কয়েকদিন ধরে বন্দর ব্যবহারকারীদের ঢোকার সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পাশাপাশি জ্বর পরিমাপ করা হচ্ছে। সাধারণ জ্বর থাকায় অন্তত ১৫ জনকে বন্দরের গেট দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরে ঢোকার সময় প্রতিটি গেটে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাধারণ জ্বর আছে কিনা তা-ও পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরশু ১৫ জনকে জ্বর থাকায় বন্দরের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। প্রয়োজনীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার চট্টগ্রাম বন্দর কলেজের ল্যাবে তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। যদিও চট্টগ্রামে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অন্যতম উপকরণ অ্যালকোহলের সংকট রয়েছে। আমরা ঢাকা থেকেও সংগ্রহ করছি। কিছু জায়গায় সাবান-পানি ব্যবহারের সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। মেরিটাইম বিশ্বের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ফলো করতে হয়। ইতিমধ্যে আমরা কনটেইনার ও পণ্যসামগ্রী ডেলিভারি দ্রুততর করার উদ্যোগ নিয়েছি।
বন্দরের উপ সংরক্ষক ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, জাহাজ থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ নেই। বিদেশ থেকে আসা জাহাজগুলোকে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গাইডলাইন ২৪ ঘণ্টা ফলো করতে হচ্ছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চীনের বন্দর ছুঁয়ে আসা জাহাজকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ করতে হবে সাগরে। কোনো জাহাজ যদি চীন ছাড়ার ১২ দিনের মধ্যে বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে তবে সেটিকে আরও ২ দিন অপেক্ষা করতে হবে। যদি ১১ দিনে জাহাজ বহির্নোঙরে পৌঁছে তবে আরও ৩ দিন অপেক্ষার পর মূল জেটিতে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রোববার থেকে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) পর্যন্ত ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন সম্পন্ন হওয়া তিনটি জাহাজ বন্দরের মূল জেটিতে আনা হয়েছে বন্দরের নিজস্ব পাইলটের তত্ত্বাবধানে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- বিদেশ থেকে বন্দরে আসা জাহাজের নাবিকদের শো’র পাস (নগরে প্রবেশের পাস) ইস্যু করা হচ্ছে না। একই সঙ্গে কোনো জাহাজের নাবিক বদলির সুযোগও বন্ধ রাখা হয়েছে। কোনো নাবিক যদি জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি যেতে চায় তবে তাকে আরও ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। এরপর ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রধান দুইটি টার্মিনাল এনসিটি ও সিসিটির অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) ক্যাপ্টেন তানভীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, করোনা-ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বন্দরে। জ্বর মেপে, হাত ধুইয়ে সবাইকে বন্দরের অভ্যন্তরে ঢোকানো হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজে যারা জাহাজে উঠছেন তাদের ওঠার সময় একবার পুরো শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে করে দেওয়া হচ্ছে, আবার নামার সময় আরেকবার স্প্রে করা হচ্ছে। কর্মীদের আমরা সাবান, পানি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও জীবাণুনাশক স্প্রের ব্যবস্থা করছি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন চট্টগ্রাম বন্দর ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত পোর্ট হেলথ অফিসার মোতাহার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্ক্রিনিং কার্যক্রম শুরু করেছি আমরা। এ পর্যন্ত ৭ হাজার ১৭২ জন নাবিকের জ্বর পরীক্ষা এবং করোনার লক্ষণ বা উপসর্গ ছিলো কিনা কেস হিস্ট্রি নিয়েছি। সোমবার (২৩ মার্চ) আগের ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করেছি ১৪৯ জনের।
তিনি জানান, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত দুই দিন কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আসেনি। তাই কোনো যাত্রীকে পরীক্ষাও করা হয়নি। এর আগে শাহ আমানত বিমানবন্দরে আমরা ৫২ হাজার ১১৩ জন বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর তাপমাত্রা পরীক্ষা করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২০
এআর/টিসি