জানা গেছে, করোনা আতঙ্কের মধ্যে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গতকাল শনিবার (১১ এপ্রিল) নাজিমের ছোট ভাই মহিউদ্দিন এবং তার বন্ধুরা মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় পুলিশ বাঁধা দেয়।
এ সময় দায়িত্বরত প্রহরী পুলিশকে মহিউদ্দিনের পরিচয় জানিয়ে তাকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের সুযোগ করে না দেওয়ায় রোববার (১২ এপ্রিল) বিকেলে ২ নম্বর গেইট এলাকায় দায়িত্বরত অন্য এক প্রহরীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নাজিম।
নিরাপত্তা দফতরের সুপারভাইজার বেলায়াত বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে নাজিম তাকে বেধড়ক মারধর করেন। এতে ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন বেলায়াত।
ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় তার বাসা থেকে বাংলাদেশ পুলিশের একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতরে সামনে দুটি দোকানের পিছন থেকে বিপুল পরিমাণ নিমার্ণ সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এই দুই দোকানে প্রতিনিয়ত আড্ডা দিতেন ছাত্রলীগ নেতা নাজিম।
বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যলয়ের এক প্রহরীকে মারধরের ঘটনায় নাজিমের বাসাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় তার বাসা থেকে বাংলাদেশ পুলিশের নাম সম্বলিত একটি মোটরসাইকেল, কিরিচ এবং বেশ কিছু বৈদ্যুতিক পাখা উদ্ধার করা হয়। প্রকৌশল দফতরের সামনের দুটি দোকান থেকে বেশকিছু পাইপ উদ্ধার করা হয়।
নাজিমের গ্রেফতার দাবি কর্মচারী ইউনিয়নের
প্রহরীকে মারধরের ঘটনায় নাজিমকে দ্রুত গ্রেফতার না করলে কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. নুর মোহাম্মদ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দেশের এ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন কর্মচারীরা। এরপরও বিভিন্ন সময়ে কর্মচারীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু সামাধান দাবি করছি।
নাজিমের যত অপকর্ম!
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজিমের বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জায়গা দখলসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তবে এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক অভিযোগ থাকলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া হয়নি।
মাদক: ছাত্রলীগের প্রভাব দেখিয়ে ক্যাম্পাসে রমরমা মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন নাজিম। এই কাজে তার সহযোগী তার ছোট ভাই প্রকৌশল দফতরের কর্মচারী মো. মহিউদ্দিন। এ ব্যবসা নির্বিঘ্নে পরিচালিত করতে শহীদ আব্দুর রব হলের পেছনে একটি আস্তানাও গড়ে তুলেছেন তারা।
ছিনতাই: বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশাপাশের এলাকায় ছিনতায়ের সঙ্গেও জড়িত এই নাজিম। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ থেকে এক বহিরাগতের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনতাই করেন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় সেটি উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ছিনতাইয়ের ঘটনায় নাজিমের নাম উঠে আসে। এ নিয়ে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানায় খোদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা।
চাঁদাবাজি ও মারধর: ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে এ নাজিমের বিরুদ্ধে। চাঁদা না পেয়ে মারধরের অভিযোগে হাটহাজারী থানা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন অনেকে। গত বছর চাঁদা না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বহুমুখী দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেনের দোকানের কর্মচারীকে মারধর করেন নাজিম। এই ঘটনায় আখতার হোসেন হাটহাজারী থানা ও প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন।
এছাড়া সেকান্দর নামে এক ব্যবসায়ীকে চাঁদা না দিলে মারধর করার হুমকি দেন নাজিম। গত বছর সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫১ নাম্বার কক্ষে তিন বহিরাগতকে আটকে রেখে মারধর করেন তিনি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের উত্তর প্রান্তে শোভা কলোনি এলাকায় নাজিম তার এক প্রতিবেশীর ঘর ভাংচুর ও এক কর্মচারীকে মারধর করে।
দখল: সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিনের আমলে নাজিম বিশ্ববিদ্যালয়ের লেডিস হলের ঝুঁপড়িতে একটি দোকান বরাদ্দ পায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বরাদ্দ দেওয়া জায়গার পাঁচ গুন বেশি জায়গা দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এলাকায় দুটি দোকান অবৈধভাবে দখল করে সেখানে অনৈতিক কাজ করে আসছেন তিনি। রোববার অভিযান চালিয়ে তার প্রমাণও পায় প্রশাসন।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে এ ছাত্রলীগ নেতার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২০
এমএম/এমআর/টিসি