ঢাকা, বুধবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বসন্তেও ফোটে না তাদের ফুল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
বসন্তেও ফোটে না তাদের ফুল নাজমা আক্তার ও তার কন্যা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ‘বসন্ত নয় আমার দরজায় প্রথম কড়া নেড়েছিলো অবহেলা। ভেবেছিলাম অনেকগুলো বর্ষা শেষে শরতের উষ্ণতা মিশে এলো বুঝি বসন্ত! দরজা খুলে দেখি আমাকে ভালোবেসে এসেছে অবহেলা।’ কবি দর্পন কবিরের জনপ্রিয় এ কবিতার সঙ্গে মিলে যায় সমাজের একশ্রেণির মানুষের বাস্তব জীবনচিত্র।

বসন্তের আগমনে সবাই যখন হলুদ পাঞ্জাবি, লাল শাড়ি আর বাহারি ফুলের রঙে নিজেকে সাজিয়েছে, তখন কিছু মানুষ ঘুরছে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টায়।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই চট্টগ্রামের সিআরবি শিরীষতলায় বসন্ত উৎসবে ভিড় জমাতে থাকে শত-শত মানুষ।

উৎসবের পাশেই বেলুন হাতে দাঁড়িয়ে ছিল নাজমা আক্তার। এ দিনে ফুল বিক্রির ইচ্ছে থাকলেও টাকার অভাবে সেটা সম্ভব হয়নি।
তাই ফুল দোকানের রমরমা ব্যবসা আর ক্রেতাদের ভিড়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন নাজমা আক্তার। সঙ্গে থাকা ছোট্ট মেয়ে ফাহিমাকেও মাথায় ফুলের রিং পরিয়ে দেওয়ার সামর্থ নেই। তাই হাতে দিয়েছেন একটি বেলুন। আর সেই বেলুন নিয়েই আনন্দে হাসছিল ছোট্ট ফাহিমা।

নাজমা আক্তার নগরের সিআরবি কলোনির বস্তিতে থাকেন। ছয়মাস আগে ভেঙ্গে দেওয়া হয় এ বস্তি। ফলে এখন মাথা গোঁজারও জায়গা নেই এ পরিবারের। তিন মেয়েকে নিয়ে কোনোমতে বস্তির পাশেই জীবনযাপন করছেন তিনি। স্বামী ইসমাইল আগে ভ্যানে করে পাটি-বেতের তৈরি সরঞ্জাম বিক্রি করতেন। সেই টাকা দিয়েই চলতো সংসার। কিন্তু বস্তি ভেঙ্গে দেওয়ার পর ভেঙ্গে যায় তাদের সংসারও। ঝগড়া বিবাদের পর স্ত্রী সন্তানকে রেখে চলে যান ইসমাইল। তাই সংসারের গ্লানি একাই টানছেন নাজমা আক্তার।

নাজমা আক্তারের কন্যা। দুই মেয়ে ফারজানা ও ফাতেমা নগরফুলের সহযোগিতায় ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও সংসারের টানাপোড়েনে পড়ালেখা ছেড়ে চলে গেছে দেওয়ানহাটের কোনো এক গার্মেন্টে। সকাল ৭টায় বের হয়ে ফিরে রাত ৮টার দিকে। এভাবে পুরোমাস কাজ করলে পায় ৪ হাজার টাকা। ১৩-১৪ বছর বয়সের ফারজানা ও ফাতেমা এখন সংসারের হাল ধরতে সারাদিন খাটে। বস্তিতে থাকলেও মাস শেষে মহাজনকে দিতে হয় ২ হাজার টাকা। অবশ্য বস্তি ভেঙ্গে দেওয়ার পরে টাকার অংক এখন ৮শ’তে নেমে এসেছে। নাজমা আক্তার বলেন, না খেতে পারলেও মালিকের টাকা শোধ দিতে প্রতিদিন কিছু টাকা জমাই। আর তা দিয়েই মালিকের কাছে আছি।

ছোট মেয়ে ফাহিমার বয়স ৪ বছর। গত বছরের মে মাসে ফাহিমা ব্রেন স্ট্রোক করে। তার চিকিৎসার পেছনে খরচ হয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মেয়েকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নাজমা আক্তার যেতেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। প্রতিদিন হাসপাতালে জমা দিতে হতো ১০ হাজার টাকা। ভালোভাবে সুস্থ হওয়ার আগেই মেয়েকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসেন তিনি। একমাসের ঔষধ খাওয়ানোর কথা থাকলেও টাকার অভাবে সেটা পারেননি।

নাজমা বাংলানিউজকে বলেন, মেয়েকে বাঁচাতে মানুষের পাশাপাশি অনেক সংগঠনের পেছনে ঘুরেছি। অনেকে সহযোগিতা করেছে। তবে হাসপাতাল কতৃপক্ষের কোনো দয়া দেখিনি।

নাজমা আক্তার বলেন, বিপদে পড়ে পথে নেমেছি। আমরা কখনোই ভালো ছিলাম না। মেয়েদেরকে নিয়ে প্রতিদিন নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করছি। ১ হাজার টাকা ধার নিয়ে কিছু বেলুন কিনেছিলাম। সেটা বিক্রি করেই কোনোমতে চলি। ফাহিমা ছোট্ট হওয়ায় অনেক সময় মানুষ ওকে বখশিশ দেয়। এর বাইরে কিছু করার মতো সামর্থ্য নেই আমার। বিপদে পড়লে মানুষ পথে নামে। গার্মেন্ট থেকে টাকা পেলে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাবো। নিজেও একটা ঘর নিয়ে থাকবো।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
এমএ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।