ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ত্রিপুরাপাড়ার শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন ডিসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
ত্রিপুরাপাড়ার শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন ডিসি বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।

চট্টগ্রাম: হাটহাজারীর দুর্গম এলাকা মনাই ত্রিপুরাপাড়ায় বসবাসরত শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ইলিয়াস হোসেন।

শনিবার (২৪ আগস্ট) ত্রিপুরাপাড়ার শিশুদের হাতে জেলা প্রশাসক প্রাথমিক শিক্ষা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনায় আগ্রহী করতে দেশে প্রথমবারের মতো এ বৃত্তি চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

অনুষ্ঠানে মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, কোনো জনগোষ্ঠীকে অবহেলিত রেখে কোনো জাতি উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে পারে না। সুবিধাবঞ্চিত মনাই ত্রিপুরাপাড়ার শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব আমি নিজে নিলাম।

‘টাকা পয়সার অভাবে যেনো তাদের পড়াশোনা বন্ধ না হয়- সেদিকে আমরা দৃষ্টি রাখবো। তাদের পড়াশোনার জন্য সব ধরনের সহায়তা দেবো। ’

শিশুদের হাতে বৃত্তির নগদ টাকা এবং চকলেট তুলে দেন মো. ইলিয়াস হোসেন।

মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রামকে শহরে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছেন। প্রায় ১০০ বছরের পুরনো দুর্গম এলাকা ত্রিপুরাপাড়াকে কীভাবে আরও আধুনিক সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা যায়- তা নিয়ে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।

তিনি বলেন, আগে এখানে যাতায়াতের কোনো সড়ক ছিলো না। এখন চলাচলের উপযোগি সড়ক তৈরি করা হয়েছে। সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ, জনস্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে স্কুল তৈরি করা হয়েছে।

‘এসব উদ্যোগ সুবিধাবঞ্চিত এ জনগোষ্ঠীকে নতুন পথ দেখাবে। জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সহায়তা করবে। ’

ত্রিপুরাপাড়ার শিশুদের জন্য স্কুলের পাশে একটি খেলার মাঠ তৈরি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন জেলা প্রশাসক। শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি খেলাধূলায় তাদের উৎসাহ দিতে অভিভাবকদের আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে ৬০জন শিক্ষার্থীর মাঝে জেলা প্রশাসক প্রাথমিক শিক্ষা বৃত্তির আর্থিক অনুদান এবং চকলেট বিতরণ করা হয়।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সম্রাট খীসা, জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার রাজিব হোসেন প্রমুখ।

ত্রিপুরাপাড়ার শিশুদের জন্য নির্মিত স্কুলের শিক্ষাকার্যক্রম দেখছেন ইউএনও মো. রুহুল আমিন।

২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট ফরহাদাবাদ এলাকার ত্রিপুরাপাড়ায় অজ্ঞাত রোগে চার শিশু মারা যায়। এরপর থেকে আলোচনায় আসে দুর্গম এ এলাকায় নাগরিক জীবন বলতে কিছু না থাকার নানা তথ্য।

ওই বছরের সেপ্টেম্বরে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে যোগ দেন বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন। দায়িত্ব নেয়ার পর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ত্রিপুরাপাড়ার উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রকল্প হাতে নেন তিনি।  

প্রধান সড়ক থেকে ত্রিপুরা পাড়ায় যাওয়ার পথ দুই কিলোমিটারের আইলকে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে উন্নীত করা হয় ১৫ফুট প্রস্থের সড়কে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অর্থায়নে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয় তিনটি গভীর নলকূপ। চালু করা হয় মন্দিরভিত্তিক স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম এবং সৌর বিদ্যুতের।

চলতি বছরের জুনে অনগ্রসর ত্রিপুরাপাড়ার শিশুদের পড়াশোনার জন্য বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। নির্মাণ করা হয় সেমিপাকা ভবন। নিয়োগ দেওয়া হয় শিক্ষক। প্রায় শত বছর ধরে শিক্ষার মূলস্রোত থেকে বঞ্চিত ত্রিপুরাপাড়ার শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বশেষ উদ্যোগ জেলা প্রশাসক প্রাথমিক শিক্ষা বৃত্তি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।