জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলায় এক লাখ ৮২ হাজার ৬৯৪ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যা গত মৌসুমের চেয়ে ৭ হাজার ১০৫ হেক্টর বেশি। এছাড়া এবার ৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৯৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবল’ এর প্রভাব না পড়ায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধানক্ষেতের তেমন ক্ষতি হয়নি। সার, বীজ থেকে শুরু করে কৃষিকাজের সব উপকরণ সহজলভ্য থাকায় আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আকতার জানান, উপজেলায় ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে গুমাই বিলের ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি থেকে ১০ হাজার ৫০ টন খাদ্যশস্য পাওয়া যাবে। এখানকার ৮০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ১৭০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধানের চারা রোপণ করা হয়। গুমাই বিলের প্রতি হেক্টর জমিতে আগে যেখানে সর্বোচ্চ ৬.০৫ টন ধান পাওয়া যেত, সেখানে এবার প্রতি হেক্টর জমিতে ৭.২০ টন ধান পাওয়া যাবে।
এদিকে অগ্রহায়ণের শুরুতেই গুমাই বিলে শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটার উৎসব। বাড়তি আয়ের আশায় ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, বরগুনা, বরিশাল ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা আসছেন রাঙ্গুনিয়ায়।
ধান কাটা শুরু হয়েছে বোয়ালখালীতেও। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে কাস্তে হাতে মাঠে ছুটছেন কৃষক, কাঁধে বোঝাই করে আমন ধান নিয়ে ফিরছেন ঘরে। উপজেলায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৫শ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবার আমনের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ।
রাউজানে এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ২৭৬ হেক্টর। চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে। বাম্পার ফলনে খুশি কৃষকরা। ধান কাটা চলছে হলদিয়া, কদলপুর, ডাবুয়াসহ পৌরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার সুশীল বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার ৩০-৪০ শতাংশ আমন ধান কাটা হয়েছে। চলছে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে পৌরসভা সদরের ছগিরা পাড়ায় ধান কাটার মধ্য দিয়ে শনিবার (১৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব। সোনাকানিয়া ইউনিয়নের কালামিয়া পাড়া, বোর্ড অফিস এলাকা, সদর ইউনিয়নের বারদোনা এলাকা ও হাতিয়ারকুলের কৃষকরা ভালো ফলন হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ হাজার ১০০ হেক্টর। এর মধ্যে স্থানীয় ২৫০ হেক্টর, হাইব্রীড ৬০০ হেক্টর ও উপসী ১১ হাজার ২৫০ হেক্টর। ইতোমধ্যে প্রায় ৭ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এস এম জহির।
হাটহাজারী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ ছাড়াই বেড়ে ওঠা সোনালী ধানে ভরে গেছে ফসলের মাঠ। ধলই গ্রামের বারিয়া বিল মাঠ, মিজাপুরের চারিয়া বিলসহ অনেক স্থানে চলছে ধান কাটার উৎসব।
আনোয়ারার বারশত, চুন্নাপাড়া, রায়পুর, হলদিয়াপাড়া, বোয়ালিয়া সহ ১১ ইউনিয়নে ৬ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.হাসানুজ্জামান জানান, অধিক ফলনের আশায় কৃষকরা স্থানীয় জাতের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধানের চাষাবাদ করছেন। উপজেলায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। চন্দনাইশে চলতি মৌসুমে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার ১৫০ হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নগরের পাঁচলাইশে ১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে দুই হাজার ৯৩২ মেট্রিক টন চাল, ডবলমুরিংয়ে ৪৯০ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন চাল এবং পতেঙ্গায় ৮৩০ হেক্টর জমিতে দুই হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া মিরসরাইয়ে ২১ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ৫৬ হাজার ৭৩৭ মেট্রিক টন চাল, সীতাকুণ্ডে পাঁচ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন চাল, ফটিকছড়িতে ২২ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে ৬২ হাজার ৮৫৪ মেট্রিক টন চাল, হাটহাজারীতে ৯ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৩১১ মেট্রিক টন চাল, পটিয়ায় ১২ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে ৩৬ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন চাল, লোহাগাড়ায় ১১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ৩১ হাজার ৩৮৬ মেট্রিক টন চাল ও বাঁশখালীতে ১৪ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে ৪১ হাজার ৫৮৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে ২৪ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪৮ হাজার ৬৯৩ মেট্রিক টন চাল।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন জানান, গতবারের চেয়ে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং সেটা পূরণ হয়েছে।
জানা যায়, সারাদেশে এবার আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় দেড় কোটি মেট্রিক টন। তবে মাঠ থেকে ধান ঘরে তুললেও কতটুকু ন্যায্যমূল্য মিলবে- সে শঙ্কায় ভুগছেন বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৬ লাখ টন ধানের পাশাপাশি সাড়ে ৩লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করবে সরকার। ২৬ টাকা দরে আমন ধান, সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা ও আতপ চাল ৩৫ টাকা দরে কেনা হবে। বুধবার (২০ নভেম্বর) থেকে ধান ও ১ ডিসেম্বর থেকে চাল কেনা শুরু হবে। এ কার্যক্রম চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ইতোমধ্যে কৃষকদের তালিকাও করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
এসি/টিসি