ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

স্কুলশিক্ষকের পেনশন আটকে রাখার অভিযোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২০
স্কুলশিক্ষকের পেনশন আটকে রাখার অভিযোগ সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদের পেনশন আটকে রাখার অভিযোগ

চট্টগ্রাম: হাটহাজারী উপজেলার এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদের পেনশন আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সুপারিশ করেছেন ইউএনও।

অভিযোগে শিক্ষক নজির আহমদ উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট সরকারি বিধি অনুযায়ী চাকরির বয়স শেষ করে অবসরে যান তিনি। শিক্ষক কল্যাণ ফান্ডসহ পেনশনের টাকা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে ওই বছরের ১৮ আগস্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরাবরে আবেদন করেন তিনি।

কিন্তু প্রায় ৭ মাস পার হলেও পেনশনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করেনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

তবে প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার জানিয়েছেন, স্কুল কমিটির সভাপতির হস্তক্ষেপের কারণে তার পেনশন আটকে আছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদুল আলমের দাবি ওই শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটির নির্বাচন কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলাটি প্রত্যাহার করে নিলে তিনি পেনশন পাবেন। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষক নজির আহমেদের দাবি তিনি কোনো মামলা করেননি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যালয়টির অডিট কমিটির সদস্য ছিলেন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদ। এ কমিটিতে ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদুল আলম। বিদ্যালয়টির বিভিন্ন আয়-ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন থাকায় অডিট কমিটির সদস্য হিসেবে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদ কিছু রশিদের অনুমোদন দেননি। এছাড়া ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্র ফি বাবদ নিয়ম বহির্ভূতভাবে দুই দফা টাকা নেন প্রধান শিক্ষক।

প্রথম দফায় ৪৫০ টাকা ও পরে আবারো ৪৫০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদ প্রতিবাদ জানান। অডিট কমিটির সদস্য নজির আহমদ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রয় ও ব্যয় সংক্রান্ত রশিদে অসংগতি ও অনিয়ম থাকায় সই করেননি।

এসব কারণে প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদুল আলমের সঙ্গে নজির আহমদের দ্বন্দ্ব হয়। এ ক্ষোভ থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা সভাপতি খোরশেদ আলমের নির্দেশে প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার নজির আহমদের পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্র আটকে রাখেন।

নজির আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনার বিভিন্ন আয়-ব্যয়ে অসংগতি থাকায় আমি কিছু রশিদে স্ই করা থেকে বিরত থাকি। কারণ পরবর্তীতে এসব বিষয়ে সরকারিভাবে অডিট হলে আমি দোষী সাব্যস্ত হবো। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিজেদের মতো করে বিদ্যালয়ের নামে অর্থ খরচ করেছেন। অডিট কমিটির সদস্য হিসেবে আমার দায়িত্ব এসব খরচে কোনো অসংগতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা। তারা তাদের কোনো অন্যায়ের বৈধতা আমার কাছ থেকে আদায় করতে না পারায় ৭ মাস ধরে আমার পেনশনের কাগজপত্র আটকে রেখেছে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুই দফায় কেন্দ্র ফি নেওয়া নিয়েও আমি প্রতিবাদ করেছি। কারণ কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বাধ্য করে দুই দফায় টাকা নেওয়া আইন পরিপন্থী। এসব বিষয়ে আমি হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষক সমিতি বরাবরে অভিযোগ দিয়েছি।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, একজন শিক্ষক আমাকে পেনশনের কাগজপত্র অন্যায়ভাবে আটকে রাখার অভিযোগ দিয়েছেন। আমি অভিযোগটির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অগ্রায়ন করেছি।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার বলেন, ওই শিক্ষক স্কুল কমিটির নির্বাচন স্থগিত করতে আদালতে আপিল করেছেন। তাই সভাপতি মহোদয় পেনশন আটকে রেখেছেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদুল আলম বলেন, নজির আহমেদ সাহেব যদি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন তবে তিনি পেনশন পাবেন। তার করা মামলা কে পরিচালনা করবে। এ ছাড়া তিনি যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলো মিথ্যা।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২০
জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।