ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ডা. প্রণব চৌধুরীর ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নেই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯
ডা. প্রণব চৌধুরীর ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নেই ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী সম্মাননা স্মারকের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা

চট্টগ্রাম: বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও লোকসাহিত্যবিজ্ঞানী অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেছেন, যারা শিশুস্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে একাগ্রতা ও মৌলিক চিন্তাপ্রসূত কাজ করেন, তারা নমস্য ও মহান। বাংলাদেশে এ রকম মানুষ সহজলভ্য নয়।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম একাডেমি আয়োজিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরীর সম্মাননা অনুষ্ঠান ‘মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।  

তিনি বলেন, প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী দেশে-বিদেশে শিশুচিকিৎসায় উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

কিন্তু এ বিদ্যাকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যবহার না করে নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক হিসেবে যেমন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তেমনি সমাজের সর্বস্তরে শিশুর যত্ন, চিকিৎসা এবং সচেতনতামূলক শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে পাঁচ খণ্ডে ‘ছোটদের চিকিৎসা সমগ্র’ লিখে নিজেকে এক ভিন্নতর উচ্চতায় নিয়েছেন। এটি বাংলায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অনন্য সংযোজন।

তিনি বলেন, ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী শুধু তার পেশাগত বিদ্যায় পারদর্শী নন, একজন সৃজনশীল লেখক হিসেবেও ইতিমধ্যে তিনি তার স্থান করে নিয়েছেন। এ বিষয়ে তার উপন্যাস ‘দেবশিশু’ বা ‘নির্বাচিত কবিতা’ যেমন আমাদের সহজে আকৃষ্ট করে, তেমনি তার ‘মুক্তিযুদ্ধ আমার শৈশব’ প্রভৃতি বইগুলোতেও তার সৃজনশীলতার যে প্রকাশ ঘটেছে, তার ফলে একজন বিশিষ্ট লেখক হিসেবেও তিনি ইতিমধ্যে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নিজের স্থানটি করে নিয়েছেন।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বরেণ্য সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন কবি আবুল মোমেন, সরকারি চারুকলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর রীতা দত্ত, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলম। বাচিকশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংবর্ধনা পরিষদের আহ্বায়ক আমিনুর রশীদ কাদেরী।

শুভেচ্ছো বক্তব্য দেন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা কবি-সাংবাদিক রাশেদ রউফ, চট্টগ্রাম একাডেমির মহাপরিচালক অরুণ শীল, সংবর্ধনা পরিষদের সচিব মিলন বনিক, ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী সম্মাননাগ্রন্থের সম্পাদক বাসুদেব খাস্তগীর প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন একাডেমির পরিচালক নেছার আহমদ, দীপক বড়ুয়া, বিপুল বড়ুয়া, এসএম আবদুল আজিজ, রহমান হাবীব, সুপ্রতিম বড়ুয়া, এম কামাল উদ্দিন প্রমুখ।

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরীর কবিতা আবৃত্তি করেন সাবরিনা শারমীন, সাইকা আলম এবং উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন সুব্রত দাশ অনুজ।   অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্মাননাগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

কবি আবুল মোমেন বলেন, ডা. প্রণব কুমার চৌধুরীকে নিয়ে সম্মাননা অনুষ্ঠান আয়োজন করে চট্টগ্রাম একাডেমি সময়োচিত কাজ করেছে। ডা. প্রণব একজন সফল চিকিৎসক। তিনি শিশুদের নিয়ে ৩০টি এবং সব মিলিয়ে ৫০টি বই রচনা করেছেন।

তিনি বলেন, সাফল্য মানুষকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। কিন্তু ডা. প্রণব ভিন্ন। তিনি সাফল্যের পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে সংযোগ ঠিক রেখেছেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শিশুদের খেলার জায়গা নেই। তারা ফ্ল্যাটবন্দি জীবনযাপন করছে। স্কুলের পরিবেশও প্রতিকূলে। কোচিং সেন্টার যেন কনডেম সেল। এরপরও আমরা শিশুদের কাছ থেকে ভালো রেজাল্ট ও সৃজনশীলতা দাবি করছি। অথচ আমরা তাদের মন বোঝার চেষ্টা করছি না।

প্রফেসর রীতা দত্ত বলেন, ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। তিনি তার লেখনীর চলমানতা প্রত্যাশা করে বলেন, ডা. প্রণব চৌধুরী শিশুদের নিয়ে ভাবছেন। সমাজের বড় একটি কাজে  অনন্যসাধারণ অবদান রেখে যাচ্ছেন।

ড. আনোয়ারা আলম শিশুদের নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শিশুরা আজ নানাভাবে নিপীড়িত হচ্ছে। আমরা শিশুদের গিনিপিগ বানাচ্ছি। তাদের মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছি ভোগবাদী পরিবেশ। তাদের ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিচ্ছি। শিশুদের বেড়ে ওঠার  জন্য সহায়ক পরিবেশ দিতে পারছি না। এই সব নিয়ে ডা. প্রণব কুমার তার লেখালেখিতে নানাভাবে বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।