ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কোর্ট হাজতে থাকা আসামি তুললেন সেলফি!

সরওয়ার কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
কোর্ট হাজতে থাকা আসামি তুললেন সেলফি! কোর্ট হাজতে থাকা আসামি শেখ ফরিদের সেলফি

চট্টগ্রাম: পুলিশের হাতে অস্ত্র ও মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন এক আসামি। আদালতে পুলিশ হেফাজতে এসেছেন হাজিরা দিতে। হাজিরা দিতে আসা ওই আসামি কোর্ট হাজতে বসে ব্যবহার করেন মোবাইল ফোন। তুলেন সেলফি। সেটি ফেসবুকে আপলোড করেন। দেন স্ট্যাটাসও।

এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোর্ট হাজতে। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এ ঘটনা ঘটে।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এ চিত্র।

পুলিশ হেফাজতে হাজতে থাকা আসামির মোবাইল ফোন ব্যবহারের কোনো নিয়ম না থাকলেও এক শ্রেণির অসাধু পুলিশ সদস্যের সহায়তায় দাগী আসামি ও সন্ত্রাসীরা নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে আসলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বলে জানা গেছে।

বাংলানিউজের হাতে আসা তথ্য-প্রমাণে দেখা যায়, সোমবার (৯ ডিসেম্বর) কোতোয়ালী থানার মামলায় (নম্বর- ৫৫(১১)১৯) চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুলিশ হেফাজতে আদালতে হাজিরা দিতে আসেন আসামি শেখ ফরিদ ও শিমুল বিশ্বাস। এদের মধ্যে শেখ ফরিদ আদালতে পৌঁছার পর এক শ্রেণির অসাধু পুলিশ সদস্যের সহায়তায় তার অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।

আদালতে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় সকাল ১১টা ২৮ মিনিটে আসামি শেখ ফরিদ তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন- ‘আশেপাশে সব মোস্তাক, চোখ কান খোলা রাখ। ’ এই স্ট্যাটাসে তিনি সাইফুল আলম লিমন, মান্না খন্দকার, শরীফ আহমেদ ও সুজয়মান বড়ুয়া জিতু নামে চারজনকে ট্যাগ দেন। এই স্ট্যাটাসে তার বন্ধুরা অনেকেই মন্তব্য করেন। সেসব মন্তব্যের উত্তরও দেন আসামি শেখ ফরিদ।

দুপুর ২টা ১ মিনিটে এক ব্যক্তির সঙ্গে সেলফি তুলে তা তার ফেসবুকে আপলোড করেন আসামি শেখ ফরিদ। সঙ্গে একটি ক্যাপশনও দেন তিনি। ক্যাপশনে লিখেন-‘পিঞ্জিরায় (হাজত) সুমন ভাই এর সাথে সেলফি। ’ এই স্ট্যাটাসে তিনি ইকবাল হোসেন টিপু, সাইফুল আলম লিমন, মান্না খন্দকার, শরীফ আহমেদ, সুজয়মান বড়ুয়া জিতু, আবু তোরাব পরশ, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য ও আমিনুল আহসান সুমন নামে আটজনকে ট্যাগ দেন ।

এই ছবিতে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল পর্যন্ত ৪৯৩টি লাইক ও ২৫টি মন্তব্য করেছেন তার বন্ধুরা। ৯ ডিসেম্বর আদালতের হাজতখানা থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ফেরত যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছবিতে বন্ধুদের করা মন্তব্যের উত্তর দেন শেখ ফরিদ। ছবিটি শেখ ফরিদ নিজেই তুলেছিলেন। এসময় তার হাতে কোনো হাতকড়া ছিল না।

বিকেল ৪টা ৩৩ মিনিটে ফেসবুকে আরও একটি স্ট্যাটাস দেন শেখ ফরিদ। সেই স্ট্যাটাসে তিনি কাউকে উদ্দেশ্য করে ‘হুমকি’ দেন। শেখ ফরিদ স্ট্যাটাসে লিখেন- ‘খেলতে ইচ্ছে করলে সামনা-সামনি খেল। মীর জাফরের মতো পেছন থেকে নয়। পিঠের চামড়া আর পিঠে রাখবো না, দালালেরা। ’ (স্ট্যাটাসের ভুল বানান সঠিক করে লেখা হয়েছে প্রতিবেদনে। এই স্ট্যাটাসে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল পর্যন্ত ২৩৩টি লাইক ও ১৯টি মন্তব্য করেছেন তার বন্ধুরা।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে শেখ ফরিদের ফেসবুক আইডিতে ঢুকে দেখা যায়, ৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৩৩ মিনিটে দেওয়া স্ট্যাটাসের পর আর কোনো স্ট্যাটাস তিনি দেননি।

আসামি শেখ ফরিদ ৯ ডিসেম্বর কোতোয়ালী থানার মামলায় (নম্বর- ৫৫(১১)১৯) চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুলিশ হেফাজতে আদালতে হাজিরা দিতে আসেন বলে আদালত সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে। ওই মামলা নথি পর্যালোচনা করেও তার আদালতে আসার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদকের কাছে শুনে বিষ্ময় প্রকাশ করেন আদালতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) প্রসিকিউশন শাখার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামান।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এরকম তো হওয়ার কথা না। বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ৯ জুলাই আদালতের মেট্রো হাজতখানার নানা অনিয়ম নিয়ে বাংলানিউজে ভিডিওসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। তখন হাজতখানায় দায়িত্বপালন করা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। অনিয়ম তদন্তে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ পৃথক তদন্ত কমিটিও করে।

আরও খবর>>
** চট্টগ্রাম মেট্রো আদালতের হাজতখানায় যা হয়

আসামি শেখ ফরিদ বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন বলে নিশ্চিত করেছে আদালতের প্রসিকিউশন শাখা।

গত ১৬ নভেম্বর ভোরে নগরের কোতোয়ালী থানার রাণীরদিঘীর উত্তরপাড়ের ইসহাক ভিলা থেকে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম, গাঁজা ও ইয়াবাসহ পাঁচ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে শেখ ফরিদও ছিলেন। শেখ ফরিদকে পলোগ্রাউন্ড, সিআরবি এলাকায় চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল পুলিশ। শেখ ফরিদ সিআরবি জোড়া খুনের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। শেখ ফরিদ পলোগ্রাউন্ড, সিআরবি এলাকায় কিশোরগ্যাং লিডার বলে জানায় পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।