বেশ উচ্ছ্বাসের সুরে শাহ আমানত অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক মো. আখতার হোসেন জেকি বাংলানিউজকে বলেন, দেশে করোনা মহামারীর কারণে অনলাইনে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। প্রতিদিন শতাধিক কল আসছে।
‘ফার্মের প্রবেশমুখে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লভস ও মাস্কেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্রেতারা ঢোকার সময় এসব পরে ঢুকছেন। শাহ আমানত অ্যাগ্রো ফার্মে সর্বনিম্ন ৭৫ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা দামের গরু পাওয়া যাচ্ছে। ’ বলেন তিনি।
পটিয়ার মইজ্জারটেকের আরেক অনলাইন ব্যবসায়ী দিদারুল আলম। নিজের ফেসবুক আইডি ও অনলাইন পশুর হাটের বিভিন্ন গ্রুপে গরুর পোস্ট দিলেন তিনি। লিখলেন, ‘অনেক শখের গরু। ওজন এক হাজার কেজি। ইতোমধ্যে তিন লাখ দাম হাঁকানো হয়েছে। কেউ আরও বেশি দাম দিলে বিক্রি করবো। অন্যথায় আগামী বছর। কারণ গরুটি আরও বড় হবে। ’
তিনি বাংলানিউজকে জানান, নিজস্ব ফার্মের গরুগুলোর ছবি তুলে নিজের ফেসবুক আইডি ও পেইজে দিচ্ছেন। সেখান থেকে পছন্দের গরু কিনছেন ক্রেতারা। ৫০ হাজার থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকার পর্যন্ত গরু আছে তার ফার্মে।
মইজ্জারটেকের এফএ অ্যান্ড অ্যাগ্রোর মালিক নাহিদ আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, গত বছর থেকে অনলাইনে গরু বিক্রি করা শুরু করেন তারা। ওইবছর শুধু আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে গরু বিক্রি করলেও এ বছর চট্টগ্রাম শহরের পুরো এলাকায় অনলাইনে গরু বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, ডিজিটাল মেশিনে প্রথমে গরু মাপা হয়। তারপর গরুর কালার লাল হলে কেজি প্রতি ৪২০ টাকা ও কালো বা অন্য কালার হলে ৩৫০ টাকা হিসাব করে গরু বিক্রি করা হয়। ইতোমধ্যে লাখ টাকা দামের ৪টি গরু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।
নগরের কোতোয়ালীর আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা ও একটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। করোনার কারণে তিনি এবার হাটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হাটে না গেলেও তিনি গরু কোরবানি দেবেন। এজন্য ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ ‘চাঁটগাইয়া গরুর হাটে’ তিনি ঢুকে গরু পছন্দ করলেন।
আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, পরিবার থেকে বলা আছে, গরুর হাটে না যাওয়ার। তাই অনলাইনে খুঁজে ৫০ হাজার টাকা দামের একটি গরু পছন্দ করেছি। গরুর মালিকের সঙ্গে কথা হয়েছে, সরাসরি গিয়ে পছন্দ হলে কিনে নিয়ে আসবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে শতাধিক ব্যবসায়ী এখন অনলাইনেই ব্যবসা করছেন। ব্যবসায়ীরা ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপে পশু পোস্ট করেন সঙ্গে ওজন ও দামও লিখে দেন। তারপর ক্রেতাদের পছন্দ হলে মুঠোফোনে কথা বলে সরাসরি ফার্মে এসে পছন্দের গরু কিনছেন। অনলাইনের এই হাটে কোনও ঝক্কিঝামেলা নেই। কোরবানির ডিজিটাল হাট এরইমধ্যে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই হাটের পরিসর আগের চেয়ে বেড়েছে, বেড়েছে জনপ্রিয়তাও। করোনার কারণে এবার ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর পাশাপাশি অনেক খামারি, ফার্ম বিশেষ করে ফেসবুকে পে্ইজ খুলে গরু বিক্রির তথ্য প্রকাশ করছে, বিজ্ঞাপনও দিচ্ছে।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিক্রয় ডটকমেও পশু বিক্রি হচ্ছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘দারাজ’ও পশুর হাটের আয়োজন করেছে। দারাজের অনলাইন হাটে বিভিন্ন জেলার মতো চট্টগ্রামেরও গরু রয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামের সাগরিকার গরুর হাট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন গরু ব্যবসায়ীরা। বাজারে অব্যবস্থাপনা, অপরিষ্কার ও পানি জমে যাওয়ায় এ ক্ষোভ তাদের।
আজগর আলী নামে এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে বৃষ্টি হলে পানি জমে যাচ্ছে। ফলে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। বাজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলে গরু রাখতে আরও সুবিধা হতো। করোনার কারণে ক্রেতাও দেখছি না।
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বাংলানিউজকে বলেন, আল্লাহর রহমতে চট্টগ্রামে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি সড়কের মধ্যে যাতে কোনো গরুর বাজার না হয়। এলাকাভিত্তিক অনলাইনে গরু বিক্রি হবে। এ ধরনের প্রস্তাবনা আমরা খুব শিগগিরই প্রশাসনকে দেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
জেইউ/টিসি