ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নিজের দক্ষতায় বিশ্ব জয় করেছেন নিউরোসার্জন রবিন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৯
নিজের দক্ষতায় বিশ্ব জয় করেছেন নিউরোসার্জন রবিন প্রফেসর ড. রবিনের নাগরিক সংবর্ধনা।

চট্টগ্রাম: নিজের দক্ষতায় বাংলাদেশের সন্তান নিউরো সায়েন্টিস্ট ও সার্জন প্রফেসর ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত রবিন বিশ্বকে জয় করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামালখানের চট্টগ্রাম সিনিয়র্স ক্লাব মিলনায়তনে প্রফেসর ড. রবিনের নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।

মেয়র বলেন, ২০১২ সাল থেকে ড. রবিনকে চট্টগ্রামে আনার চেষ্টা করেছি আমরা। সর্বশেষ তাকে আমরা পেয়েছি।

৮৪ বছর বয়সে চশমা ছাড়া ল্যাপটপ থেকে দেখে বক্তব্য দিয়েছেন। তার কাছ থেকে মাটি, মানুষ ও দেশকে কীভাবে ভালোবাসতে হয় তা শিখতে পারবো। মানুষ যত বড় হয়, প্রতিষ্ঠিত হয় তখন শেকড় ভুলে যায়। অহংবোধ তৈরি হয়। ৬৪ বছর দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। কিন্তু চট্টগ্রামের কথা ভুলে যাননি। শেকড় ভুলে যাওয়া উচিত নয়। নতুন প্রজন্ম তার কাছ থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে।

প্রফেসর ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত রবিন বলেন, আমি চট্টগ্রামের ভূমিপুত্র। আমার প্রতিটি জিন এ মাটি থেকে পেয়েছি। ফতেয়াবাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্রজ সাহার স্মৃতি মনে পড়ে। একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে কর্ণফুলী-এমন সৌন্দর্য বিশ্বের আর কোথাও দেখিনি। আমার জন্মস্থান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সব বন্ধু, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী, ডোনার, সহকর্মীদের ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না।

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বন্দর এ নগর। এটি সম্প্রীতির তীর্থভূমি। সূর্য সেন চট্টগ্রামের সন্তান। বাংলা রক মিউজিকের জন্মভূমি চট্টগ্রাম। ক্রিকেটে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে।

চুয়েটের উপাচার্য রফিকুল আলম বলেন, ড. রবিন চট্টগ্রামের সন্তান, এটি আমাদের জন্য গর্বের। তিনি জন্মস্থানকে ভুলেননি। তিনি মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার জীবন ও কর্ম থেকে আমাদের চিকিৎসকরা অনুপ্রেরণা পাবেন।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ড. রবিনের জ্ঞান ও মেধা বাংলাদেশের স্নায়ু রোগীদের কল্যাণে কাজে লাগাতে চাই সমন্বিত উদ্যোগ। তার মতো গুণীজনেরা সমগ্র বিশ্বের মানবকল্যাণ নিয়ে ভাবেন।

চমেক অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ড. রবিন বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি শিক্ষক, লেখক, সার্জন, গবেষক। তার বই আমরা চমেকের গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ করেছি। আশা করি কলকাতা নিউরোসায়েন্সের সঙ্গে চমেকের একটি চুক্তি হলে জ্ঞান আদান প্রদান সহজতর হবে। তার জ্ঞান আমাদের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারবো।

বক্তব্য দেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ।

উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ, চট্টগ্রাম কলেজ অধ্যক্ষ আবুল হাসান, প্রফেসর ডা. এল এ কাদেরী, ডা. বাসনা মুহুরী, ডা. প্রীতি বড়ুয়া প্রমুখ।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রকৌশলী ঝুলন দাশ।

একনজরে . রবিন

নগরের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের উত্তর ফতেয়াবাদের নন্দীরহাট গ্রামে জন্ম ১৯৩৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ১৯৪৪ সালে নন্দীরহাট শৈলবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষায় হাতেখড়ি। ১৯৫৩ সালে ফতেয়াবাদ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস, ১৯৬৭ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এফআরসিএস, ১৯৭৭ সালে নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০১ সালে ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটি ও ২০০৯ সালে ভারতের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স থেকে ফেলোশিপ করেন।

১৯৭৩ সালে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের নিউ ক্যাসেল জেনারেল হাসপাতালে ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

২০০২ সালে নিউ ক্যাসল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের অপারেশন থিয়েটারের নাম রাখেন দ্য রবিন সেনগুপ্ত থিয়েটার। ২০১২ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির হাত থেকে বিবেকানন্দ সম্মাননা গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে ‘নিউরো সার্জিক্যাল কনট্রিবিউশন অ্যান্ড নিউরো সার্জিক্যাল ডেভেলপমেন্ট’র জন্য ইংল্যান্ডের রানি কর্তৃক প্রিন্স চার্লিস থেকে অফিসার অব দ্য ব্রিটিশ এমপায়ার (ওবিই) গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে দ্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব নিউরো সার্জিক্যাল সোসাইটি থেকে দ্য মেডেল অব অনার দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে কলকাতার মল্লিক বাজারে ১৫০ শয্যার নিউরোলজি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন ড. রবিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।