ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বেড়েছে ইয়াবা পাচার, পাল্টেছে কৌশল

সরওয়ার কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২০
বেড়েছে ইয়াবা পাচার, পাল্টেছে কৌশল প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ ছিলো সব কিছু। কিন্তু বন্ধ হয়নি ইয়াবা পাচার।

 

বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশের অন্যতম স্থান টেকনাফ থেকে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে গেছে ইয়াবার চালান। এসব ইয়াবা পরিবহনে কৌশলও পাল্টেছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

 নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবা পরিবহন করে আসছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে এসব ইয়াবার চালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিয়মিত ধরাও পড়ছে ইয়াবার চালান।

 

তবে যারা ধরা পড়ছেন তারা মূল ইয়াবা ব্যবসায়ী নন, বহনকারী মাত্র। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া তাদের কাজ। তারা পুলিশ, র‌্যাবের হাতে ধরা পড়লেও আড়ালে থেকে যান মূল ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।  

 

টাকার লোভে পড়ে ইয়াবার চালান নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া বহনকারীরা পুলিশ, র‌্যাবের হাতেও ধরা পড়লেও অন্য কোনো তথ্য দেন না। এ কারণে পুলিশ মূল ইয়াবা ব্যবসায়ীকে মামলায় আসামিও করতে পারে না।  

 

কড়া চেকপোস্ট ও তল্লাশী থাকা সত্ত্বেও কক্সবাজার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবার চালান আসে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায়। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে প্রবেশমুখ চুনতি এলাকায় আটক হয় বেশ কয়েকটি চালান।  

 

এছাড়া করোনার শুরু থেকে গত চার মাসে চট্টগ্রামে ছোট বড় অনেক চালান আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার পথে পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে আটক হয় এসব ইয়াবার চালান।  

 

২১ জুলাই রাতে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকা থেকে ৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৫ জনকে আটক করে লোহাগাড়া থানা পুলিশ। এসব ইয়াবা কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। আটক ব্যক্তিদের বাড়ি মানিকগঞ্জ, ঝালকাঠি, ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এবং লোহাগাড়ায় বলে জানায় পুলিশ।  

 

১৯ জুলাই সন্ধ্যায় লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকা থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবার চালান আটক করে লোহাগাড়া থানা পুলিশ। প্রাইভেট কারে করে এসব ইয়াবা কক্সবাজার থেকে নিয়ে আসা হচ্ছিল।  

 

১৭ জুলাই সকালে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকা থেকে ২ হাজার পিস ও ৫ হাজার পিস ইয়াবার দুইটি চালান আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এসব ইয়াবা নিয়ে আসা হচ্ছিল কক্সবাজার থেকে।

 

একই দিন চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে থেকে ১ হাজার ১০০ পিস ইয়াবার একটি চালান আটক করে চন্দনাইশ থানা পুলিশ। কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালানটি নিয়ে আসা হচ্ছিল।  

 

একই দিন সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে দেড় হাজার পিস ইয়াবার একটি চালানসহ এক নারীকে আটক করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। চালানটি কক্সবাজার থেকে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছিল ওই নারী।

 

একই দিন সন্ধ্যায় বাঁশখালী পুইছড়ি নতুনপাড়া এলাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ রামুর বাসিন্দা স্বামী, স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে বাঁশখালী থানা পুলিশ।  

 

১৬ জুলাই রাতে পটিয়া এলাকা থেকে ৫০০ পিস ইয়াবার চালানসহ ঢাকার বাসিন্দা দুই জনকে আটক করে পটিয়া থানা পুলিশ। একই দিন লোহাগাড়া চুনতি এলাকা থেকে ৩ হাজার পিস ইয়াবার চালানসহ দুই জনকে আটক করে লোহাগাড়া থানা পুলিশ। কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে তারা ঢাকা যাচ্ছিল।

 

এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই, জোরারগঞ্জসহ প্রায় সব থানায় আটক হয় ইয়াবার চালান। এসব ইয়াবার চালানের গন্তব্য ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। আটক হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও দেশের অন্যান্য জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে কয়েকজন সরাসরি ইয়াবার মালিক হলেও অন্যরা শুধু বহনকারী।  

 

