নগরের আউটার স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আয়োজিত ১৫ দিনব্যাপী মেলার বনসাই ড্রিমসের স্টলের চিত্রটা এমনই।
যেখানে ফাইকাস, তুজা, করমচা, চন্দন, খৈয়া বাবলা, মহুয়া, পাকুড়, বকুল, আমবট, কাঁটালী বট, ঢোল বা টাক বাদাম, অশ্বত্থ, কালো জাম, শিমুল, খিড় খেজুর, সৌদি খেজুর, কতবেল, অর্জুনসহ নানা চেনা-অচেনা গাছের বনসাইয়ের শৈল্পিক প্রদর্শনী চলছে।
আরেকটু কম দামি বনসাইয়ের জন্য যেতে হবে চন্দননগর বনফুর নার্সারির স্টলে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেলাজুড়ে সবুজের সমারোহ। কোথাও চারাগাছে ঝুলছে রসালো আম। কোথাও আবার বারোমাসি আমের চারায় এসেছে মুকুল। মাল্টা, চাইনিজ কমলা, লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, আঙুরসহ রকমারি ফলের চারায় থোকা থোকা ফল ঝুলছে। কেউ কেউ আলতো ছুঁয়ে দিচ্ছেন। যদিও স্টলের কর্মচারী কড়া নজর রাখছে।
ফলের পাশাপাশি ফুলের সৌরভও মুগ্ধ করার মতো। জবা, কাঠগোলাপ, হাজার বুটিয়া, নয়নতারা, মাধবী, বাগানবিলাসসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফুল, পাতাবাহারের চারা বিক্রি হচ্ছে বেশ।
নিউ কসমো নার্সারির মো. ফারুক বলেন, তিন ধরনের ফলদ, বনজ, ওষুধি গাছের চারা আছে-পলিব্যাগ, টব ও ড্রামে। ড্রামের চারাই সবচেয়ে দামি। ড্রাগন ফলের চারা ১০০ থেকে ১০ হাজার টাকা, আপেল ৫০০ টাকা, স্ট্রবেরি পেয়ারা ৫০০ টাকা, অ্যাভাগাডো ৫০০ টাকা, ম্যাঙ্গো স্টিক ৫০০ টাকা। থাই আমলকী ৩০০ টাকা, চেরি ৩০০ টাকা, ভিয়েতনামের কাঁঠালের চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। আমাদের কাছে পাবেন চায়না, নাগপুরি কমলা, মিষ্টি জলপাই, থাই সাদা জামসহ বেশ কিছু ফুল আর ফলের চারা। সর্বনিম্ন ১০ টাকায় ফুল, পাতাবাহারের চারা বিক্রি করছি মেলায়।
বাহাদুর নার্সারির আবুল হোসেন জানান, ভারতের লাল শরিফার চারা ফলসহ ৩ হাজার টাকা। ভারতের লাল জবা ১৫০ থেকে দেড় হাজার টাকা। ৮ ফুট উঁচু সাদা চন্দনের চারা বিক্রি করছি দেড় লাখ টাকায়।
চিটাগাং নার্সারির মো. ইলিয়াস বলেন, প্রতিদিন নতুন নতুন গাছের চারা আসছে মেলায়। এটা চাহিদার ওপর নির্ভর করছে। নার্সারিতে হাজারো চারা থেকে সামান্য কিছু এখানে ডিসপ্লে করার সুযোগ রয়েছে।
ফতেয়াবাদ নার্সারিতে মিলছে সুইট লেবুর চারা। ফলসহ প্রতিটি ২ হাজার ৫০০ টাকা। চায়না লেবুর চারা ২০০-২৫০ টাকা।
পুষ্প নার্সারির মো. আলমগীর জানান, ভালো চারা দিয়ে থাকি আমরা। তাই আস্থা অর্জন করতে পেরেছি ক্রেতাদের। এখন চট্টগ্রামে প্রচুর বাড়ির মালিক ছাদবাগান করছেন। দিন দিন চাহিদাও বাড়ছে।
পুষ্প কলি নার্সারির মো. এনাম জানান, মাল্টাসহ চারা ৩ হাজার টাকা, ছাতকের কমলার চারা ২ হাজার ৫০০ টাকা।
মেলায় গৃহিণীরা বেশি কিনছেন মসলা জাতীয় গাছের চারা। সবুজ বিপ্লব নার্সারির আশরাফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, লং, এলাচি, গোলমরিচ, দারুচিনি, কারি পাতা, লেমন পাতা (স্যুপ তৈরির উপকরণ), মিক্স মসলা, পোলাও পাতার চাহিদা বেশি। যশোর, বগুড়া, ঢাকা, রংপুর থেকে এসব চারা আনছি আমরা।
তিনি জানান, মিশরের ডুমুর চারা ২ হাজার, মিষ্টি চেরি ১ হাজার ২০০ টাকা, লাল পোনাই আম ২৫০ টাকা, ডগমাই ৩০০ টাকা, থাই কাঁচা মিঠা ২৫০ টাকা, কাঠিমন আমের চারা ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একসময় টব ও বড় ড্রাম কেটে অর্ধেক করে চারা লাগানো হতো জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ৮ থেকে ২০ ইঞ্চির টবের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ছোট, মাঝারি কেমিক্যালের ড্রাম, রঙের ড্রামেও চারা লাগানো হচ্ছে।
মেলায় উপহার দেওয়ার জন্য কিংবা টেবিলে সাজানোর জন্য আরণ্যক নার্সারির স্টলে পাওয়া যাচ্ছে সুদৃশ্য বাটিতে পাথরসহ সাজানো কিছু গাছের চারা। এর মধ্যে লাঠি ব্যাম্বু ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ক্যাকটাস ৪০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় মিলছে।
লালখান বাজারের বাসিন্দা আনোয়ারুল খায়ের সপরিবারে মেলায় এসেছে ঘুরতে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শহরের বাসায় তো গাছ লাগানোর জায়গা নেই। তারপরও সন্তানদের ফুল-ফলের সঙ্গে পরিচয় করাতেই মেলায় এসেছি। অনেক ফুলের নাম জানে তারা কিন্তু চেনে না। এখানে এসে তারা বেশ সানন্দেই প্রকৃতির কাছাকাছি আসতে পেরেছে।
মেলায় মো. আমিনুল ইসলামের স্টলে পাওয়া যাবে সুন্দরবনের মধু আর কালোজিরার তেল। প্রতিকেজি মধু ১ হাজার টাকা, ১৫০ গ্রাম ১৮০ টাকা। আচার খেতে যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য আছে সিরাজ ভাইয়ের পঞ্চরসের আচারের স্টল। জিভে জল আনা সব আচারে সাজানো হয়েছে স্টলটি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
এআর/এসি/টিসি