২০১৮ সালে ট্রেনে কাটা পড়ে চট্টগ্রামে ৭৯ জনের মৃত্যু হয়, আর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলেও ট্রেনে কাটা পড়ে এবং ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
জিআরপি (পূর্বাঞ্চল) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে পূর্বাঞ্চলে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৮১৩ জনের। গড় হিসেবে প্রতিবছর মৃত্যু হয়েছে ৭০৩ জনের বেশি।
জিআরপি’র দাবি, ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত যেসব মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই রেললাইনের মধ্যদিয়ে অসতর্ক চলাচল, চলন্ত ট্রেনে সেলফি তোলা, রেললাইনে বসে আড্ডা দেওয়া ও কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তা পারাপার, ট্রেন আসার মুহূর্তে রেল লাইনে উঠে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হন। সিগন্যাল মানার গরজ নেই যানবাহন চালক ও পথচারীদের।
জানা গেছে, রেলপথের দুইপাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় সবসময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, ওই সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে তাকে আইনের ১০১ ধারায় গ্রেফতার করার নিয়ম আছে। এমনকি এই সীমানার ভেতরে গবাদি পশুও থাকলে আটকের পর বিক্রি করে সেই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ারও বিধান রয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে সেই আইনের প্রয়োগ নেই। অনেক স্থানে রেল লাইনের ওপর বাজারও বসছে নিয়মিত। আবার রেল দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়, তার ৮৯ শতাংশই ঘটে অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে। চট্টগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনের মিরসরাই পর্যন্ত, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট ও চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে অন্তত ১৫০টি রেল ক্রসিং মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে গেট দেওয়া ও কর্মী নিয়োগ দিয়ে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার কথাও বলছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের বেশিরভাগ সড়ক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন পরিষদের। কিন্তু এই দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রেলক্রসিংয়ের নিরাপত্তা রক্ষায় উদ্যোগ নেই।
চট্টগ্রাম জিআরপি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজ ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রেলওয়ের বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করছি। রেললাইনের দু’পাশে বাজার না বসানো, কানে হেডফোন লাগিয়ে ট্রেনের রাস্তায় না হাঁটা, সেলফি না তোলাসহ নানান সচেতনতামূলক বিষয় পথচারীদের অবহিত করা হচ্ছে।
রেলওয়ের ভূমি বিভাগ কর্তৃক ট্রেনের রাস্তার আশপাশে গড়ে ওঠা ঘর-বাড়ি ও দোকানপাট উচ্ছেদ করে হলে এ দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করছেন ওসি মোস্তাফিজ ভূঁইয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
এসএস/এসি/টিসি