ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ছাত্রদল নেতার ভাই ছাত্রলীগের সম্পাদক!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০
ছাত্রদল নেতার ভাই ছাত্রলীগের সম্পাদক! লোগো

চট্টগ্রাম: কোনো কাউন্সিল ছাড়াই দীর্ঘদিন পর গঠিত হয়েছে চান্দগাঁও ও ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের কমিটি। মেয়াদোত্তীর্ণ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর আগামি দুই বছরের জন্য বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এ দুই কমিটির অনুমোদন দেন।

চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে নুরুন নবী শাহেদকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মো. শহীদুল আলমকে। কমিটিতে আটজনকে সহ-সভাপতি, পাঁচজনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দুইজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।

ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে ফরহাদ সায়েমকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে রাকিব হায়দারকে। কমিটিতে ১৩ জনকে সহ-সভাপতি, সাতজনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নয়জনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।

এছাড়া চান্দগাঁও থানা থেকে এম হাসান আলী, কপিল কর ও ইমরান হোসেন জনি এবং ডবলমুরিং থানা থেকে জহুরুল কাইয়ুম ফয়সাল ও শুভ ঘোষকে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে সহ-সম্পাদক পদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মেয়াদোত্তীর্ণ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া এসব কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

---

অভিযোগ উঠেছে, চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে যাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তার বড় ভাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল আলমের বড় ভাই তৌহিদুল আলম চান্দগাঁও ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।

২০১১ সালে মোহাম্মদ নওশাদকে সভাপতি ও তৌহিদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে চান্দগাঁও ওয়ার্ড ছাত্রদলের কমিটি করা হয়। এছাড়া তৌহিদুল আলম হাজেরা-তজু কলেজ ছাত্রদলের দায়িত্বে ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন নগর বিএনপির কয়েকজন নেতা।

জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল আলম বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, তার ভাই তৌহিদুল আলম কখনও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে রাকিব হায়দারকে। তিনি গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা বিবি মরিয়মের পক্ষে অস্ত্র নিয়ে কেন্দ্র পাহারা দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন।

রাকিব হায়দার মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের অনুসারী। কাউন্সিলর প্রার্থী বিবি মরিয়ম জাকারিয়া দস্তগীরের বড় বোন।

অভিযোগের বিষয়ে রাকিব হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি অস্ত্রধারী নই। নির্বাচনের যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে সেটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি গোসাইলডাঙ্গায় উপ-নির্বাচনের সময় ওই এলাকায় যাইনি’।

মহানগর ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতাদের বাদ দিয়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিজেদের অনুগতদের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে।

মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফারুক ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিজেদের অনুগতদের দিয়ে এসব থানা কমিটি দিয়েছেন। তারা মহানগর ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কোনো আলাপ করেননি।

মহানগর ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নাছির উদ্দিন কুতুবী বাংলানিউজকে বলেন, মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবুও সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। আমরা মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছি।

নাছির উদ্দিন কুতুবী বলেন, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিজেদের ইচ্ছেমতো সংগঠন চালাচ্ছেন। এভাবে তো সংগঠন চলতে পারে না। ছাত্রলীগ তো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। তারা নিজেদের মতো করে কমিটি অনুমোদন দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা না মেনে।

চান্দগাঁও থানা থেকে এম হাসান আলী, কপিল কর ও ইমরান হোসেন জনি এবং ডবলমুরিং থানা থেকে জহুরুল কাইয়ুম ফয়সাল ও শুভ ঘোষকে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে সহ-সম্পাদক পদে অন্তর্ভুক্তি গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বলে জানান মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা।

এদিকে চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান আরমান। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের মোবাইল নাম্বারে ফোন করা হলে তাদের ব্যবহৃত দুইটি নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। চালু থাকা অন্য নাম্বারে ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।

২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৪ সালের ১১ জুলাই ২৯১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি কমিটি থেকে পদত্যাগ করলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন জাকারিয়া দস্তগীর।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগকে তাদের অধীনস্ত ইউনিটের কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছিল। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সম্মেলন বা স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি করার জন্য। তারা যদি নিজেদের মতো করে কমিটি করে বিতর্কিত কাউকে পদে বসান, তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২০
এসকে/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।