তবে যৌন হয়রানির এসব ঘটনার লাগাম টানতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিআরটিএ। গণপরিবহনে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছে সেবা সংস্থাটি।
বিআরটিএর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও চট্টগ্রামের নারী নেত্রীরা বলছেন, গণপরিবহনে যৌন হয়রানি ঠেকাতে অভিযুক্ত ব্যক্তির কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি নারীদের জন্য আলাদা গণপরিবহন, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল গঠন করা এখন সময়ের দাবি।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, গণপরিবহনে যৌন হয়রানি ঠেকাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিআরটিএ।
এছাড়াও চট্টগ্রামের সব বাস চালক ও হেল্পারদের তথ্য সংরক্ষণ, যৌন হয়রানির অভিযোগ জানতে ফেসবুক পেইজ ছাড়াও একটি আলাদা সেল গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু করছে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন তদারকির দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।
বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক বাংলানিউজকে জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গণপরিবহনে যৌন হয়রানির একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তবে অনেক সময় যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলেও অভিযোগ করেন না ভুক্তভোগী।
তিনি বলেন, গণপরিবহনে যৌন হয়রানি ঠেকাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র প্রতিবাদ। কোনো নারীর সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে যদি তিনি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা যায়।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এ কর্মকর্তা জানান, যে কোনো মুল্যে নারীদের জন্য গণপরিবহন নিরাপদ করতে চাই আমরা। এ জন্য গণপরিবহনে যৌন হয়রানি ঠেকাতে বেশ কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে গণপরিবহনে যৌন হয়রানির ঘটনা কমে আসবে।
বাড়ছে অভিযোগ, মিলছে প্রতিকারও:
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ‘ম্যাজিস্ট্রেটস অব বিআরটিএ চট্টগ্রাম’ ফেসবুক পেজে গণপরিবহনের এক চালকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মো. আব্বাস নামে ওই বাস চালককে ধরে চকবাজার থানায় হস্তান্তর করেন বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক।
এর আগে গত ২২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ফেসবুক পেজে এক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়ার পর ওই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ নম্বর রুটের বাস হেল্পার আমীর হোসেনকে চার মাসের কারাদণ্ড দেন ম্যাজিস্ট্রেট।
আলাদা গণপরিবহন চালুর দাবি:
গণপরিবহনে যৌন হয়রানি ঠেকাতে অভিযুক্ত ব্যক্তির কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি নারীদের জন্য আলাদা গণপরিবহন, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল গঠনের দাবি জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী।
নারীর যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা এ আইনজীবী বাংলানিউজকে জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাতে নারী যাত্রীদের হয়রানি, ধর্ষণের ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে ভীতি বাড়ছে। অপ্রতুল গণপরিবহনের সুযোগ নিয়ে কিছু বিকৃত মানসিকতার লোক যৌন হয়রানী করে চলেছে। এ কারণে নারীদের জন্য আলাদা গণপরিবহন চালু করা দরকার।
তিনি বলেন, নারীর যৌন নিপীড়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নারীদের অনেকে এ বিষয়টিকে ‘ট্যাবু’ মনে করেন। প্রতিবাদ করতে চান না। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে। যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানাতে হবে।
গণ পরিবহনে নারীর যৌন হয়রানির অভিযোগ শুনতে জেলা প্রশাসনের অধীনে চট্টগ্রামে আলাদা যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল গঠনের প্রস্তাব দেন এ আইনজীবী।
ফের চালুর পরিকল্পনা চসিকের:
নারী ও শিশুদের জন্য ২০০৬ সালে ১০টি বাস সার্ভিস চালু করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তখন ওই প্রকল্পের নাম ছিল ‘নিরাপদ মহিলা ও শিশু যাত্রী সেবা’। রুট পারমিটবিহীন ওই প্রকল্পটি সফলতার মুখ দেখেনি। তবে ফের নারীদের জন্য আলাদা গণপরিবহন চালুর কথা বলছে সেবা সংস্থাটি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বাংলানিউজকে জানান, নারীদের জন্য আলাদা গণপরিবহন চালুর একটি প্রকল্প ছিলো। নানা কারণে তা সফলতার মুখ দেখেনি। তবে ফের নারীদের জন্য আলাদা গণপরিবহন চালুর চেষ্টা করছি আমরা।
বিআরটিসি বলছে ‘সম্ভব’ নয়:
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) চট্টগ্রাম বাস ডিপোর ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দায়িত্ব নিয়েছি কয়েকদিন হলো। এখানকার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি ঢাকায় নারীদের জন্য আলাদা কিছু গণপরিবহন থাকলেও চট্টগ্রামে নারীদের জন্য কোনো গণপরিবহন চালু নেই বিআরটিসির। চালু করা আপাতত সম্ভবও নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
এমআর/টিসি