ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
‘বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন’ বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। তাঁর নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি।

উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। তাঁর সুদূরপ্রসারী এই প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই সাংগঠনিক কাঠামোর বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশ ও দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে।

কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।                                             <div class=

ছবি: সোহেল সরওয়ার" src="https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2020February/bg/bg220200223160023.jpg" style="margin:1px; width:100%" />রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নগরের হালিশহর আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল প্রাঙ্গণে ১, ২, ৩ ফিল্ড ও ৩৮ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারির জাতীয় পতাকা প্রদান অনু্ষ্ঠানে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সম্মান ও গৌরব- মূলমন্ত্রে দীক্ষিত রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময়। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত মুজিব ব্যাটারীর কামানের গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে ঘোষিত হয়েছিল রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির সগৌরব পথচলা। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিব ব্যাটারী (বর্তমানে ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট), রওশনআরা ব্যাটারী (বর্তমানে ২ ফিল্ড রেজিমেন্ট) এবং স্বতন্ত্র রকেট ব্যাটারী (বর্তমানে ৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি) K ফোর্সের অধীনে ফেনীর যুদ্ধ, সালদা নদীর যুদ্ধ, কসবার যুদ্ধ, নাজিরহাটের যুদ্ধ, মান্দাবাগ বাজার যুদ্ধ; এস (S) ফোর্সের অধীনে আখাউড়া-সিংগাইর বিলের যুদ্ধ এবং জেড (Z) ফোর্সের অধীনে বড়লেখার যুদ্ধ, আটগ্রাম ও জকিগঞ্জের যুদ্ধ, সমশের নগরের যুদ্ধ এবং কুমিল্লা এলাকায় মুক্তিবাহিনীকে ফায়ার সাপোর্ট প্রদান করে। দেশমাতৃকার অখণ্ডতা রক্ষার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এই রেজিমেন্টের সদস্যরা দেশের অভ্যন্তরে যে কোনো দুর্যোগে জনগণের সেবায় তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং সাধারণ মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন।

কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।  ছবি: সোহেল সরওয়ারসৈনিকদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আবহমানকাল থেকেই যুদ্ধের ময়দানে জাতীয় মর্যাদার প্রতীক ‘পতাকা’ বহন করার রীতি প্রচলিত আছে। পতাকা হলো জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। তাই পতাকার মান রক্ষা করা সকল সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব। জাতীয় পতাকা বহনের দুর্লভ সুযোগ সকলের জীবনে আসে না। জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোনো ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। আজ সেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা আপনাদের হাতে তুলে দেওয়া হলো। এই বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় আমি ১, ২, ৩ ফিল্ড ও ৩৮ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারিকে জানাই অভিনন্দন। কর্মদক্ষতা, কঠোর অনুশীলন ও কর্তব্যনিষ্ঠার স্বীকৃতি  হিসেবে যে পতাকা আজ আপনারা পেলেন, তার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আপনারা সবসময় প্রস্তুত থাকবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ইউনিটের সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত থেকে জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে পিছপা হবে না।

কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।  ছবি: সোহেল সরওয়ারঅনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সেনাবাহিনী তার মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি সবসময়ই জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ ভোটার ডাটাবেজ তৈরি, সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করে সেনাবাহিনী জনগণের সুনাম কুড়িয়েছে। পেশাগত দক্ষতার কারণে দীর্ঘ প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ তদারকি সহ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ, মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং থানচি-আলীকদম সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও এভাবে জনকল্যাণমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনীকে অবদান রাখতে হবে।

কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।  ছবি: সোহেল সরওয়ার‘জাতির পিতা আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর রূপকার’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী যে কোনো দেশের জন্য অপরিহার্য। বর্তমান সরকার জাতির পিতা কর্তৃক প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে আর্টিলারি রেজিমেন্টের উন্নতি সাধনে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩টি আর্টিলারি ব্রিগেড এবং ১টি এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড সৃজন করা হয়েছে। ইউনিটসমূহের যুদ্ধক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ফিল্ড গান, অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স গান, ক্ষেপণাস্ত্র, কম্বাট সিমুলেটর, বিভিন্ন ধরনের রাডার, অত্যাধুনিক লোকেটিং সরঞ্জামাদি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও চীন এবং ইউরোপীয় দেশসমূহ হতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন গান, রাডার এবং যানবাহন রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির ইউনিটসমূহে সংযোজনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দুর্বার ও অব্যাহত উন্নয়নের ধারায় এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারির প্রশিক্ষণ ফায়ার পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের টার্গেট ড্রোন স্থানীয়ভাবে উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও সুসংহত করতে সংযোজিত হয়েছে এমএলআরএস এবং মিসাইল রেজিমেন্ট। আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, আর্টিলারি গান এবং মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট ইত্যাদি সংযোজন করে সেনাবাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।

হালিশহর আর্টিলারি সেন্টারে কুচকাওয়াজ।  ছবি: সোহেল সরওয়াররাষ্ট্রপতি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের সকল সদস্যকে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় কারিগরি এবং পেশাগত জ্ঞান অর্জনের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। মাতৃভূমির অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় যে কোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিটি সদস্য বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে আশা করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।