ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

একজন মানবিক ডাক্তারের গল্প

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২০
একজন মানবিক ডাক্তারের গল্প ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ডাক্তাররাও যখন রোগীর চিকিৎসা নিয়ে আতঙ্কে আছেন, সেই সময়ে একজন মানবিক ডাক্তারের প্রচেষ্টায় জটিল অবস্থা নিয়ে ভর্তি হওয়া মা জন্ম দিয়েছেন সুস্থ সন্তান।

মানবিক ডাক্তারের নাম জাহানারা শিখা। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে প্রসূতি ও ধাত্রীবিদ্যায় তিনি নিয়েছেন উচ্চতর ডিগ্রি।

২৫তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের এই ডাক্তার কর্মরত আছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল।

এই হাসপাতালে কয়েকদিন আগে জটিল অবস্থায় ভর্তি হতে আসা এক গর্ভবতীকে চিকিৎসা দিয়ে ডা. জাহানারা শিখা দুর্যোগময় মুহূর্তে সৃষ্টি করেছেন অনন্য উদাহরণ।

নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন: ‘তিন-চারদিন আগে হাসপাতালে একটা ডেলিভারী এটেন্ড করি। রোগীর শ্বাসকষ্ট, কাশি ছিল খুব। শ্বাসকষ্টের অজুহাত দিয়ে ডিউটি ডক্টর ফোনে প্রথমে মৃদুভাবে আমাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করে রোগীকে ভর্তি দিতে। ভর্তি নেবে না মনে করে রোগীর অভিভাবকও এর মাঝে মরিয়া হয়ে আমাকে ফোন করে’।

‘হিস্ট্রি শুনে বুঝলাম, অ্যাজমা’র একিউট অ্যাক্সারবেশন হতে পারে, তাছাড়া রোগীর জ্বর নাই। বললাম-ভর্তি দাও। লেবার ডিউরেশন কারটেল করা আর শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দিলাম ফোনে। এরপর আমি যখন হাসপাতালে পৌঁছলাম তখন লেবার প্রগ্রেস করে গেছে, কিন্তু রোগীর শ্বাসকষ্ট তখন চরমে। ডেলিভারীর পর শুরু হলো প্রচণ্ড ব্লিডিং, তার ওপর এমন ভয়ংকর শ্বাসকষ্ট দেখে একপর্যায়ে ঘাবড়ে গেলাম কিছুটা। সিস্টার-ডক্টর পুরো বাহিনীকে পাশে রেখে একটার পর একটা ম্যানেজমেন্ট দিয়ে যাচ্ছি আর প্রাণপণে আল্লাহ্‌কে ডাকছি। মাস্কের ভেতর দিয়েই রোগী একেকটা কাশি দেন আর আমার সহকারীরা কয়েক হাত দূরে সরে যান, আবার ভয়ে ভয়ে কাছে এগিয়ে আসেন’।

‘টেনশনে নিজের মাস্ক যে কখন নাক থেকে সরে গেছে লক্ষ্য করিনি, লাংস্ পরীক্ষা করতে যখন রোগীর কাছে গেছি, দেখি শ্বাসকষ্টে নীল হয়ে যাওয়া আমার রোগী ওই অবস্থাতেও আমাকে ইশারা করছে- আমি যেন নাকের উপরে আমার মাস্কটা তুলে দিই’।

ইমোশনাল, ননপ্র্যাকটিকাল ডাক্তারের চোখ ততক্ষণে ভিজে গেছে। উল্লেখ্য, আমার রোগীটা সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ। ডেলিভারীর পরপরই শ্বাসকষ্ট কমে যায় তার। হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার দুদিন পর খবর নিই, ভাল আছেন আল্লাহ্‌র রহমতে।

মানবিক ডাক্তার আরও লিখেছেন, ইদানিং রুটিন চেম্বার বন্ধ থাকায়, রোগীদের অসংখ্য ফোন কল এটেন্ড করতে হয়, মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠি। এরকম একটা ফোন ধরে একটু রূঢ় স্বরেই বললাম, ‘বলেন কী সমস্যা?’

রোগী বললেন,‘ম্যাডাম আপনি ভাল আছেন তো? আপনার খবর নিতে ফোন করেছি। আমার ছেলেটার এখন তিন বছর, আপনার হাতেই জন্ম। ওকে আপনার কথা বলি। আপনার জন্য সবসময় দোয়া করি। নিরাপদে থাকবেন ম্যাম’।

‘মনটা ভীষণ রকম ভিজে গেল ভালবাসায়। চট্টগ্রাম কলেজের বন্ধুরা চমৎকার দুইসেট করে পিপিই উপহার দিল ব্যাচের সকল ডাক্তারদের, একেবারে নিজেরা ফান্ড তৈরি করে, নিজেদের উদ্যোগে। দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতা আর ভালবাসা যেখানে হাত ধরে চলে, সেখানে কোন দুর্যোগই কী পারে মানুষকে টলাতে?’ প্রশ্ন রেখেছেন ডা. জাহানারা শিখা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২০
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।