ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পেঁয়াজের জোগান বাড়ছে, কমছে দাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৯
পেঁয়াজের জোগান বাড়ছে, কমছে দাম চট্টগ্রামে টিসিবির ট্রাকে বিক্রি হচ্ছে তুরস্কের পেঁয়াজ। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: বড় বড় আমদানির চালান আসতে শুরু করায় পেঁয়াজের জোগান বাড়ছে বাজারে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পেঁয়াজের ট্রাকও। কৃষকের ঘরে উঠছে মৌসুমের নতুন পেঁয়াজ। সব মিলে পেঁয়াজের দামে লাগাম পড়ছে।

সরেজমিন দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, খুচরা বাজার কাজীর দেউড়ি, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আগ্রাবাদে টিসিবির ট্রাক সেল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিএসএম গ্রুপের আরও ৫৪১ টন খালাস

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রোববার (১ ডিসেম্বর) খাতুনগঞ্জের বিএসএম গ্রুপের দ্বিতীয় চালানে চীন ও মিশর থেকে এসেছে ১৯ কনটেইনারে ৫৪১ টন পেঁয়াজ।

গত ২৬ নভেম্বর এসেছিল চীন থেকে ২০ কনটেইনারে ৫৮০ টন।

বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য।

তারপরও সব খরচ যোগ করে আমরা ন্যূনতম লাভে প্রথম ও দ্বিতীয় চালান সারা দেশের পাইকারদের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্রি করেছি। ২০-৪০ টনের বেশি কোনো পাইকারকে দেওয়া হয়নি। এর ফলে বাজারে পেঁয়াজের দামে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারত থেকে যতদিন পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু না হচ্ছে ততদিন আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবো।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করছেন অনেকেই। এর মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বড় গ্রুপগুলো বড় বড় চালান আনছে পেঁয়াজের। এটি দেশে পৌঁছা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাদের পাশাপাশি এখন কুইক রেন্টাল পদ্ধতির মতো ছোট ছোট আমদানিকারকদের পেঁয়াজ আমদানিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ৫০ জন আমদানিকারক যদি ৫০০ কনটেইনার করে আনে তাহলে বাজার দ্রুত স্থিতিশীল হবে।

বন্দরে খালাস হয়েছে ১১ হাজার টন

পেঁয়াজ আমদানির জন্য গত ১২ অক্টোবর থেকে রোববার (১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের অনুমতিপত্র (আইপি) নেওয়া হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৮৫ টনের। এর মধ্যে মিশর থেকে ৬২ হাজার ৩৭৪ টন, চীন থেকে ১৩ হাজার ৮৩ টন, তুরস্ক থেকে ১৩ হাজার ৬৮ টন, পাকিস্তান থেকে ৫ হাজার ৮৮০ টন, শ্রীলঙ্কা থেকে ১ হাজার ৬০০ টন, বেলজিয়াম থেকে ১ হাজার টন, নেদারল্যান্ডস থেকে ৬৮০ টন, উজবেকিস্তান থেকে ২০০ টন পেঁয়াজ আনা হবে।

ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ খালাস হয়েছে ১০ হাজার ৯৬৭ টন। এর মধ্যে মিশর থেকে এসেছে ৫ হাজার ৩০৬ টন, চীন থেকে ২ হাজার ৭৭২ টন, মিয়ানমার থেকে ১ হাজার ২২৮ টন, তুরস্ক থেকে ১ হাজার ৬৬ টন, ইউএই থেকে ১৬৮ টন, পাকিস্তান থেকে ৪২৭ টন পেঁয়াজ।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর শাখার উপ-পরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান বুলবুল বাংলানিউজকে বলেন, পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি ইস্যু, বন্দর থেকে পণ্য খালাসে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ছাড়পত্র ইস্যুকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। বন্দর দিয়ে প্রতিদিনই পেঁয়াজের কনটেইনার আসছে। পাইপ লাইনেও প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। আশাকরি, কিছু দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।

টেকনাফে নভেম্বরে সাড়ে ২২ হাজার টন

সূত্র জানায়, নভেম্বরে ১৫ দফায় মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে নৌপথে এসেছে ২২ হাজার ৫৬২ টন পেঁয়াজ। অক্টোবরে আমদানি হয়েছিল ২১ হাজার ৮৪৪ টন পেঁয়াজ।  

টিসিবির ১৩টি ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি

গত ১৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে টিসিবি ৬টি ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। জনপ্রতি ১ কেজি, ৪৫ টাকা দাম। প্রতি ট্রাকে ১ টন করে পেঁয়াজ। চাহিদার তুলনায় ছিল অপ্রতুল। দেশে বড় গ্রুপগুলোর পেঁয়াজের চালান আসার পর টিসিবি চট্টগ্রামে রোববার (১ ডিসেম্বর) ১০টি ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি করে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) ট্রাকের সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩টিতে উন্নীত করা হয়।

টিসিবির ট্রাকগুলো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা, পুলিশ লাইন্স, পুলিশ ফাঁড়ির আশপাশের এলাকাতেই দাঁড় করানো হচ্ছে পেঁয়াজ বিক্রির জন্য। সোমবার দুপুরে আগ্রাবাদ সরকারি কার্যভবন-১ এর ফটকে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পেঁয়াজ কিনে মানুষ। তবে জামালখানের ডা. খাস্তগীর সরকারি স্কুলের সামনে নারী ও পুরুষের আলাদা লাইন ছিল দীর্ঘ। তবু পেঁয়াজ কিনে হাসিমুখে ঘরে ফেরেন নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা।

আগ্রাবাদে পেঁয়াজ কিনতে লাইনে দাঁড়ান বৃদ্ধ আবদুর রহিম। তিনি জানান, কয়েক সপ্তাহ পেঁয়াজ কিনিনি বাজার থেকে। আজ লাইন ছোট দেখে সাহস করে দাঁড়ালাম। তুরস্কের বড় বড় পেঁয়াজ, ৫টি ধরেছে এক কেজিতে।

খাতুনগঞ্জেও কমছে পেঁয়াজের দাম

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তে প্রতিদিনই কমছে দাম। মূলত আকার, সৌন্দর্য, ঝাঁজ ও মানের ওপর নির্ভর করছে দাম।

হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বাংলানিউজকে বলেন, মানভেদে চীনা পেঁয়াজ ৮০-১০০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ১২০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৭০-১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আকারে ছোট ও স্বাদে দেশি পেঁয়াজের মতো হওয়ায় মিয়ানমারের পেঁয়াজের চাহিদা বেশি চট্টগ্রামে কিন্তু সরবরাহ কম।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনারে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। বাজারে সরবরাহ বাড়ছে আমদানি করা পেঁয়াজের।

আরেকজন আড়তদার বাংলানিউজকে জানান, একটু পচা, দাগি চীনা পেঁয়াজ ৭০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে।

টিসিবি যে পেঁয়াজ ৪৫ টাকা বিক্রি করছে কাজীর দেউড়ি বাজারের মুদির দোকানে তা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য পেঁয়াজ ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

>> মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আসছে
>> ৪৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনে ‘যুদ্ধজয়ে’র হাসি
>> ৫৮০ টন পেঁয়াজ ২০ কনটেইনারে এলো বন্দরে
>> প্লেনে প্রতিদিনই আসছে এস আলম গ্রুপের পেঁয়াজ​

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।