বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন।
মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আজকে সকালে মাত্র ৬ গাড়ি পেঁয়াজ চট্টগ্রামের বাজারে ঢুকেছে।
‘এ রকম হিসাব যদি থেকে থাকে, দুরভিসন্ধি যদি কারও থাকে- এবং সেটা যদি আমরা ফাইন্ড আউট করতে পারি, তাহলে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবেন। সরকার কিন্তু কঠোর অবস্থানে। ’
দোকানে পেঁয়াজের মূল্য তালিকা রাখার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, পাইকারি কিংবা খুচরা- প্রত্যেকটি দোকানে আমরা পেঁয়াজের মূল্য তালিকা দেখতে চাই। আমরা চাই পেঁয়াজ কেনা এবং বিক্রির বিষয়টি যাতে স্বচ্ছ হয়। আপনারা যাতে সবকিছু দেখাতে পারেন।
‘আপনারা যার কাছ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছেন, তার তথ্য আপনাদের কাছে অবশ্যই থাকতে হবে। যাতে ওয়ান কলে আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। আমরা যদি কোনো ডকুমেন্ট চাই তিনি যেনো হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ভাইবারে সেই ডকুমেন্ট আমাদের পাঠাতে পারেন। ’
জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের হিসাব অনুযায়ী বর্তমান পরিস্থিতিতে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কোনোভাবেই ৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। যদি আমরা আনুমানিক একটা দাম ধরি। আপনারা চেষ্টা করবেন, এ রকম একটা প্রাইসের মধ্যেই পেঁয়াজের দামটা যেনো সীমাবদ্ধ থাকে।
২৪ ঘণ্টা পেঁয়াজের গাড়ি চলবে সড়কে
ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে ডিসি বলেন, এখানে জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশের প্রতিনিধিরা আছেন। সবাইকে অনুরোধ জানাবো- পেঁয়াজের গাড়ি যাতে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা সড়কে চলতে দেওয়া হয়। আশা করি এ বিষয়ে আপনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
বন্দরে দ্রুত পণ্য খালাস জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কিংবা টেকনাফের স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পেঁয়াজ আসছে, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যাতে এসব পেঁয়াজ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে খালাস করে দেয়- সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তাদের এ বিষয়ে অনুরোধ জানাবো।
‘সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্টদের বিরুদ্ধেও কিছু কমপ্লেইন পেয়েছি। এসব অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে- তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল দ্রব্য। খালাসে বিলম্ব হলে পেঁয়াজ পচে যাবে। ব্যবসায়ীদের লস হবে। আমরা এটা চাই না। ব্যবসায়ীরা যাতে আমদানি করা পেঁয়াজ শতভাগ বাজারে বিক্রি করতে পারে- সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
পেঁয়াজের বাজারে অভিযান চলবে
বৈঠকে কোনো পেঁয়াজ আমদানিকারক না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করে ডিসি বলেন, আমাদের কাছে যে তালিকা রয়েছে, সেখানে কিছু আমদানিকারকের নাম আছে। কিন্তু তাদের কেউ বৈঠকে আসেননি। তারা অন্য কোনো নামে বা অন্য কোনো জায়গায় ব্যবসা করছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
‘তালিকায় আমদানিকারকদের যে ঠিকানাগুলো দেওয়া আছে, সেই ঠিকানায় আমরা নিশ্চিতভাবে অভিযান পরিচালনা করবো। যদি তাদেরকে ঠিকানায় পাওয়া যায়, কারসাজির সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়- তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আপনারা যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আপনাদেরকে আমি সাধুবাদ জানাই। আজকে মাত্র ৬ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে। কাল সকালে যেনো শুনতে পাই- চট্টগ্রামে ২০ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে। আশা করি আপনারা সেই ব্যবস্থা করবেন। পেঁয়াজ কেনা অব্যাহত রাখবেন।
‘সঠিকভাবে ব্যবসা করলে প্রশাসন আপনাদের প্রতিপক্ষ হবে না। আমরা আপনাদের সহায়তা দেবো। তবে খুচরা থেকে পাইকারি বাজার- সবখানে আমাদের নজরদারি থাকবে। ’ বলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।
বৈঠকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জেড এম শরীফ হোসেনসহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ, ক্যাব এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
এমআর/টিসি