ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

করোনার জিনোম বিন্যাস উন্মোচন, মিল ৪ দেশের সঙ্গে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫২ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২০
করোনার জিনোম বিন্যাস উন্মোচন, মিল ৪ দেশের সঙ্গে প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের সর্বোচ্চ ৭টি নমুনা থেকে করোনা ভাইরাসের জিনোম বিন্যাস উন্মোচিত হয়েছে। এসব নমুনার জিনোম বিন্যাসের সঙ্গে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার নমুনার মিল রয়েছে।

এই গবেষণামূলক কাজে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এর একদল গবেষক সহায়তা করেন।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর গত ২৫ মার্চ বিআইটিআইডি এবং ২৫ এপ্রিল সিভাসু করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু করে।

পরবর্তীতে সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের পৃষ্ঠপোষকতায় ৩টি প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা দুই সপ্তাহ যাবৎ অত্যাধুনিক নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং (এনজিএস) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে এই তথ্য বিন্যাস উদ্ধারে সফলতা লাভ করেন।

গবেষক দলের সদস্যরা হলেন- সিভাসুর প্যাথলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. জুনায়েদ ছিদ্দিকী, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রফেসর ড. পরিতোষ কুমার বিশ্বাস, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. সিরাজুল ইসলাম, বিআইটিআইডির পরিচালক প্রফেসর ডা. এম এ হাসান চৌধুরী, প্রফেসর ডা. শাকিল আহমেদ এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. মো. শহীদুল ইসলাম ও সাব্বির হোসেন।

এই গবেষকরা বিআইটিআইডির ল্যাবে প্রাপ্ত নমুনাসমূহ সংগ্রহ পূর্বক বিভিন্ন জেলার ১২টি নমুনা ঢাকাস্থ বিজেআরআই এর জিনোম সিকোয়েন্স ল্যাবে প্রেরণ করেন। এই পদ্ধতিতে ইলুমিনা নেক্সটসেক প্লাটফর্মে প্রায় ২৩ গিগাবাইট জিনোম ডেটা সংগৃহীত হয়।

পরবর্তীতে বায়োইনফরমেটিক্স এনালাইসিস এর মাধ্যমে মানব কোষের আরএনএ এবং করোনা ভাইরাসের আরএনএ পৃথক করা হয়। এরপর সবগুলো সিকোয়েন্সকে জিনোম এসেম্বলি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণপূর্বক নভেল করোনা ভাইরাসের জিনোম বিন্যাস উদঘাটন করা হয়।

চট্টগ্রাম এবং পাশের জেলাসমূহে বিভিন্ন করোনা পজেটিভ রোগী কোন ধরনের ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে- তা এই গবেষণার ফলে ১ম বারের মত জানা সম্ভব হবে। অধিকতর তথ্য উদঘাটনের জন্য সিভাসু আরও ২০টি নমুনা বিজেআরআই-তে প্রেরণ করেছে। যা এক সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাবেজে জমা দেয়া হবে।

জিনোম বিন্যাস উদঘাটনের ফলে কোন জেলায় কোন ধরনের ভাইরাস বিস্তার লাভ করেছে, বর্তমানে কোন প্রজাতির ভাইরাস বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তার স্বরূপ, প্রকৃতি ও উৎপত্তিস্থল কোথায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের আনবিক গঠনের বিস্তারিত পরিবর্তন ও তার প্রভাব  জানা যাবে।

এছাড়া ভবিষ্যতে টীকা উৎপাদনে কোন প্রজাতির করোনা ভাইরাসের টীকা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে, ভাইরাসের পুনর্গঠন বা পরিবর্তনজনিত নতুন প্রজাতির উদ্ভবের সম্ভাবনা ও প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা সম্ভবপর হবে।

এছাড়াও এই জিনোম বিন্যাস আন্তর্জাতিক গবেষণা পরিমন্ডলে বাংলাদেশের গবেষকদের উদ্ভাবন ও দক্ষতা প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

গবেষক দলের সদস্য ও সিভাসুর প্যাথলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জুনায়েদ ছিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যে ৭টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করেছি তা সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার নমুনার সঙ্গে মিল রয়েছে। ইতোমধ্যে ভাইরাসটি বেশ কয়েকবার মিউটেশন বা রূপ পরিবর্তন করেছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হবে। এতে বিস্তারিত উল্লেখ করা হবে। সিকোয়েন্সিং থেকে প্রাপ্ত ডেটা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এক সপ্তাহ পর আমরা এই ভাইরাসটির সম্পূর্ণ বিষয়টি জানতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘণ্টা, মে, ২১, ২০২০
এমএম/এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad