বুধবার (৪ ডিসেম্বর) অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দীন মুরাদের আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে বাংলানিউজকে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর।
তিনি বলেন, আবুল কাশেম প্রকাশ শাহিনকে ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল।
এর আগে সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।
আবুল কাশেম প্রকাশ শাহিন কক্সবাজারের রামু এলাকার একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ইয়াবার গডফাদার বলে জানিয়েছে পিবিআই। সে ও তার পরিবার বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নাগরিক হলেও তারা মূলত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। প্রায় ৪০ বছর আগে তার বাবা নবী হোসেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কৌশলে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যান। পরে বাংলাদেশী নাগরিক গোলজার বেগমকে বিয়ে করে রামু এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন বলে জানায় পিবিআই।
আবুল কাশেমের বাবা নবী হোসেন ও ভাই শাহজাহান বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী। তারা দুইজনই সৌদি আরব প্রবাসী। তার এক বোন মালয়েশিয়াতে থাকেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈনউদ্দিন জানিয়েছিলেন, আবুল কাশেম প্রকাশ শাহিন ২০১৩ সালে কক্সবাজারে ঈদগড়-ঈদগাঁও-বাইশারী সড়কে হিল লাইন সার্ভিসে হেলপার হিসেবে চাকরি করতেন। বাসে হেলপারের চাকরির আড়ালে ডাকাত দলের সঙ্গে মিলে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি করতেন। এছাড়াও যাত্রীদের অপহরণ করে আদায় করতেন মুক্তিপণ। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে হেলপারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে সরাসরি ডাকাতিতে যুক্ত হন আবুল কাশেম।
তিনি বলেন, আবুল কাশেম পরে ইয়াবা ব্যবসায় যুক্ত হন। মিয়ানমার থেকে সরাসরি ইয়াবা এনে বাংলাদেশে বিক্রি করতেন। তিনি ইয়াবার গডফাদারে পরিণত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা সরবরাহ করতেন আবুল কাশেম।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শাহ আমানত সেতু এলাকায় র্যাব একটি পিকনিকের বাস আটক করেছিল। ওই বাস থেকে ২৩ কেজি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে র্যাব বাদি হয়ে ৮ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করে। র্যাবের দায়ের করা মামলার ৭ নম্বর আসামি আবুল কাশেম।
বাকলিয়া থানা ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের দুই কর্মকর্তা তদন্ত শেষে কাশেম ও রাজুর নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। কিন্তু আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ না করে পিবিআইকে পুনরায় তদন্তের আদেশ দেন। পিবিআই’র তদন্তে আবুল কাশেম ও রাজুর বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজুকে গ্রেফতার করা হয়। ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে আবুল কাশেমকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর বাংলানিউজকে বলেন, আবুল কাশেম রামু এলাকার একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ইয়াবার গডফাদার। বাসের হেলপার থেকে ডাকাত বনে যান আবুল কাশেম। পরে খুন, অপহরণসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৪ সালে ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে ঈদগড় বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুচ্ছফাকে বাসর রাতে নববধূর সামনে গুলি করে হত্যা করেন।
তিনি বলেন, ইয়াবার গডফাদার আবুল কাশেম সারাদেশে তার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছেন। বিভিন্ন ছদ্মনামে তিনি সারাদেশে ইয়াবা সরবরাহ করে আসছিলেন।
এ বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার থেকে পিকনিক শেষে যশোরগামী একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব-৭। পিকনিকের আয়োজক ছিলেন আতিয়ার নামে একজন। মূলত তিনি অন্য সহযোগীদের নিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে আটক করে র্যাব। পরে র্যাবের ডিএডি মো. শাহাদাত হোসেন বাদি হয়ে ৮ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলা করেন বাকলিয়া থানায়। বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইন উদ্দিন এ মামলা তদন্ত করেন। পরে মামলাটি তদন্ত করেন সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়া। গত ৩০ জুন তিনি আতিয়ারসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
এসকে/এসি/টিসি