ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, চিৎকারের কারণে খুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২০
মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, চিৎকারের কারণে খুন অপহরণকারী দলের সদস্য

চট্টগ্রাম: আড়াই বছর আগে মোবাইল ফোনে অপরিচিত নাম্বারে সুমি আক্তার প্রকাশ শারমিন নামে এক বিবাহিত নারীর সঙ্গে যোগাযোগ হয় প্রবাসী মো. রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ সজীবের। বিদেশ থেকে এসে সেই নারীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বুঝতে পারেননি সেই নারী অপহরণকারী দলের সদস্য।

সেই নারীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আটকে যান মো. রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ সজীব। সেই নারীসহ অপহরণকারী দলের সদস্যরা রায়হানুল ইসলাম চৌধুরীকে আটকে রেখে আদায় করতে চেয়েছিলেন ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ।

তাদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু সুযোগ পেয়ে বাঁচার আকুতি জানিয়ে চিৎকার করতে থাকেন রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী।

আর এটাই কাল হয় তার জন্য। অপহরণকারীদের হাতে প্রাণ যায় তার। চিৎকার করার কারণে গলায় মাফলার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। রায়হানের মানিব্যাগে থাকা ৯ হাজার ৮০০ টাকা, হাতঘড়ি ও দুটি মোবাইল নিয়ে যায় অপহরণকারী দলের সদস্যরা।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) আদালতে ‍দুই আসামির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া দুই আসামি হলো- মো. বাদশা মিয়া (৩১) ও সুমি আক্তার প্রকাশ শারমিন (২৭)।

গ্রেফতার বাদশা মিয়া মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে ও সুমি আক্তার প্রকাশ শারমিন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে জবানবন্দি দেন বলে বাংলানিউজকে জানান কর্ণফুলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুল ইসলাম।

হত্যার শিকার মো. রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ সজীব পটিয়া উপজেলার আতাউর রহমান চৌধুরীর ছেলে। ১৮ জানুয়ারি কর্ণফুলী থানার বৈদ্দ্যার বাড়ি এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) মো. আরেফিন জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ সজীব হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জোবায়ের সৈয়দ বাংলানিউজকে বলেন, রায়হান সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকতেন। আড়াই বছর আগে মোবাইল ফোনে অপরিচিত নাম্বারে সুমি আক্তার প্রকাশ শারমিন নামে এক বিবাহিত নারীর সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। সেই নারীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর রায়হান বাংলাদেশে আসেন। ১৯ ডিসেম্বর আফরিন নামে এ নারীর সঙ্গে তার আকদ হয়। আগামি ২৫ জানুয়ারি তার বিবাহের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ১৭ জানুয়ারি বিকেলে রায়হান বাকলিয়ায় ফুপুর বাসায় অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে যান। সেখান থেকে ফুপাত ভাইকে নিয়ে যান বহদ্দারহাট এলাকায় চিকিৎসকের চেম্বারে। সেখান থেকে গরীবউল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় চাচার বাসায় দাওয়াত দিতে যাবার কথা বলে বের হন। পরে তার মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। ১৮ জানুয়ারি সকালে সিডিএর টেক এলাকায় কবরস্থানের পাশ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

রায়হানের বাবা আতাউর রহমান চৌধুরী কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করেন। সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাতে কর্ণফুলী থানার মইজ্যারটেক এলাকা থেকে বাদশা ও সুমিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বাদশার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার কাছ থেকে রায়হানের একটি ঘড়ি উদ্ধার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২০
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।