বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাস হানা দিল সিএমপি পরিবারে। একে একে ২৩ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হলেন করোনায়।
কনস্টেবল থেকে শুরু করে সহকারী পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাও যখন রক্ষা পাননি করোনার থাবা থেকে তখনও দিব্যি নিজেদের কাজ করে যাচ্ছেন সিএমপির সদস্যরা।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে শুরু হয় সাধারণ ছুটি। যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এতে সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষজন চরম আর্থিক দুর্দশার সম্মুখীন হতে পারে বিষয়টি অনুধাবন করে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের নির্দেশে শুরু থেকেই সিএমপির সদস্যরা সমাজের অসহায় মানুষদের ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসেবে পৌছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বন্দর নগরীর ৫০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী উপহার পৌঁছে দেয় সিএমপির সদস্যরা। এই কার্যক্রম করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল সদস্যের বেতনের একটা অংশ ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ সিএমপির এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করে।
সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে সিএমপির সকল থানা, গোয়েন্দা বিভাগ এবং ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা নিরাপদ পরিবেশে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে দিনের বেলা খাদ্যদ্রব্য প্যাকেট করেন এবং রাতের বেলা তালিকা অনুযায়ী অসহায় ও দুঃস্থ পরিবারের মাঝে নীরবে খাদ্যদ্রব্য পৌছে দেন।
সরকারী ত্রাণ যারা এখনো পায়নি গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে তাদেরকে খুঁজে বের করা হচ্ছে। তাদের বাসায় রাতের আঁধারে গোপনে ত্রাণ পৌছে দেওয়া হচ্ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে যারা মানসম্মানের ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না, কষ্টে রয়েছেন তাদের ঘরেও নিরবে সিএমপির খাদ্য উপহার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সিএমপির সদস্যরা কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার ও অন্যান্য বাজার পৌঁছে দিয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থলে যাওয়া আসার সময় পুলিশের গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিয়েছে।
বিভিন্ন সড়কে জীবানুনাশক ওষুধ ছিটিয়েছে। দুঃস্থ ও অসহায় রোগী, প্রসূতি নারীকে অ্যাম্বুলেন্সে ব্যবস্থা করে ক্ষেত্র বিশেষে পুলিশের গাড়িতে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
নগরীতে অসংখ্য ডাক্তার ও নার্সদের সময় মত ইফতার সামগ্রী পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। চিকিৎসক ও চিকিৎসক সহযোগিদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করণের জন্য করোনা হট লাইন ব্যবস্থা চালু করেছে।
মহানগরীর ২৫৩টি মসজিদের মাইকে একযোগে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সচেতনতা মূলক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে জনগণকে নিরাপদে রাখতে গিয়ে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ২৩ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও দমে যাননি সিএমপির সদস্যরা। অন্ধকার ঘরে একটুখানী আলো জ্বালানোর আশায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ জীবন বাজি রেখে দিন রাত নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
সিএমপির ৭ হাজার অফিসার ফোর্স জাতির এই ক্রান্তিকালে সকল মানুষের পাশে থেকে কিছুটা হলেও স্বস্থি দেওয়ার আশায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় রাখার পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায় কাজ করছেন আমাদের সদস্যরা। কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, লকডাউন, চিকিৎসকদের যানবাহন সুবিধা, অসহায় রোগী, প্রসূতিকে হাসপাতালে নেওয়ার কাজও করেছে আমাদের সদস্যরা।
তিনি বলেন, সারাদিন চরম ব্যস্ততার ভেতর দিয়ে পার করার পরে বাসায় গিয়ে একটু বিশ্রাম না নিয়ে আবার খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট কাঁধে নিয়ে রাতের আঁধারে মানুষের বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। এ যেন এক অচেনা পুলিশ, ভিন্ন এক পুলিশ। যেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ছোরা বুলেটের প্রতিধ্বনি শোনা যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্যের হৃদয়ে।
মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিক বলেন, করোনা মোকাবেলায় কাজ করতে গিয়ে আমাদের ২৩ জন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ৫ জন সদস্য করোনা জয় করে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। তারা নতুন উদ্যমে আবার কাজ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, নিজের জীবন বাজি রেখে ব্যক্তি ও পরিবারের ঊর্ধ্বে উঠে রাতের আঁধারে অসহায় নিঃস্ব পরিবারে আলো জ্বালানো, আত্মত্যাগের এই মানবিক পুলিশিং মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২০
এসকে/টিসি