রোববার (৫ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিউনিসিপ্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
চসিকের উদ্যোগে নগরে সবুজায়নের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে চলতি বর্ষা মৌসুমেই ৫০ লাখ চারাগাছ রোপণের ঘোষণা দেন মেয়র।
তিনি বলেন, সবুজ উদ্ভিদ জগত মানবকুলসহ জীব-প্রাণীর বেঁচে থাকার অবলম্বন। এ সবুজ উদ্ভিদ মানব ও প্রাণীকে বেঁচে থাকার অক্সিজেন জোগায় এবং নির্গত কার্বনডাই-অক্সাইড টেনে নিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি জগতের ভারসাম্য রক্ষা করে।
তিনি বলেন, এই তো কিছুদিন আগেও আম্ফান ঘূর্ণিঝড়টি তীব্রগতিতে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসার পথে সুন্দরবনের বৃক্ষবেষ্টনী তার গতি রুদ্ধ করে দুর্বল করে দেয়। এ কারণে আম্ফানের আগ্রাসনে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গ লণ্ডভণ্ড হলেও করোনাকালে ভয়াবহ ক্ষতি থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। আজ এটাই প্রমাণিত হয় যে, সুন্দরবনের এ বৃক্ষবেষ্টনী না থাকলে বাংলাদেশে মানুষের হাহাকার ভারি হয়ে উঠতো।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল রক্ষায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে যে প্যারাবন বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে তা ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে। এ প্যারাবন উজাড় করে সেখানে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করা হচ্ছে। এর ফলে আমাদের উপকূল অরক্ষিত বলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব জনপথ বার বার লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।
নগরে অনেক শতবর্ষী বড় বড় বৃক্ষ ছিল উল্লেখ করে মেয়র বলেন, একশ্রেণির দস্যু প্রকৃতির মানুষ যারা সরকারি জায়গা থেকে এ শতবর্ষী বৃক্ষগুলো একে একে নিধন করেছে এবং এখনও করা হচ্ছে। এ কারণে চট্টগ্রামে যে ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল তা আজ অনেকাংশে লুণ্ঠিত।
তিনি প্রশ্ন করেন, লকডাউনের মধ্যেও পাহাড়নিধন কেন হয়েছে, কেন বৃক্ষনিধন হয়েছে, কেন জবর দখলের মাধ্যমে সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে? কেমন করে এভাবে প্রকৃতি বিনাশ হলো তার জবাব অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জনগণ চাইতে পারে। এ দাবির সঙ্গে সবাইকে কণ্ঠ মেলাতে হবে।
এ সময় প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী, কৃষ্ণকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহমেদ হোসাইন, বন কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন আলী জয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন শেষে মেয়র শিক্ষার্থীদের হাতে ৫০০ চারাগাছ বিতরণ করেন।
আফিয়া আখতারের সংবর্ধনা
দুই বছর চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নিয়েছেন আফিয়া আখতার। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক পদে তার যোগদানের কথা রয়েছে। সকালে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দিয়েছে চসিক।
নগর ভবনের চসিক মেয়রের দফতরে অনুষ্ঠিত বিদায় সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মেয়র বলেন, আফিয়া আখতার চসিকে আন্তরিকতা ও সফলতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নগরে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করেছেন। এ কার্যক্রম চট্টগ্রামবাসী স্মরণীয় করে রাখবেন।
অনুষ্ঠানে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট জাহানারা ফেরদৌস, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম উপস্থিত ছিলেন।
অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
মেয়র অপরাহ্নে চসিক পরিচালিত অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের সহযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্তের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চসিক অধিগ্রহণ করার পর যে উন্নয়ন হাতে নিয়েছে তা দ্রুততার সঙ্গে বাস্তাবায়নের জন্য ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দেন।
আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০ হস্তান্তর
দুপুরে টাইগারপাসে মেয়রের দফতরে এইচকে গ্রুপের পক্ষ থেকে করোনা (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হোমিও ওষুধ ১০০ জনের জন্য ১ মাসের ‘আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০’ ওষুধ হস্তান্তর করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাসেম, এইচকে গ্রুপের সিইও ছৈয়দ ছারওয়ার আলম ও ডা. কাজী সাজিয়া আফরিন শাওন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২০
এআর/টিসি