ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

তিনটি মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা চসিকের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
তিনটি মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা চসিকের প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: নগরের কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ২৬ কিলোমিটার (কিমি), সিটি গেট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিমি এবং অক্সিজেন থেকে একে খান বাস স্টপ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কিমি এমআরটি (মেট্রোরেল) লাইন চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

সাড়ে ৫৪ কিমির তিনটি লাইনে ৪৭টি স্টেশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। একেকটি স্টেশনের দূরত্ব হবে ৭০০ মিটার থেকে ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার।

ঘণ্টায় ৪৫ কিমি গড় গতিবেগ থাকবে মেট্রোরেলের। ২০ কিমি দীর্ঘ এমআরটির মাধ্যমে ঘণ্টায় দুই প্রান্তে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) চসিকের সম্মেলন কক্ষে বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টস লিমিটেড নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অধীনে বুয়েটের ড. সোহরাব উদ্দিন, ড. এম আজাদুর রহমান, মো. মাহবুবুল আলমসহ ২৫ জনের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টিম ম্যাস রেপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) প্রাক-যোগ্যতা সমীক্ষা (প্রি-ফিজিবিলিটি) প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে আসে।

ডেপুটি টিম লিডার মাহবুবুর রহমান তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম দোভাষ।

ম্যাস রেপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) প্রাক-যোগ্যতা সমীক্ষা নিয়ে সভা

প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, চট্টগ্রামের জন্য এমআরটি দরকার এ বিষয়ে দ্বিমত নেই। মেয়রের সাহসী উদ্যোগ। চট্টগ্রাম এক রাস্তার শহর। হুকুম দখল, ইউটিলিটির লাইন সরানো কঠিন ও ব্যয়বহুল। তাই ৫০০ মিটার দূরে নতুন লাইনের পরিকল্পনা নিতে পারতেন।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে চ্যালেঞ্জে আছে। বে টার্মিনাল করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এবারের মতো জলাবদ্ধতা ও যানজট জীবনে দেখিনি। তাই এমআরটি লাইন নির্বাচনে গভীরভাবে ভাবতে হবে। এটি স্বপ্নের প্রকল্প, এর বিকল্প নেই। মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের চিন্তা করে, ৫০-১০০ বছর ব্যবহার উপযোগী এমআরটির পরিকল্পনা করতে হবে। চট্টগ্রাম শহরকে বাঁচাতে হলে চসিক-সিডিএর সমন্বয় জরুরি।

প্রকৌশলী মো. হারুন বলেন, চট্টগ্রামের মহাপরিকল্পনা শেষ হচ্ছে। নতুন মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন। এমআরটির প্রস্তাবনায় চট্টগ্রাম শহরকে ছোট আকারে চিন্তা করা হয়েছে। বড় পরিসরে চিন্তা করলে উদ্যোগ আরও ফলপ্রসূ হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণ করা উচিত।

চুয়েটের ভিসি রফিকুল আলম বলেন, ভিশন হতে হবে দূরদর্শী। নগরের আয়তন বাড়বে। ২০৪১ সালের চট্টগ্রাম কেমন হবে সেই দূরদর্শিতা থাকতে হবে।

স্থপতি সোহেল শাকুর বলেন, এমআরটি আধুনিক ব্যবস্থা। সঠিকভাবে না বুঝে করলে অর্থ অপচয়ের আশঙ্কা আছে।

স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ২০ লাখ জনসংখ্যার শহরে মেট্রো অপরিহার্য। চট্টগ্রামে ৬৫ লাখ জনসংখ্যা। ইকোনমিক জোনগুলো সংযুক্ত রাখতে হবে। সিডিএ ২০৪১ সালের আলোকে মাস্টারপ্ল্যান করতে যাচ্ছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে এমআরটি হওয়া উচিত। পটিয়া, রাউজান, হাটহাজারীকে এমআরটির সুবিধা দিতে হবে।

প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামের একজন মেয়র এমআরটি নিয়ে ভাবছেন সে জন্য ধন্যবাদ জানাতেই হয়। আরও অনেক স্টাডি লাগবে। বন্দরকে বাদ দিয়ে কিছু করা যাবে না চট্টগ্রামে। পুরো দেশের জন্য চট্টগ্রামকে বাঁচাতে হবে। বে টার্মিনাল হলে বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা সড়ক ফ্রি হয়ে যাবে। বন্দরের প্ল্যানিং জানতে হবে। অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আইএসপিএস কোড মানলে বন্দরের ওপর দিয়ে ফ্লাইওভার করা যাবে না। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমআরটির কানেকটিভিটি বাড়াতে হবে। বাস্তবায়নে যাতে ওভারলেপিং না হয়।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিধান রায় বলেন, চট্টগ্রামে আমি এমআরটি চাই। এটি সাহসী পদক্ষেপ। ২০ কিমিতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী দরকার। এমআরটি চালু হলে নগরে গাড়ি চলাচল কমে যাবে। এমআরটির বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে হাটহাজারী, মিরসরাইকে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রাখতে হবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বলেন, সিডিএ-চসিকের সমন্বয় নেই এ রকম শুনি। কিন্তু আজ দুই সংস্থার প্রধানকে একসঙ্গে দেখে খুব খুশি হয়েছি। এমআরটির বিষয়ে সত্যিকার ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। অবশ্যই বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদি ইউটিলিটি সরানোর অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে।

চসিকের প্রধান পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিম বলেন, এমআরটি হতে হবে সমন্বিত। উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়, সাগর, নদীর ক্ষতি করা যাবে না।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ফ্লাইওভার ও এমআরটি দুটোই দরকার। এর জন্য সমন্বয় দরকার। ঢাকায় এমআরটি কর্তৃপক্ষ করেছে। ৫০-১০০ বছরের যাত্রীর চাপ বিবেচনা করতে হবে। নগর সম্প্রসারণের বিষয় ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।