ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নগর পরিকল্পনায় সাফল্য চসিক মেয়রের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
নগর পরিকল্পনায় সাফল্য চসিক মেয়রের ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: নগরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে ১৯৬১ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল মাস্টারপ্ল্যান। এ জন্য ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ভিত্তিক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান জন আর স্নেল তৈরি করে 'স্টর্ম ড্রেনেজ অ্যান্ড ফ্ল্যাড কন্ট্রোল, মাস্টার প্ল্যান অ্যান্ড ফিজিবিলিটি রিপোর্ট ফর চিটাগং'।

এ ফিজিবিলিটি স্টাডিতে চট্টগ্রাম শহরের কালুরঘাট থেকে নেভাল একাডেমি ৩৪টি খালের মুখ চিহ্নিত করা হয়েছিল। খালগুলো নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে যুক্ত হয়েছিল।

এরপর ১৯৭২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড, ১৯৮৬ সালে লুইস বার্জার, ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে। এর মধ্যে ১৯৬৯, ১৯৯৫ ও ২০১৭ সালের মাস্টারপ্ল্যানে ছিল নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার আদ্যোপান্ত পরিকল্পনা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান অ্যাকোয়া কনসালট্যান্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট অ্যান্ড ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউওএম) এর সহায়তায় এবং ডেনমার্কের প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান গ্রন্টমি দীর্ঘ দুই বছর সমীক্ষা শেষে এ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে।

চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। চসিক নগর পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত গত এক বছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনা বিভাগ বেশ কিছু কাজ বাস্তবায়ন করেছে। প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্ত নিজস্ব ভবন যেমন- স্কুল/কলেজ, হাসপাতাল, ওয়ার্ড অফিস, মার্কেট ইত্যাদির স্থাপতিক ডিজাইন, নগরের বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক সংযোগ, মিড আইল্যান্ড, উন্মুক্ত স্থান ইত্যাদিতে সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নগর বনায়ন ও সবুজায়ন কার্যক্রম, নগর দারিদ্র হ্রাসকরণ (জাইকা, ব্র্যাক, ইউনিসেফ, এনইউপিআরপিসহ করপোরেশন এলাকায় কর্মরত সব এনজিও) ও বস্তি উন্নয়ন, এনজিওদের কার্যক্রম সমন্বয়করণসহ নগরের ড্রেনেজ পরিকল্পনা, যানজট নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এছাড়া আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নগরের বিভিন্ন সড়ক, সড়ক সংযোগ, মিড আইল্যাণ্ড ও ফুটপাতের সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম এবং যাত্রী ছাউনি নির্মাণকাজ চলছে। ইস্পাহানী মোড়-টাইগারপাস গোলচত্বর, দেওয়ানহাট ওভারব্রিজ, চকবাজার-মুরাদপুর রোডের পাশের্ পরিত্যক্ত জমি, জিপিও-নিউ মার্কেট মোড়-পুরাতন রেলস্টেশন গেট, নিউমার্কেট মোড়-আমতলী মোড়, কাজীর দেউরী মোড়-লাভ লেন-জুবিলী রোড, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়-বারিক বিল্ডিং গোলচত্বর ও গোলচত্বরের পূর্ব পশ্চিম এবং উভয় পাশের্ এলাকা, সিটি গেট-অলংকার মোড়, প্রবর্তক মোড়-গোলপাহাড় মোড়, ষোলশহর ২নম্বর গেট মোড়-জিইসি মোড়-জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অফিস গেট-গরীবউল্লাহ শাহ্ মাজারের মোড়-লালখাঁনবাজার ইস্পাহানী মোড়, পাঁচলাইশ মক্কী মসজিদ সংলগ্ন উত্তর পশ্চিম অংশ-প্রবর্তক মোড়, কোতোয়ালী মোড়-ফিরিঙ্গিবাজার-নতুন ব্রিজ, ওয়েলফুড-গোল পাহাড় মোড়, বিপ্লব উদ্যান ও তার চারপাশ, কাস্টমস মোড়-পতেঙ্গা মোড়, পাঁচলাইশ চত্ত্বর, কাতালগঞ্জ অলি খাঁ মসজিদ-মুরাদপুর মোড়, হোটেল আগ্রাবাদের সামনে এইচআরসি ভবনের পূর্ব এবং উত্তর পাশের ফুটপাত আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভাগীয় সুইমিং পুল।  ছবি: সোহেল সরওয়ারফয়’জ লেক অ্যাপ্রোচ সড়কের আইল্যান্ড, চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম উত্তর ও পূর্ব পাশের ফুটপাথ, চট্টেশ্বরী মোড়ে ত্রিভূজাকার আইল্যাণ্ড, বায়েজিদ বোস্তামী তারা গেট-ব্যাটালিয়ন মোড়-ক্লিপটন মোড়, ডিটি রোড দেওয়ানহাট মোড়-কাঁচা রাস্তার মোড়, আন্দরকিল্লা মোড়-লালদিঘীর উত্তর অংশ, গোলপাহাড়-এম এম আলী রোড, কাজির দেউড়ী আলমাস সিনেমা মোড়-ওয়াসা মোড়, জিইসি মোড়ে সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে ফুটপাত, ভঙ্গিশাহ মাজার চত্ত্বর-কদমতলী নিচের মোড়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় মোড়-প্রবর্তক মিয়া বিবি শো রুম, ২ নম্বর গেট মোড়ের পূর্ব পাশে, বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের পশ্চিমে, চকবাজার প্যারেড কর্নারের উত্তর-পশ্চিম অংশে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া জামালখান পিডিবি অফিসার্স কোয়ার্টার সংলগ্ন ফুটপাথে গার্ডেনিং, লাইটিং, সিটিং, শপ ও লাইভ ফিশ অ্যাকুয়ারিয়াম নির্মাণ, করপোরেশনের লালদিঘী পার্কের সৌন্দর্যবর্ধন ও রক্ষণাবেক্ষণ, চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম সংলগ্ন স্থানে নবনির্মিত সুইমিংপুল চত্ত্বর ও করপোরেশনের থিয়েটার ইনস্টিটিউট চত্ত্বরে সৌন্দর্যবর্ধন এবং সবুজায়ন কার্যক্রমের এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম এখন গ্রিন সিটিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ও ইউনিসেফ এর যৌথ পরিকল্পনার আওতায় ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে আরবান পাইলট প্রকল্পের অধীনে ছয়টি খাতে কাজ হয়েছে। খাতগুলো হলো- স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিশু সুরক্ষা, শিক্ষা, যোগাযোগের জন্য উন্নয়ন। প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ নগরবাসীকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। চসিকের সঙ্গে ব্র্যাক এর যে কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হয় সেগুলো হলো- শিক্ষা কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসেবা, অতি দরিদ্র কর্মসূচি, কর্মমুখী প্রশিক্ষণ, ব্যবসা উন্নয়ন ও আর্থিক সহায়তা এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ২, ৭, ৮, ৯, ১৩, ১৪, ১৮, ২২, ৩০ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৮২ হাজার ৪৫৫ জনকে উপযোগী জনসংখ্যা হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

