বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক সফর আলী।
তিনি বলেন, শিপ ইয়ার্ডে নিহত ও আহত শ্রমিকদের সংখ্যা এবং আহতদের অবস্থা নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা।
সফর আলী বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মস্থলে নিহত শ্রমিকদের ২ লাখ টাকা এবং এর সঙ্গে জেলা প্রশাসকের গঠিত ক্রাইসিস কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরো ৫ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা অনেক নিহত শ্রমিকের পরিবার পাচ্ছে না। শ্রম আইনে মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ কার্যকর বাধ্যতামূলক হলেও মালিকরা তা মানছে না। শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জাম দেওয়া হয় না। রাতে শিপ ইয়ার্ডে কাজ না করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও মানছে না মালিকরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৯ সালে গত ৮ মাসে চট্টগ্রাম শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় ১৬জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৬৬জন শ্রমিক। ২০১৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ৫০ জন মারা গেছে। আর ২০১৯ সালে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে ৩০ জন। জাহাজ কাটার সময় আগুনে দগ্ধ ও গ্যাসে আক্রান্ত হওয়া এবং লোহার পাত চাপা পড়ে প্রায়ই ঘটছে হতাহতের ঘটনা।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সীতাকুণ্ডে সাগর উপকূলে ৫০-৬০টি ইয়ার্ডে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে। অনেক ইয়ার্ডের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের লাইসেন্স নেই। শ্রমিকদের জাহাজ কাটার সময় নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেই। ফলে মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই তাদের কাজ করতে হচ্ছে।
ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত বলেন, ২০০৯ সালের হংকং কনভেনশন অনুসারে প্রতিটি পুরনো জাহাজ বর্জ্যমুক্ত করে রিসাইক্লিং করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অতি মুনাফার লোভে জাহাজ বিক্রেতা বা ক্রেতারা তা মানছেন না। এ অবস্থায় বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শে শ্রমিকরা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক এ এম নাজিম উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো: শ্রমআইন-বিধিমালা ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন মেনে ইয়ার্ড পরিচালনা, ইয়ার্ডে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা, মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ অনুসারে ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা মাসিক মজুরি নিশ্চিত করা, চলতি বছর সংঘটিত সব দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন এবং দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়া, শ্রমিকদের তথ্য সংরক্ষণ, কাটার আগে জাহাজ পূর্ণাঙ্গভাবে বর্জ্যমুক্ত করা এবং ইয়ার্ডগুলো নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
এসি/টিসি