ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

এসি থেকেই যত আগুন চমেক হাসপাতালে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯
এসি থেকেই যত আগুন চমেক হাসপাতালে ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন মাসের ব্যবধানে তৃতীয়বারের মতো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নিচতলায় একটি অস্থায়ী স্টোররুমে আগুন লাগে।

শর্ট সার্কিট থেকে সূত্রপাত হওয়া আগুনে হাসপাতালে প্রচুর ধোঁয়া সৃষ্টি হয়। গতিবেগ বেশি থাকায় ধোঁয়া মুহুর্তে উপরে উঠে যায়।

আগুনের তীব্রতার কারণে দেয়ালের পলেস্তারও খসে পড়ে।

এর আগে ২০ মে রাত সাড়ে আটটার দিকে ছয় তলার ৩২ নম্বর নবজাতক পরিচর্যা বিভাগে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

যেখানে ঠাসাঠাসি করে বাচ্চাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৩০ এপ্রিল সকালে চতুর্থ তলায় ২১ নম্বর ওয়ার্ডে একটি অস্ত্রোপচার কক্ষে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

তিনটি ঘটনায় এয়ার কন্ডিশনার (এসি) শর্ট সার্কিট থেকে। তবে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে ছোটাছুটি করতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন। পাশাপাশি হাসপাতাল জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

এর আগে ২০১৪ সালে মার্চে এসির শর্ট সার্কিট থেকে হৃদরোগ বিভাগের এনজিওগ্রাম মেশিনের কন্ট্রোল রুমে আগুন লাগে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, চমেক হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব তো রয়েছে। ফলে অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে হাসপাতালটি। আগুন লাগলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, এ হাসপাতালের প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নেন। জরুরি বিভাগে ভর্তি হন ৭শ থেকে এক হাজার রোগী। হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন আড়াই থেকে তিন হাজার। এসব রোগীর সঙ্গে কয়েক হাজার স্বজন হাসপাতালে অবস্থান করেন।

এ ছাড়া হাসপাতালের রেডিওলোজি, কার্ডিওলজি, রেডিওথেরাপিসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে এমআরআই, সিটি স্ক্যান, এনজিওগ্রাম, রেডিওথেরাপির মতো গুরুত্বপূর্ণ মেশিন রয়েছে। যেগুলোর মূল্য কোটি কোটি টাকা।

৭ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে সিড়ি রয়েছে তিনটি। একাধিক লিফট থাকলেও অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ মানুষ হাসপাতালে অবস্থান করে। ফলে আগুন লাগলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসি থেকে কেন বার বার আগুন?

গণপূর্ত বিভাগ চট্টগ্রামের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে হাসপাতালে ৬০০টি এসি আছে। এর মধ্যে ৪০০টি এসি গণপূর্ত বিভাগের। বাকিগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়া। এর মধ্যে প্রায় ১০০টি এসি অনেক পুরানো, যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। হাসপাতালের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটিও মেরামত হয়নি দুই দশক ধরে।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ময়নুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া তিনটি অগ্নিকাণ্ড এসি থেকে। এসিগুলো দীর্ঘক্ষণ চালুর কারণে প্রচণ্ড গরম হয়ে আগুন লেগেছে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে এমন অনেক এসি স্থাপন করা হয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা জানি না।

‘আমরা যে এসিগুলো স্থাপন করেছি সেগুলো নিয়ম মেনে। কিন্তু অনুদানে বা নিজ উদ্যোগে এসি স্থাপনে নিয়ম মানা হয়নি। অনেকসময় লাইটের সংযোগ থেকে এসির সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি একটি সংযোগ থেকে একাধিক এসির সংযোগও দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া এসিগুলো নির্দিষ্ট সময়ে চালু-বন্ধ করা হয় না। ’

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর হাসপাতালের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন মেরামত করা হয়েছে একবার। লাইনটি বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী ক্ষমতা সম্পন্ন নয়। এজন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন লাইন স্থাপন জরুরি। ’

এসএম ময়নুল হক বলেন, ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন মেরামত ও নিয়ম মেনে এসি স্থাপনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

যেসব এসি নষ্ট সেগুলো পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘক্ষণ এসি চালুর ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে অনেক সময় এমনটা হচ্ছে।

‘অকেজো কিছু এসি রয়েছে সেগুলো পরিবর্তনে বরাদ্দের জন্য চিঠি দিয়েছি। তবে এখনো বরাদ্দ মেলেনি। পাশাপাশি সঞ্চালন লাইন নতুন করে স্থাপনা করা হচ্ছে। একটির কাজও শেষ হয়েছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ এসি চালু না রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। ’

ফায়ার সার্ভিস যা বলেছে

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা যায়, আগুন লাগার পাঁচ মিনিটের মধ্যে নেভানো গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত কর্মী প্রয়োজন।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দি বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে মঙ্গলবারের ঘটনায় প্রচুর ধোঁয়া সৃষ্টি হয়। আগুনের তীব্রতার কারণে দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ে। তবে অবস্থানকারীদের সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটি পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। তবে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে ফায়ার সেফটি প্ল্যানের পাশাপাশি পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও প্রশিক্ষিত কর্মী লাগবে। এ ছাড়া উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯
এসইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।