এছাড়া কক্সবাজার থেকে বিভিন্ন কৌশলে নিয়ে আসা ইয়াবা অসংখ্য চালান আটক করেছে র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা।  ২২ জুলাই ১১ হাজার ৫৫৫ পিস ইয়াবাসহ একজনকে আটক করে র‌্যাব-৭। এসব ইয়াবা কাভার্ড ভ্যানে করে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলো।  

 

১৮ জুলাই বাকলিয়া নতুনব্রিজ এলাকা থেকে ২৬ হাজার পিস ইয়াবার চালান আটক করে র‌্যাব-৭। কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা ওই ইয়াবা ব্যবসায়ী কক্সবাজার থেকে ইয়াবাগুলো নিয়ে আসছিল। র‌্যাব, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিকে গাড়ির ধোঁয়া বের হওয়ার পাইপে ঝালাই করে লুকানো হয়েছিল এসব ইয়াবা। কিন্তু তথ্য থাকায় তা উদ্ধার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব সদস্যরা।

 

১৩ জুলাই ১৪ হাজার ৫১০ পিস ইয়াবার চালানসহ প্লাটিনাম পরিবহনের বাসের সুপারভাইজার ও হেলপারকে আটক করে র‌্যাব-৭। কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালানটি ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিল তারা। তারা বাসে চাকরির আড়ালে ইয়াবার ব্যবসা করতো। ইয়াবা চালান নিয়ে যাওয়ার সুবিধার জন্য বাসে সুপারভাইজার ও হেলপারের চাকরি নিয়েছিল।

 

৭ জুলাই ২০ হাজার পিস ইয়াবার চালানসহ কক্সবাজারের বাসিন্দা একজনকে আটক করে র‌্যাব-৭। ট্রাকে করে ইয়াবার চালানটি কক্সবাজার থেকে নিয়ে আসা হচ্ছিল।

 

এছাড়া গত ২০ জুন সমুদ্রপথে আনার পথে ইপিজেড থানাধীন বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে ১ লাখ পিস ইয়াবার চালান আটক করে র‌্যাব-৭। র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়। ট্রলারে করে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালানটি এনে বেড়িবাঁধ এলাকায় নামানো হয়েছিল চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশের জন্য।  

 

এছাড়াও আরও অসংখ্য ছোট বড় ইয়াবার চালান আটক হয়েছে র‌্যাবের হাতে। র‌্যাব, পুলিশের কড়া নজরদারিতে ধরা পড়ার পরেও থেমে নেই ইয়াবার পাচার।

 

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। মাদক বন্ধে কাজ করছি। আইজিপি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর অবস্থান নিয়েছি। জেলা পুলিশের সদস্যদের হাতে প্রতিনিয়ত আটক হচ্ছে ইয়াবার চালান। কক্সবাজারে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে আসলেও আমাদের হাতে ধরা পড়ছে।

 

এস এম রশিদুল হক বলেন, কক্সবাজারে কড়াকড়ি চলে। তবুও ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে ইয়াবার চালান নিয়ে আসে। তবে তারা কোথাও না কোথাও ধরা পড়ে। হয় আমাদের হাতে ধরা পড়ে, না হয় ফেনী বা কুমিল্লা। অর্থাৎ পুলিশের কোনো না কোনো ইউনিটে তারা ধরা পড়েই।  

 

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, ইয়াবা চালান আসা থেমে নেই যেমন সত্য, আমরাও বসে নেই। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নানা কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবার চালান নিয়ে আসে তাতে আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হলেও তারা কিন্তু আটক হচ্ছে। আমাদের সতর্ক অবস্থান ও কড়া নজরদারির কারনে ইয়াবার চালান নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছার আগেই আটক হচ্ছে।  

 

মো. মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, কক্সবাজারে র‌্যাব ও পুলিশের কড়া নজরদারির ভেতরেও ইয়াবার চালান চলে আসে। তবে তারা আমাদের হাতে আটক হয়। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কৌশল ও তাদের পাচারের রুট নিয়মিত চেঞ্জ করে। সড়ক পথের বাইরে সমুদ্রপথেও তারা ইয়াবার চালান নিয়ে আসে। আমরা সবদিকেই কড়া নজরদারি রেখেছি।  

 

বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২০
এসকে/এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।