ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর রাউজানের লস্কর দিঘি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর রাউজানের লস্কর দিঘি রাউজানের লস্কর দিঘিতে পরিযায়ী পাখি।

চট্টগ্রাম: ব্রিটিশ শাসনামলে রাউজানের পাহাড়তলীর কদলপুর ঊনসত্তরপাড়া এলাকায় খনন করা হয় লস্কর উজিরের বর্গাকার দিঘি, যা স্থানীয়ভাবে লস্কর দিঘি নামে পরিচিত।

এই দিঘি এখন শুধু ঊনসত্তরপাড়া নয় আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের কাছে প্রাণ জুড়ানো বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। শীতকালের এই সময়টাতে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিরা যোগায় আনন্দের খোরাক।

রাউজানের লস্কর দিঘিতে পরিযায়ী পাখি। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের পর এখানে আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখিরা।

প্রতিদিন ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কলকাকলীতে মুখর হয়ে ওঠে লস্কর দিঘির আশপাশের এলাকা।

রাউজানের লস্কর দিঘিতে পরিযায়ী পাখি। দিঘির পাশে গাছের ডালে বসে পাখিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকে পানির দিকে। কখন একটা মাছ পানির ওপর ভেসে উঠবে কিংবা কখন গাছ থেকে একটা পোকামাকড় পানিতে এসে পড়বে-সেই আশায়। খাবার মিললেই ছোঁ মেরে নিয়ে দে ছুট।

রাউজানের লস্কর দিঘিতে পরিযায়ী পাখি। নানান রঙের পরিযায়ী পাখিরা দল বেঁধে দিঘির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ায় সারাক্ষণ। পানিতে পেখমের ঝাপটায় অবতারণা হয় অপরূপ দৃশ্যের। এই দৃশ্য দেখতে স্থানীয়রা প্রতিদিন দিঘি এলাকায় বসে সময় পার করেন। দুপুরের পর পাখিরা একসঙ্গে দল বেঁধে স্নান পর্ব সেরে নেয়। একঝাঁক পাখি দিঘির পানিতে নেমে গা ভিজিয়ে নেয়, তারপর দেয় উড়ান। মুহূর্তেই পানিতে নেমে আসে আরেক ঝাঁক পাখির দল।

রাউজানের লস্কর দিঘিতে পরিযায়ী পাখি। দিঘির তত্ত্বাবধায়ক মো. লোকমান বাংলানিউজকে বলেন, এই দিঘিতে মাছ চাষ করা হয়। চার-পাঁচ বছর আগে কিছু পাখি এখানে প্রথম আসে। সেই থেকে প্রশাসনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে পাখিদের ওপর। কেউ যেন পরিযায়ী পাখিদের বিরক্ত বা শিকার করতে না পারে- সে ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে।

রাউজানের লস্কর দিঘিতে পরিযায়ী পাখি। তবে এরপরও কিছু মানুষ মাঝেমধ্যে পাখিদের ওড়াওড়ি দেখতে ঢিল ছুঁড়ে মারে। তখন পাখিগুলো উড়ে যায় পাশের পাহাড়ে। অন্যান্য বছরে চেয়ে এবার পাখির সংখ্যা অনেক কমে গেছে বলেও জানান লোকমান। এই দিঘি ছাড়াও রাউজানের নোয়াপাড়া কর্তার দিঘিতে ভিড় করেছে পরিযায়ী পাখির দল।

রাউজানের লস্কর দিঘিতে পরিযায়ী পাখি। পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি। কিছু কিছু পাখি তাই প্রতিবছর ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে।

রাউজানের লস্কর দিঘিতে পরিযায়ী পাখি। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশিরভাগ পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে। এ ছাড়া ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য সাইবেরিয়া থেকেও এসব পাখি আসে। এরা কিছু সময় পর আবার ফিরে যায় নিজ দেশে।

রাউজানের লস্কর দিঘিতে পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির মধ্যে বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এছাড়া স্বচ্ছ পানির বালি হাঁস, খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস, ছোট সারস পাখি, বড় সারস পাখি, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন পাখি, রাজসরালি, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

রাউজানের লস্কর দিঘিতে পরিযায়ী পাখি। এছাড়াও নানান রং আর কণ্ঠ বৈচিত্র্যের পাখিদের মধ্যে রয়েছে- ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
ইউডি/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।