ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গানেই মেলে যে দৃষ্টিহীনের অন্ন

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
গানেই মেলে যে দৃষ্টিহীনের অন্ন গান গাইছেন অন্ন দাস। ছবি: বাংলানিউজ

বান্দরবান থেকে ফিরে: পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট ছোট বাঁক পেরিয়ে গাড়ি পৌঁছালো বান্দরবান শহরের সবচেয়ে কাছের উঁচু পাহাড় নীলাচলের সামনে। গাড়ি থেকে নামতেই মেঘের হিমেল পরশ, বাউল গানের মন জুড়ানো সুর।

উঁচু পাহাড়ে মেঘের দেখা- এসব জানা কথা। কিন্তু এতো উঁচু পাহাড়ে ঢোলের তালে তালে বাউল গান কে গাইছে? মনের মাঝে এমন প্রশ্ন নিয়ে নীলাচলে উঠার প্রবেশ পথে আসতেই মিললো উত্তর।

পায়ে ছেঁড়া সেন্ডেল, গায়ে মলিন কাপড় জড়িয়ে শ্যাম রঙের এক লোক গাইছেন দারুণ জনপ্রিয় বাউল গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’। আর তাকে ঘিরে গানের সুরে সুরে ঠোঁট মেলাচ্ছেন ঘুরতে আসা পর্যটক।

গানে মুগ্ধ হয়ে কেউ তুলছেন সেলফি, কেউ পকেটে গুঁজিয়ে দিচ্ছেন টাকা। তবে এসবে মন নেই পঞ্চাশোর্ধ্ব লোকটির। এক নাগাড়ে গেয়ে চলেছেন- বন্দে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে, আমি যারে ভালোবাসি, আমি তোর পিরিতির মরা সহ দারুণ সব জনপ্রিয় বাউল গান।

গান গাইছেন অন্ন দাস।  ছবি: বাংলানিউজ

ভিড় একটু কমতেই কথা হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এ শিল্পীর সঙ্গে। কথায় কথায় জানা গেলো- নাম অন্ন দাস। বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার সাঙ্গু নদীর তীরে ধর্মপুর এলাকায়।

অন্ন দাস বাংলানিউজকে বলেন, সাঙ্গুর ভাঙনে ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন বাজারে বাউল গান গাইতে শুরু করি। একদিন এক লোক বললেন, নীলাচলে প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসে। সেখানে গান গেয়ে শোনালে লোকে ৫-১০ টাকার কম দেবে না।

আরও খবর>>
** 
হাত বাড়ালেই মেঘ!

‘সেই থেকে এখানে আসা। কারও কাছে টাকা চাই না। গান শুনে খুশি মনে যে যা দেয় তা দিয়েই সংসার চালাই। পর্যটন মৌসুমে গান গেয়ে দিনে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পাই। ’

রেডিও, টেলিভিশনে গান শুনে শুনেই অন্ন দাসের গান শেখা। অনেক সময় পর্যটকদের কেউ কেউ তাদের পছন্দের কোনো গান শুনতে চান। পারলে গেয়ে শোনান। না পারলে অন্ন দাস বলে দেন, তিনি ওই গান গাইতে পারেন না।

অন্ন দাসের বয়স যখন চার, তখন দেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে। পরিবারের অন্য লোকজনের সঙ্গে তিনিও আশ্রয় নেন ভারতে। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু চিকিৎসা না পাওয়ায় আস্তে আস্তে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায় তার।

তবে চোখের দৃষ্টি হারালেও মনের দৃষ্টি হারাননি অন্ন দাস। ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা হাত না পেতে নিজের চেষ্টায় কিছু করতে চেয়েছেন সংগ্রামী মানুষটি। বাঙালির প্রাণের সুরে গাওয়া বাউল গান গেয়েই নিজের, পরিবারের চার সদস্যের মুখে অন্ন দাস তুলে দিচ্ছেন অন্ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।