ছবি: সংগৃহীতএকইসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় নগর দারিদ্র হ্রাসকল্পে ১০টি বস্তিতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নে কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। যে যেভাবে পেরেছেন নিজেদের মতো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এর নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে সেবাধর্মী সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন সমন্বয়ের কাজটি যাতে ভালোভাবে করতে পারে সেজন্য আইনগতভাবে ক্ষমতা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করছেন। নগরের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আমি চট্টগ্রাম নগরকে বিলবোর্ডমুক্ত করেছি।  কাজটি এত সহজ ছিল না। কিন্তু আমি সেই কাজটি করেছি। ডোর টু ডোর বর্জ্য অপসারণও সিটি করপোরেশনের যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। এ কাজে আমরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সফল হয়েছি।

আ জ ম নাছির উদ্দীন আরও বলেন, আমাদের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা অনেক। তারা চান সব কাজ মেয়র করবেন। কিন্তু যেটা অনেকেই জানেন না, তা হলো, উন্নত বিশ্বে সিটি করপোরেশনের হাতে যে ক্ষমতা, বাংলাদেশের বাস্তবতা তার চেয়ে ভিন্ন। আমরা পরিচালিত হই সিটি করপোরেশন ম্যানুয়েল দ্বারা। আমাদের কাজ তিনটি। নালা নর্দমা সংস্কার, পরিচ্ছন্নতা, এবং শহর আলোকিত করা। আইন অনুযায়ী এই তিনটি সেবা আমরা নগরবাসীকে দিতে বাধ্য। চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে চট্টগ্রাম এখন অনেক বেশি আবর্জনামুক্ত। নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিস্কার করা হচ্ছে। ৩৪টি খাল গেছে নগরের ভেতর দিয়ে। দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। শহরও আলোকিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad