ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জাতিকে বিদেশিদের কাছে খাটো না করতে বিএনপিকে অনুরোধ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০
জাতিকে বিদেশিদের কাছে খাটো না করতে বিএনপিকে অনুরোধ বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে নালিশ করে দেশ ও জাতিকে খাটো না করার জন্য বিএনপিকে অনুরোধ জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্বরে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এ অনুরোধ জানান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) আয়োজিত সম্মিলিত এ বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বইমেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

বইমেলা মঞ্চে দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন তথ্যমন্ত্রী ও মেয়রড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যেতে পারতো গত ১১ বছরে যদি নেতিবাচক রাজনীতি না থাকতো। গতকাল দেখতে পেলাম বিএনপির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্রদূত-কূটনীতিকদের সঙ্গে বসে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে তাদের কাছে নালিশ উপস্থাপন করেছে।

ভোট দিলো বাংলাদেশের মানুষ। ভোট হলো ঢাকা শহরে। যদি কোনো নালিশ থাকে তাহলে ঢাকা শহরের ভোটারদের কাছে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে নালিশ দিতে হবে। কথায় কথায় বিদেশিদের কাছে এই যে ধন্না দেওয়া এতে দেশ এবং জাতিকে অপমান করা হয়। তারা ক্রমাগতভাবে যেকোনো বিষয়ে বিদেশিদের কাছে যে ছুটে যায় এটি এটি দেশ, জাতি এবং ঢাকা শহরের ভোটারদের অপমান করার শামিল। অন্য কোনো কিছু নয়। যদি বিএনপির কোনো নালিশ থাকে তবে সেই নালিশ দেবে নির্বাচন কমিশনে। সেই নালিশ দেওয়ার জন্য তারা আদালতে যেতে পারে, জনগণের কাছে, ভোটারদের কাছে যেতে পারে।

সেটি না করে তারা বিদেশি দূতাবাসের কূটনীতিকদের ডেকে নালিশ উপস্থাপন করা এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি দূতাবাস বা রাষ্ট্রগুলো যাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে সেটির পথ তৈরি করে দেওয়া। এটি কখনো আমাদের জন্য সম্মানজনক নয়, এটি আমাদের জন্য অসম্মানজনক। যে কাজটি ক্রমাগতভাবে বিএনপি করছে। বিএনপিকে আমি অনুরোধ জানাবো, আপনাদের যদি কোনো নালিশ থাকে সেটি জনগণের কাছে উপস্থাপন করুন, নালিশ থাকলে নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করুন। প্রয়োজনে আদালতে যান। দয়া করে বারংবার বিদেশিদের কাছে আমাদের ঘরের বিষয় নিয়ে নানা ধরনের নালিশ উপস্থাপন করে দেশ ও জাতিকে বিদেশিদের কাছে খাটো করবেন না।        

বক্তব্য দেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনতথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। ৭০ লাখের বেশি মানুষ। বইমেলার অভাব ছিলো। বিক্ষিপ্ত বইমেলা হতো। চসিক সম্মিলিত বইমেলা আয়োজন করেছে। যান্ত্রিকতার যুগ চলছে। মঙ্গলে মনুষ্যবিহীন যান পাঠাচ্ছে। সামনে রোবট পাঠাবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের পাশাপাশি মানুষ যন্ত্রে রূপান্তরিত হচ্ছে। আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষ যাতে মানুষ থাকে, মানবিক গুণাবলি অক্ষুণ্ন সে জন্য বইয়ের বিকল্প নেই।

অনেক অভিভাবক বই না দিয়ে সন্তানকে স্মার্ট ফোন তুলে দেন। স্মার্ট ফ্যামিলি দেখানোর জন্য ১২ বছরের সন্তানের হাতেও স্মার্ট ফোন তুলে দিচ্ছে। আজকের পৃথিবীর বাস্তবতায় মানবিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই।

৪ হাজার বছর আগে মানুষের সঙ্গে প্রাণীর লড়াই হতো। জিতলে বীর আখ্যা পেতো। আজ মানুষ বুদ্ধিমত্তায় অন্য প্রাণী থেকে এগিয়েছে। কারণ মানুষ যা আবিষ্কার করে তা লিপিবদ্ধ করতে জানে, ডকুমেন্টেড করতে জানে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম উৎকর্ষের মাধ্যমে আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ এমন রাষ্ট্র গড়তে চাই যা অন্যরা অনুকরণ করবে।

মন্ত্রী স্কুলশিক্ষার্থীদের বইমেলায় নিয়ে আসার ও পুরস্কৃত করার আহ্বান জানান।

উদ্বোধনী দিনেই জমে ওঠে বইমেলা।  ছবি: সোহেল সরওয়ারমেয়র বলেন, ১৯ দিনব্যাপী এ বইমেলা থেকে পছন্দের বই সংগ্রহ করতে পারবেন চট্টগ্রামবাসী।

স্বাগত বক্তব্যে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা বলেন, গত বছরের চেয়ে কলেবর বেড়েছে এবারের বইমেলার। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জিমনেসিয়ামে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে ৬০টি স্টল বৃদ্ধি করা গেছে। বই হচ্ছে ভালো বন্ধু- তাই মা, বাবা, শিশু-কিশোর সবাইকে বইমেলায় আসতে হবে।

বইমেলার যুগ্ম আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি শাহ আলম নিপু বলেন, আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। কারণ মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর নামে এ বইমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে। এ মেলা গত বছর থেকে সম্মিলিত উদ্যোগে হচ্ছে মেয়রের নেতৃত্বে। আর্থিক ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। গত বছর ঢাকা থেকে ৫৫টি প্রকাশক এনেছিলাম। এক সপ্তাহে সব বই বিক্রি হয়ে যায়। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলায় পরিণত হয়। এবার ১৩০টি প্রকাশক এসেছেন ঢাকা থেকে। আমরা বিশ্বাস করি, এবারের মেলা আরও সমৃদ্ধ হবে।

কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক বলেন, এ মেলা চট্টগ্রামবাসীর বইয়ের ক্ষুধা মেটাবে। মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র তৈরিতে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ধন্যবাদ বক্তব্য দেন চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, চসিকের সচিব আবু শাহেদ, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, আবিদা আজাদ প্রমুখ। মন্ত্রীকে ফুল ও সম্মাননা স্মারক দিয়ে বরণ করেন মেয়র।

>> বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত চট্টগ্রামের একুশে বইমেলা শুরু
>> চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত একুশে বইমেলা শুরু সোমবার

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।