ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নাজনীনের ছাদবাগান নষ্ট করছে বহুতল ভবনের পানি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৯
নাজনীনের ছাদবাগান নষ্ট করছে বহুতল ভবনের পানি নাজনীনের ছাদবাগান নষ্ট করছে বহুতল ভবনের পানি।ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: ২৫ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছি শখের ছাদবাগান। সেই বাগান এখন নষ্ট করছে পুকুর ভরাট করে গড়ে ওঠা ১৬ তলা ‘ইকুইটি ভিলেজ’ ভবনের ছাদে জমে থাকা পানি। বড় হয়ে ওঠা আমার গাছগুলো মরে যাচ্ছে, ভবনটাও আছে ঝুঁকিতে।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে নিজের এসব কষ্টের কথা জানান গৃহিণী নাজনীন আক্তার। নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন শুলকবহর এলাকায় তার ৫তলা ভবন ‘জোবেদা ভিলা’।

এই ভবনের ছাদে ১২শ’ বর্গফুট এলাকাজুড়ে তিনি গড়ে তুলেছেন ফল-ফুল ও সবজির বাগান। বাগান ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ‘ইকুইটি ভিলেজ’ ভবনের পেছনে গ্যাসলাইন সংযোগ ঢেকে রাখতে বসানো হয়েছে টিনের ছাউনি।

এছাড়া বহুতল ভবনটির ছাদেও টিনের ছাউনি দিয়ে ঘর তোলা হয়েছে। ছাদের পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপলাইন রাখা হয়েছে উন্মুক্ত। ফলে বৃষ্টি হলেই সেই পানি এসে পড়ছে পাশের ভবনে।

নাজনীন আক্তারের ছাদবাগান।  ছবি: বাংলানিউজনাজনীন আক্তার জানান, ১৬ বছর ধরে এ অত্যাচার সহ্য করছি। ‘ইকুইটি ভিলেজ’ কর্তৃপক্ষকে বার বার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। ভবন মালিক মাহফুজুল হককে বলেও প্রতিকার পাইনি। শুনেছি এখন তিনি ভবনটির মালিকানা হস্তান্তর করেছেন। অভিযোগ করে তাদের দুর্ব্যবহারের শিকারও হয়েছি।

ঢাকার সাভারে একটি বাড়ির ছাদবাগানের গাছ কেটে দেওয়ার পর অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছিল। তাহলে ‘ইকুইটি ভিলেজ’ কর্তৃপক্ষ কেন আইনের আওতায় আসবে না-সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

নাজনীন আক্তার আরও বলেন, আমার স্বামী হৃদরোগী। ছাদবাগান গড়ে তুলতে তিনি আর আমার ৩ ছেলে সহযোগিতা করেছে। আগে পুরো ছাদ জুড়েই বাগান ছিল। নিচতলা ছেড়ে ছাদে উঠেছি আমার বাগানটা বাঁচানোর জন্য। শখের বাগান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখে তারা কষ্ট পাচ্ছে, আমি এর প্রতিকার চাই।

নাজনীনের ছাদবাগান নষ্ট করছে বহুতল ভবনের পানি। ছবি: বাংলানিউজনাজনীন আক্তারের স্বামী এ কে এম এ মুকিত বলেন, সারাজীবন লায়নিজম করেছি। মানুষ ও মানবতার কল্যাণে নিজের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু ছাদবাগান রক্ষায় তারা অমানবিক। ছাদের পানি নিষ্কাশনের জন্য বিকল্পভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে পাইপলাইনটা নিম্নমুখী করে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু বার বার বলা সত্ত্বেও পাইপলাইন খোলা থাকায় বৃষ্টির পানিতে ভবন নষ্ট হচ্ছে, টিনের ছাদ ফুটো হয়ে পানি ঢুকছে, ধ্বংস হচ্ছে ছাদ বাগানটা।

নাজনীন আক্তারের ছাদবাগানে আছে কমলা, মাল্টা, সফেদা, জামরুল, আম, আঙ্গুর, আমড়া, ড্রাগন সহ নানান ফলের গাছ। আছে গোলাপ, অর্কিড, জবা, কাট গোলাপ, ক্যামেলিয়া, রঞ্জন, মনিলতা, লিলি ফুলের গাছ। শখ করে লাগিয়েছেন নানান সবজির চারা।

নাজনীনের ছাদবাগান নষ্ট করছে বহুতল ভবনের পানি। ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, সুযোগ পেলেই সংগ্রহ করে আনি ফুল-ফলের গাছ। আমার দিন কাটে এসব গাছের পরিচর্যা করে। গাছগুলো আমার প্রাণ। ওদের অত্যাচারে হয়তো গাছগুলো ভবিষ্যতে আর বাঁচানো যাবে না।

যোগাযোগ করা হলে ‘ইকুইটি ভিলেজ’ এর ম্যানেজার বাসু বাংলানিউজকে বলেন, ছাদের পানি পেছনের ভবনে পড়ে ছাদবাগান নষ্ট হচ্ছে বলে শুনেছি। তবে এটা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে নেই। মালিক সাবের আহম্মদ দুবাই প্রবাসী। তার কেয়ারটেকার আছে। পাইপলাইন নিচের দিকে সম্প্রসারণ করে দিলে পানি আর ছাদে পড়বে না। ‘জোবেদা ভিলা’ ভবনের মালিক ওই কেয়ারটেকারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

আরও খবর>>
** গাছ উপহার পেলেন ছাদবাগানের ক্ষতিগ্রস্ত সেই মালিক

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৯
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।