পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল রুটের ‘এমভি নৌ কল্যাণ ১’ ও ‘এমভি নৌ কল্যাণ ২’ নামের দুইটি জাহাজকে পরীক্ষামূলকভাবে আনা হয় জেটিগুলোতে। শিগগির জেটিগুলো ব্যবহারের জন্য ইজারা পাওয়া চারটি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রায় ৬ বছর ধরে জেটিগুলো অচল থাকার প্রধান কারণ ছিলো কর্ণফুলীর তলদেশ ভরাট। এ সংকট নিরসনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিলে উন্নতমানের ড্রেজার আনা হয় বিদেশ থেকে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সদরঘাট লাইটারেজ জেটিতে জোয়ারে ৪ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ) জাহাজ ভিড়াতে সক্ষম হয়েছি। এর জন্য গ্রেবের সাহায্যে প্রায় ১০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করতে হয়েছে।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে পানগাঁও রুটের ২টি কনটেইনার জাহাজকে টাগ বোটের সাহায্যে প্রথমে সদরঘাটের ২টি জেটিতে ভিড়ানো হয়। এরপর আবার বাকি দুইটি জেটিতে সেই জাহাজ দুটি নিয়ে যাই। কনটেইনার জাহাজ দিয়ে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে ছিলো লাইটার জাহাজের চেয়ে এটি অনেক ভারী। নিয়মিত জাহাজ আসা-যাওয়া এবং ড্রেজিং অব্যাহত রাখলে এ চারটি জেটি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, সদরঘাটের ৪০০ মিটারে ৪টিসহ মোট ৫টি জেটির ইজারা চুক্তি হয়েছে। ড্রেজিং করে নির্দিষ্ট ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর প্রাথমিক পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। শিগগির চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হলে ইজারাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো জেটি ব্যবহার করতে পারবে।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু (শাহ আমানত সেতু) নির্মাণের সময় নদীতে বেশি পলি জমে। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল ব্যাংক প্রটেকশন ও জেটি ফ্যাসিলিটিজসহ কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নে ২২৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশনের চুক্তি হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিসকে স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। ২০১১ সালের কাজ শুরু করে মালয়েশিয়ার মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন। ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সদরঘাট এলাকায় লাইটার জেটি নির্মাণসহ কিছু কাজ করলেও ২০১৩ সালে আগস্টে পুরো কাজ না করেই চলে যায় মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট। এরপর ২০১৪ সালের জুলাইতে বন্দর কর্তৃপক্ষ চুক্তি বাতিল করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আইনি জটিলতার কারণে প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ। ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীনে ২৪২ কোটি টাকায় ৪৩ লাখ ঘনমিটার খননের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সর্বশেষ নতুন চারটি জেটিসহ মোট ৫টি লাইটার জেটি শিল্পগ্রুপকে ১০ বছরের জন্য ইজারা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ৪ মিটার ড্রাফট নিশ্চিত না হওয়ায় ৪টি জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হচ্ছিলো না।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০৮ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২০
এআর/টিসি