কাঁচামাল আসে বিদেশ থেকে। কিন্তু যারা ছোট ইন্ডাস্ট্রি চালান তারা দেশি কাঁচামাল ব্যবহার করছে। আমার আনন্দ লাগছে, ছোট ইন্ডাস্ট্রি দেশি কাঁচামাল ব্যবহার করছে। ছোট ইন্ডাস্ট্রির বিশাল অবদান আছে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ক্ষেত্রে। আমার ছোট ছোট পার্টস তারা তৈরি করে দিচ্ছে।  
সরকারি প্রণোদনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের লোক ভোগ করছে। রি-ইনভেস্ট হচ্ছে। প্রণোদনার ক্ষেত্রে আমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে না সরকার। ছোট ইন্ডাস্ট্রিকে টেক কেয়ার করলে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ঠিক থাকবে। ব্যাংকের প্রডাক্ট একটাই- টাকা। টাকা বেচতে হয় তাকে। ব্যাংক হচ্ছে বিনিয়োগের প্রাণ।       

আমরা চেষ্টা করি স্থানীয় কাঁচামালনির্ভর শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে। এ জন্যই গ্লাস ফ্যাক্টরিতে আসা, ৯৫ শতাংশ কাঁচামাল দেশে পাওয়া যায়। অল্প কিছু কেমিক্যাল আমদানি করতে হয়।  
আমাদের স্টিলের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। দেশে লৌহখনি নেই। তবে আমরা মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ৬০০ একর জায়গার ওপর বেসিক স্টিল ইন্ডাস্ট্রি গড়বো। যেখানে আকরিক লোহা গলিয়ে ঢেউটিন, রড, পেরেক, স্ট্যাপলার পিন সব কিছু তৈরি হবে। ১০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছি সরকারকে।     

তিনি বলেন, করোনা অন্যরকম প্রভাব ফেলছে আমাদের জীবনে। বিশ্বজুড়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলেছে করোনা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণতার সঙ্গে এদেশের মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। যা বিশ্বের নজর কেড়েছে।   

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২০
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।