ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পলিথিন কারখানায় বোমা মারতে বললেন এমএ মালেক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
পলিথিন কারখানায় বোমা মারতে বললেন এমএ মালেক ---

চট্টগ্রাম: দেশের লাইফলাইন খ্যাত কর্ণফুলী নদী ভরছে সরকার নিষিদ্ধ পলিথিনসহ নানা বর্জ্যে। পলিথিনের কারণে ২০ ইঞ্চি ও ৩২ ইঞ্চি ব্যাসের ড্রেজার ব্যর্থ হয়েছে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে। তাই ক্ষোভ জানিয়ে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক বলেছেন, পলিথিন কারখানা সিলগালা নয়, বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দিতে হবে।

শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নগরের ফিরিঙ্গিবাজারে কর্ণফুলী ঘাটে চ্যানেল আইয়ের ২১ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

আজাদী সম্পাদক বলেন, পলিথিন সরকার নিষিদ্ধ করেছে।

কিন্তু আসছে কোথা থেকে। পলিথিনের উৎস কারখানা।
সেখানে বোমা মারলে উড়ে চলে যাবে। কারখানায় তালা মারলে হবে না। একেবারে উচ্ছেদ করতে হবে। আমরা আসলে উৎসটা ধরি না।

তিনি বলেন, কর্ণফুলী হচ্ছে বাংলাদেশের ফুসফুস। কর্ণফুলী বাঁচাতে হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সবাই মিলে এটা করবো। নিজেদের বাঁচতে হবে। নিজেদের বাঁচাতে হলে পারিপার্শ্বিক সব কিছুতে লক্ষ্য রাখতে হবে। সচেতন হতে হবে। তাহলে দেশ ও জাতি বাঁচবে।   

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, বন্দর ও কর্ণফুলী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নদী না থাকলে বন্দর থাকবে না। ১ নম্বর জেটির নিচের দিকে নব্যতা বেড়েছে। আগে জাহাজ আসতো ৮ দশমিক ৭ মিটার ড্রাফটের। এখন জাহাজ আসে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের। কারণ আমরা ড্রেজিং করে নব্যতা বাড়িয়েছি। উপর দিকে নব্যতা বাড়াতে অনেক প্রতিবন্ধকতা। কারণ এখানে মাটিটা মাটি না, গার্বেজ। পলিথিনের উৎস বাসা-বাড়ি। এটি ড্রেজিংয়ে বড় বাধা।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, কর্ণফুলী নদী দিয়ে দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। ৪০০-৫০০ বছর আগে কর্ণফুলী ছিল কোর্ট বিল্ডিংয়ের নিচে। ক্রমে দক্ষিণে সরে এসেছে। সরকারের টাকা আছে। কর্ণফুলী বাঁচাতে যদি ৬ মিটার খনন করতে হয় তবে উন্নত ড্রেজার আনতে হবে। দেশের মানুষের মধ্যে আইন না মানা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে যাতে আইন মানে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ-সভাপতি ও সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, বাকলিয়ায় ২০ ইঞ্চি ড্রেজার লাগানোর পর আধ ঘণ্টা পর পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। শুধু পলিথিন নয়, ফিশিং নেট, গৃহস্থালির বর্জ্যে ড্রেজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরপর চীন থেকে আনা হলো ৩২ ইঞ্চি ড্রেজার। সেটিও ব্যর্থ হলো।

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরিপ করে দেখা গেছে ৪২টি খাল দিয়ে প্রতিদিন ৮-৯ হাজার মেট্রিকটন বর্জ্য নদীতে পড়ছে। জোয়ার-ভাটার নদী হলে এখানে নৌযান চালানো যেত না। সিটি করপোরেশনের পানি যাচ্ছে বর্জ্যসহ। খালের মুখে বর্জ্য সার্ক করে পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা বিশ্বের সব জায়গায় আছে। কর্ণফুলী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। কর্ণফুলী মরে গেলে পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভূমিমন্ত্রীর বদান্যতায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার মধ্যে ২০ লাখ টাকা পেয়েছি। আরএস মূলে অবৈধ স্থাপনা আছে ২ হাজার ১১২টি, বিএস মূলে ৭৫টি। আদালতের রায়ে আরএস মূলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। ৫ দিনে ২৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১০ একর জমি উদ্ধার করেছি। নিম্ন আদালতে একটি মামলাসহ এখনো ১২টি মামলা রয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ২৫ কোটি টাকা চেয়ে রেখেছি। দখলদারদের তালিকা নদী কমিশনের ও জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে রয়েছে।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, কর্ণফুলীর সঙ্গে কাপ্তাই হ্রদের সম্পর্ক আছে। হ্রদটির নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে, সে ব্যাপারে কেউ নজর দিচ্ছি না। স্যুয়ারেজ সিস্টেম না থাকায় নগরের ৫০ হাজার স্যানিটারি ল্যাট্রিনের আড়াই হাজার টন বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এর বাইরে হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কসাইখানা, লাইটার জাহাজের বর্জ্য, পাহাড়ি বালু নদীতে পড়ছে। কর্ণফুলী ও হালদা এখনো বেঁচে আছে জোয়ার-ভাটার কারণে। কিছু দিন পর এ নদী খালে পরিণত হবে। দুর্বিষহ অবস্থা নেমে আসবে।

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম বলেন, কর্ণফুলী সুন্দর রাখতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। পাহাড় খেয়ে ফেলেছি আমরা।   কর্ণফুলী খেয়ে ফেললে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিল্প বাড়বে, এটা বন্ধ করা যাবে না। শিল্পকে সবুজ করার জন্য ব্যবসায়ীদের কমিটমেন্ট থাকতে হবে।  

হালদা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, কর্ণফুলীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দূষণ বন্ধে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সমন্বয় জরুরি। চসিক, সিইউএফএল, কেপিএম ও ওয়াসাকে দূষণ বন্ধে উদ্যোগী হতে হবে। কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস চালু করলে নগরের অর্ধেক যানবাহন কমে যাবে।  

কর্ণফুলী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, নদীকে ব্যবসার উপাদানে পরিণত করা হয়েছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং বন্ধ মানে হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারে রোগীর অর্ধেক অপারেশন করে ডাক্তারের চলে যাওয়ার মতো।

আইবিএফবি’র সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব বলেন, মানুষের শরীরের নার্ভ ঠিক না থাকলে ব্যথা অনুভব হয়। পৃথিবীর নার্ভ হচ্ছে নদী, খাল, জলাশয়। কর্ণফুলী নামের সঙ্গে একটি মেয়ের কানের দুল হারানোর লোকগাথা আছে, কিন্তু এখন আমরা কর্ণফুলী নদীই হারাতে বসেছি।

স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে কর্ণফুলীর দখল ও দূষণ বন্ধে। সরকার র‌্যাংগস ভবন ভেঙে সড়ক করেছে, হাতির ঝিল করেছে, নদীপাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছে। কর্ণফুলীও বাঁচাতে পারবে।

কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, কর্ণফুলী চট্টগ্রামের নাভি। ভূমিমন্ত্রীর ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। তিনি বলেছিলেন, দখলদারদের চেয়ে সরকারের হাত অনেক বেশি লম্বা।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন সম্পাদক আলীউর রাহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন চ্যানেল আইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান চৌধুরী ফরিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২. ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad