ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাড়ছে ডিজিটাল স্কেল, কমছে বাটখারা

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
বাড়ছে ডিজিটাল স্কেল, কমছে বাটখারা

চট্টগ্রাম: ওজন পরিমাপে কাঠ বা লোহার মানদণ্ডের পুরোনো দাঁড়িপাল্লা ও বাটখারা দুটোই কমছে। ক্রমে জায়গা করে নিচ্ছে ডিজিটাল স্কেল। এর ফলে ওজন ও দাম নিয়ে স্বস্তি ফিরছে ক্রেতাদের। তবে এ ধরনের স্কেলে বৈদ্যুতিক চার্জ কমে গেলে কিংবা চার্জার ডিস্টার্ব করলে সঠিক ওজন ও মোট মূল্যে হেরফের হয়ে থাকে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মুদি দোকান, মাছ-মাংসের দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাতের সবজি বিক্রেতার কাছেও দিন দিন ডিজিটাল স্কেলের ব্যবহার বাড়ছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গরিব বিক্রেতা ডিজিটাল স্কেল কেনার পুঁজি না থাকায় কিংবা অসাধু ব্যবসায়ীরা ওজনে কারচুপির জন্য এখনো বাটখারা ব্যবহার করছেন।

কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি আবদুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, তিন বছর আগে ২ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে ২০ কেজির ডিজিটাল স্কেলটি কিনেছি। এখনো ভালো সার্ভিস দিচ্ছে।

কোনো সময় চার্জার ডিস্টার্ব করলে নতুন চার্জার লাগিয়ে দিই। এ ছাড়া ৩ ঘণ্টা চার্জ দিলে দুই দিন চার্জ দিতে হয় না।

তিনি বলেন, ডিজিটাল স্কেলের ক্ষেত্রে এককালীন পুঁজি বেশি লাগলেও ক্রেতাদের কাছে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। সঠিক ওজন ও মোট দাম চোখের পলকে জানা যায়। এতে

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মাজহারুল হক বাংলানিউজকে জানান, ২০১৮-১৯ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার হাট-বাজার ও মুদি দোকানের ৪০ হাজার ৯২০টি বাটখারা পরীক্ষা করেছি আমরা। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ৪৮ হাজার ৬০৮টি।   অন্য দিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যেখানে ডিজিটাল স্কেল পরীক্ষা করেছি ৫ হাজার ৮৯৮টি সেখানে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৩৫টি।

তিনি জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিন স্কেল (লোহার দণ্ডের) ৪ হাজার ৪৯৫টি এবং আমদানি করা নতুন ২৩ হাজার ৬টি ডিজিটাল স্কেল পরীক্ষা করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে যা ছিল যথাক্রমে ৪ হাজার ৬২৬টি ও ২৪ হাজার ৯৯৩টি।

বিএসটিআই’র পরিদর্শক (মেট্রোলজি) মোহাম্মদ মামুনুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বছরে একবার ওজন যন্ত্র বা বাটখারা বিএসটিআইয়ের কার্যালয়ে এনে কিংবা বিএসটিআইয়ের বাজার পরিদর্শনের সময় পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রতিটি বাটখারা পরীক্ষায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা ফি দিতে হয়। ৫০ কেজি পর্যন্ত ডিজিটাল স্কেলে এ ফি ২০০ টাকা, ২০১ থেকে ৫০০ কেজির স্কেলের জন্য ৩০০ টাকা। লোহার তৈরি বাটখারা পুরোনো হলে মরিচা পড়ে, আঘাতজনিত কারণে ক্ষয় হয়ে কিংবা অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বাটখারার পেছনের অংশে গর্ত করায় ওজন কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে ভোক্তারা প্রতারিত কিংবা ঠকার আশঙ্কা থাকে।

তিনি জানান, আইন অনুযায়ী বছরে একবার বাটখারা বিএসটিআইয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা (ভেরিফিকেশন) না করলে দোকানিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওজনে কারচুপি করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানা ও ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাটখারা ব্যবহারে ভোক্তাদের ঠকানোর আশঙ্কা বেশি। তাই আমরা চাই বাটখারা, সনাতনী দাঁড়িপাল্লাগুলোর স্থান হোক জাদুঘরে। পাশাপাশি ডিজিটাল স্কেলেও যাতে কোনো ধরনের টেম্পারিংয়ের সুযোগ না থাকে, নিম্নমানের ডিজিটাল স্কেল তৈরি বা আমদানি না হয় সেদিকেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বিএসটিআই, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার নজরদারি বাড়াতে হবে।  

বিএসটিআই চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহমদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে ক্রমে বাটখারার পরিবর্তে ডিজিটাল ওজন স্কেলের ব্যবহার বাড়ছে। বিষয়টিকে আমরা উৎসাহিত করছি। পাশাপাশি বিএসটিআইয়ের যে দায়িত্ব তা পালনেও আমরা সচেষ্ট। এক্ষেত্রে ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। মাছ, মুরগি, মাংসসহ দামি ভোগ্যপণ্য কেনার পর কৌতূহল বশত পাশের দোকানে বা পরিচিত দোকানে পুনরায় ওজন করে পরীক্ষা করলে কারচুপির বিষয়টি ধরা পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।