তিনি বলেছেন, আগে মানুষ ভয়ে হোক, সংকোচে হোক, লজ্জায় হোক থানামুখী হতো না। এখন মানুষকে পুলিশের কাছে আসতে হয় না।
‘এই পরিবর্তনের জাদুকর হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন।
কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম নগর শাখা এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত আইজি মো. ইকবাল বাহার।
মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার হিসেবে বলতে চাই, আমি প্রতিটি থানার ওসিকে বাধ্য করছি প্রতি মাসে অন্তত একটি শুক্রবারে জুমার নামাজের খুতবায় জঙ্গিবিরোধী, মাদকবিরোধী কথা বলার জন্য।
‘আমি প্রতিটি থানার ওসিকে বাধ্য করছি প্রতিমাসে অন্তত একটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় নিজে গিয়ে জনগণের সঙ্গে বসে কথা বলার জন্য। আমরা যার নাম দিয়েছি-হ্যালো ওসি’।
তিনি বলেন, হ্যালো ওসির মাধ্যমে অলি-গলিতে, প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে কেউ ওসির চেহারা দেখেননি, সেখানে ওসিরা যাচ্ছেন। আপনাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আপনাদের সমস্যা সমাধান করছেন। সমস্যা সমাধানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছেন। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন।
‘আগে থানায় গেলে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতো। এখন থানায় গেলে চকলেট দিয়ে ওয়েলকাম করা হয়। আমরা ভালো কিছু করতে চাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ যদি ভালো কাজ করে, দয়া করে আমাদের সঙ্গে থাকবেন। যদি ভালো কাজ না করে আমাদের বর্জন করবেন। ’
সিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা ভালো পুলিশ এবং মন্দ পুলিশের মধ্যে ডিফেরেনশিয়েট করবেন। মন্দ পুলিশের সঙ্গে থাকার দরকার নেই। ভালো পুলিশের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদেরকে বিনীত অনুরোধ জানাই।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে যারা দুষ্ট লোক আছে, তাদেরকে আমরা আইডেন্টিফাই করতে চাই। দুর্বৃত্ত থাকলে তাদেরকে আইডেন্টিফাই করতে চাই। ’
সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজকে জনপ্রতিনিধি বানাবেন না
মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, এই সমাজে জনপ্রতিনিধি আছে, পলিটিক্যাল দল আছে। তাদের মধ্যে যদি দুর্বৃত্ত থাকে, দয়া করে ওই দুর্বৃত্তদের বর্জন করুন। কোনো সন্ত্রাসীকে, কোনো চাঁদাবাজকে, কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে আপনারা জনপ্রতিনিধি বানাবেন না।
‘সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীসহ যাদের ভয়ে আপনাদের ঘুম হয় না- তাদেরকে আপনারা কখনো কোনো দল বা অঙ্গ সংগঠনের নেতা বানাবেন না। ’
সিএমপি কমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছেন। সেই পরিবেশ হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান। যারা রাজনৈতিক পরিচয়ে সন্ত্রাস করে, চাঁদাবাজি করে তাদের বিরুদ্ধে এই শুদ্ধি অভিযান। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে এই শুদ্ধি অভিযান।
‘যারা মনে করেছেন সন্ত্রাস করে বড় বড় নেতা হবেন, টাকার মালিক হবেন- আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ যদি মনে করে থাকেন, মাদক ব্যবসায়ী অথবা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেক উঁচু স্তরে যাবেন- দয়া করে সে আশা পরিত্যাগ করুন। ’
তিনি বলেন, আপনারা যে যেখানে আছেন, শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে শান্তি আসবেই। তাই আগে নিজের চিন্তা করুন। নিজে কীভাবে বেঁচে থাকবেন, নিজের পরিবার কীভাবে বেঁচে থাকবে সেই চিন্তা করুন। আপনার সন্তান যেনো পিতৃহারা না হয়- দয়া করে চিন্তা করুন।
‘সুতরাং যার যার অবস্থান থেকে দয়া করে পরিশুদ্ধ হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত শুদ্ধি অভিযান চলছে। এ অভিযান থেকে কেউ মুক্ত নয়। আমি যেমন মুক্ত নই, জনপ্রতিনিধিরাও মুক্ত নন। পলিটিক্যাল লিডাররাও মুক্ত নন। সমাজের ব্যবসায়ী মুক্ত নন। যারা সমাজকে দূষিত করে তারাও এ শুদ্ধি অভিযান থেকে মুক্ত নয়। ’
মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্যদের প্রতি আমার অনুরোধ যারা অলি-গলিতে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম করছে, আমরা চাই আপনারা তাদের ঘুম হারাম করে দিন। আমাদের মধ্যে যারা ভালো পুলিশ আছে, তাদের সঙ্গে আপনারা থাকুন। মন্দ পুলিশকে ত্যাগ করুন।
‘দেশে থাকলে ভালোভাবে থাকতে হবে। না হলে দয়া করে যেভাবে পারেন দেশ ছাড়েন। আগামীতে আপনাদের কলঙ্কিত মুখ এ দেশবাসী দেখতে চায় না। এ সরকার দেখতে চায় না। ’ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন সিএমপি কমিশনার।
কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, চসিকের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতা এস এম আবু তৈয়ব, চসিক কাউন্সিলর আনজুমান আরা আনজু, কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম নগর শাখার সদস্য সচিব অহীদ সিরাজ স্বপন বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
এমআর/এসি/টিসি