ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রেলের ১৮৪ জন সিপাহী নিয়োগে দুর্নীতি, জিজ্ঞাসাবাদে দুদক

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০
রেলের ১৮৪ জন সিপাহী নিয়োগে দুর্নীতি, জিজ্ঞাসাবাদে দুদক প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা রেলওয়ের ১৮৪জন সিপাহীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ইতোমধ্যে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রামে তিনদিনে ৪৫জন সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে কেউ নিয়োগে দুর্নীতির বিষয় স্বীকার করেননি।

রেলওয়ের নিরাপত্তাবাহিনীতে শূন্য পদের বিপরীতে ২০১৭ সালে ১৮৪জন সিপাহি নিয়োগের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে এ নিয়োগ প্রথমে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে হওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতির সুবিধার্থে পূর্বাঞ্চলে নিয়ে আসা হয় বলে অভিযোগ আছে।

নিয়োগ কমিটিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধান ইকবাল হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলামকে সদস্য সচিব ও কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম, এসপিও সিরাজুল্লাহ, কমান্ড্যান্ট ফুয়াদ হাসান পরাগকে সদস্য করা হয়।

২০১৮ সালের শুরুতে এ নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। ফলাফল ঘোষণা করা হয় একই বছরের ২৯ আগস্ট। ফল প্রকাশের পর অসংখ্য প্রার্থী অভিযোগ তুলেন, টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

২০১৮ সালে ১৮৪ জন সিপাহি নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগে ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুধু দুদক নয়, তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রেল মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তদন্ত শুরু করে।

২০১৯ সালের এপ্রিলে দুদক ইকবাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। পাশাপাশি ৭৫টি প্রতিষ্ঠানে ইকবাল হোসেনের বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠিও দেন তারা। এ ছাড়া দুদক ইকবাল হোসেনকে চিঠি দিলেও তিনি চিঠির কোনো উত্তর দেননি।

সূত্র জানায়, নিয়োগ পাওয়া ১৮৪জন সিপাহির মধ্যে সিরিয়ালে ১৪ নম্বর কুমিল্লার গোলাম মোস্তফার ছেলে শাহাদাত হোসেনের চাকরি হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। অথচ তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেই, এমনকি তার বাবাও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। কিন্তু মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পান। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর তার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।

এ ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষায় ঢাকা বিভাগের ৫ জন চাকরি প্রার্থীকে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ৫জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি কোটা বহির্ভূত চট্টগ্রামের ১১জন প্রার্থীকে নেওয়া হয়। অর্থাৎ কোটায় লোক পাওয়া যায়নি বলে এ ১১ জনকে নেওয়া হয়েছে। অথচ কোটায় লোক ছিল। এভাবেই সিপাহি নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি তথ্য উঠে আসে ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগ আসার পর ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুদক। তদন্ত করতে গিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার তথ্য পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ পায় দুদক।

দুদকের তদন্তে উঠে আসে অবৈধভাবে উপার্জিত প্রায় ১৫ কোটি টাকা আমেরিকায় পাচার করেছেন ইকবাল হোসেন। এসব টাকা তার ব্যক্তিগত কোনো হিসাবে লেনদেন করেননি। ব্যবহার করেছেন আমেরিকা প্রবাসী বোন ও বোনের জামাইয়ের হিসাব নম্বর।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, নিয়োগ পাওয়া ১৮৪জন সিপাহিকে কোনোভাবেই দুর্নীতির বিষয়ে মুখ না খুলতে নির্দেশনা দিয়েছেন ইকবাল হোসেন। তাই দুদক ৪৫জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও নিজেদের চাকরির নিরাপত্তার জন্য কেউ মুখ খুলেননি।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ১৮৪ জন সিপাহি নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতি পাওয়া যায়। এখন আমরা ১৮৪জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। ইতোমধ্যে ৪৫জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তারা কেউ দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলেননি। বাকিদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।