বুধবার (১৮ মার্চ) সকালে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কমিটির সদস্যদের জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৯১ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে।
তিনি বলেন, যারা কোয়ারেন্টাইনে যাচ্ছে তারা দু’টি ভাগে বিভক্ত। একটি অংশ গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছে, আরেকটি শহরকেন্দ্রিক থাকছে। যারা গ্রামে চলে যাচ্ছে তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনও এবং ওসিরা খোঁজখবর রাখছে। বিভিন্ন মাধ্যমে কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষের তথ্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে পর্যন্ত বিষয়গুলো অবগত করা হয়েছে।
এ সময় শাহরিয়ার কবির বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরের যে ৪১টি ওয়ার্ড রয়েছে। আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করে দিয়েছি। ৪১টি ওয়ার্ডে আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে এবং মেম্বাররা আছে। আমাদের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ বিষয়গুলো তদারকি করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, যারা হোম কোয়ারেন্টাইন মানছে না তাদের ব্যাপারে মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যার আইসোলেশন এবং নগরের বাইরে বিআইটিআইডিতে আরও ৫০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া নগরে রেলওয়ে হাসপাতাল রয়েছে, যেটিকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশন দু’টি কাজেই ব্যবহার করা যাবে। তা ছাড়া প্রত্যেকটি হাসপাতালের সামনে জরুরি ভিত্তিতে বেসিন লাগানো হয়েছে এবং সেখানে সাবানসহ হাত পরিষ্কার করার সব সামগ্রী রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নগরবাসীকে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
তিনি বলেন, আমরা সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছি। বিশেষ করে যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার অনুরোধ করছি। আরো সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে কীভাবে থাকবে তা পত্রিকায় ও লিফলেট আকারে প্রচার করা হবে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর জন্য চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ সময় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সর্দি-কাশির কোনো রোগী আসলে তাদের পূর্বের কেস হিস্ট্রি দেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। যদি এমন কোনো কেস হিস্ট্রি পাওয়া যায় তাহলে তাদের সন্দেহাতীত ভাবে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। আর যাদের হোম কো্য়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে তারা সঠিক ভাবে তা পালন করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রামে ঢোকার সময় যে তালিকা করছি তা প্রশাসন হয়ে ইউএনও বরাবর চলে যাচ্ছে এবং আরেকটি তালিকা গোয়েন্দা সংস্থা হয়ে ওসির কাছে চলে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক বি. জেনারেল হুমায়ুন কবির বলেন, চমেকের আউটডোরে বিভিন্ন ধরনের নির্দশনামূলক ব্যানার দিয়েছি। হাঁচি-কাশি, জ্বর-গলাব্যথা সমস্যা নিয়ে যেসব রোগী আসবে তাদের নির্দিষ্ট কক্ষে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোগীদের স্বাভাবিক সমস্যা নাকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তা পরীক্ষা করার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন ডাক্তাররা। যদি করোনায় আক্রান্ত হয়, তাহলে বিষয়টি আইইডিসিআরকে জানানো হবে।
এ সময় চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৪৮৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য পরিচালক। এর মধ্যে চাঁদপুরে সর্বোচ্চ সংখ্যক এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফেনী। এরপর যথাক্রমে লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা বলেন, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আমরা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করি এবং লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে আমরা প্রতিটা ঘরে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছি। তাছাড়া নির্বাচনের কাউন্সিলররা ব্যস্ত থাকায় ও্ইসব ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় সিটি করপোরেশন থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইন বিষয়ে জনগণকে অবহিত করার জন্য আবারও বিজ্ঞাপন এবং লিফলেট ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিভিল সার্জন ডা. ফজলে রাব্বি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামশুদ্দোহা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. সেলিম আকতার চৌধুরী ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আলী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২০
এমএম/টিসি