কোয়ান্টাম আর্ক প্রযুক্তির এ কারখানায় আমদানি করা স্ক্র্যাপ থেকে সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে সরাসরি বছরে ১ মিলিয়ন টন বিলেট, রড, এঙ্গেল তৈরি হবে। ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে অত্যাধুনিক এ কারখানার।
রোববার (২১ জুলাই) সীতাকুণ্ডের কারখানা প্রাঙ্গণে তিনি এসব তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জিপিএইচ গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল।
তিনি জানান, ১ টন ইস্পাত পণ্য তৈরিতে খরচ হবে ৩১০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। যেখানে দেশে বর্তমানে ১ টনে ৫৫০-৬৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ পড়ছে।
শুধু বিদ্যুৎ নয় গ্যাসও সাশ্রয় হবে। ১ টনে ৩৫ কিউবিক মিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। যা বার্ষিক হিসাবে ৩৭ হাজার পরিবারের গ্যাসের চাহিদার সমান। এ ছাড়া পরিবহন খাতে ২ শতাংশ কমাতে পারবো। বছরে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে ১১১ মিলিয়ন ডলার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে ৮ হাজার ৮৫০ জনের। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে ৩ হাজার ৫০০ জনের। সরকারকে বছরে রাজস্ব দেবে ২২৬ কোটি টাকা।
শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছে
দেশের অর্থনীতিকে তিন ধরনের শ্রমিকরা স্থিতিশীল রেখেছেন উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা এ খাতকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সেলাই খাতে মজুরিটা বৈদেশিক মুদ্রায় আসে। প্রবাসী শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে পাঠায় বৈদেশিক মুদ্রা। তারা ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে থাকে, কঠোর পরিশ্রম করে। পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্য পায় না। যারা উচ্চশিক্ষিত বিদেশে থাকেন তারা পাঠান হাতে গোনার মতো, তারা পারলে দেশের জায়গা জমি বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যান। এটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। কৃষি শ্রমিকরা পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়ে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রেখেছে।
শিল্পোদ্যোক্তাদের দায়িত্ব হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার সদ্ব্যবহার করে শিল্পায়ন। ডলার না থাকলে তো কাঁচামাল ও মেশিনারি আমদানি করা যেতো না। দেশের ৯৫-৯৮ শতাংশ প্রথম প্রজন্মের শিল্পোদ্যোক্তা। অল্প কিছু আছেন দ্বিতীয় প্রজন্ম, উত্তরাধিকার সূত্রে শিল্পোদ্যোক্তা। ঝুঁকি নিয়ে মেধাবী প্রজন্ম বিনিয়োগ করছে। সেকেলে কারখানা দিয়ে বিশ্বে টিকে থাকার দিন শেষ। আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে ভবিষ্যতের কথা। ২০-৫০ বছর পর শিল্প বিকাশে বৈশ্বিক পরিস্থিতি কী হবে। আমরা যে ঝুঁকি নিয়েছি তা কেউ না কেউ নিতেন।
তিনি বলেন, আমাদের মাথাপিছু ইস্পাত ভোগের পরিমাণ ৩৫-৩৭ কেজি। ভারতে ৬০ কেজি। থাইল্যান্ডে ২৫০ কেজি। চীন-জাপানে ৪০০-৫০০ কেজি। বিশ্বে গড় চাহিদা মাথাপিছু ২২০-২২৫ কেজি। দেশে যে হারে শিল্প বিকাশ হচ্ছে, অর্থনীতি বড় হচ্ছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। তাতে ইস্পাতের চাহিদা বাড়তেই থাকবে। তাই উৎপাদনও বাড়াতে হবে।
আমাদের ১৭ কোটি জনসংখ্যা। কিন্তু আয়তনে ছোট। ৪-৫ কোটি মানুষ হলে আদর্শ হতো। প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস ছিল, এখন ফুরিয়ে আসছে। জনসংখ্যা কম হলে আরও অনেক বছর চাহিদা পূরণ করা যেতো। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। বর্তমান সরকারও সেটি চায়। অপরিকল্পিত বাড়িঘর, কারখানা করলে কৃষি জমি নষ্ট হবে। তাই ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করতে হবে ভবন। একটি ভবনে বেশি মানুষের বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। নির্মাণ করতে হবে অনেক ফ্লাইওভার, সেতু, বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। দুর্যোগের সময় যদি হাসপাতাল ধসে পড়ে তাহলে মানুষ কোথায় যাবে? তাই নির্মাণ উপকরণের মানের প্রশ্নে আপস করা যাবে না।
সঠিকভাবে শিক্ষা দেওয়া গেলে, জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত হবে। আমাদের ১৫-৩৫ বছরের মানুষ বেশি। তাদের সম্পদে পরিণত করতে হবে। এসব বিবেচনা করে আমরা বড়, আধুনিক কারখানা করার উদ্যোগ নিয়েছি। একটি অভিজ্ঞতা আছে, সিমেন্ট কারখানায় ধাপে ধাপে উৎপাদন বাড়ানোর কারণে আমরা মার্কেট শেয়ার বাড়াতে পারিনি। এটি এমন ব্যাপার, যাদের মার্কেট শেয়ার বেশি তাদের বের করে দেওয়া কঠিন।
প্রযুক্তিতে আমরা এগিয়ে থাকবো এ চিন্তা থেকে উৎপাদনে আসিনি। আমাদের চিন্তা ছিল উৎপাদন খরচ কমিয়ে শতভাগ মানসম্পন্ন ইস্পাত তৈরি করা। আগের পদ্ধতিতে ১ টন স্ক্র্যাপে ৯৩০-৯৪০ কেজি ইস্পাত পাই। নতুন কারখানায় ৯০০ কেজি ইস্পাত পাবো। কারণ অক্সিজেন ব্যবহার করে স্লাগ ফেলে দেওয়া হয়।
বৃষ্টির পানিই প্রাথমিক ভরসা
জিপিএইচের নতুন কারখানায় ৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে পানি শোধনাগারে। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে প্রতি ফোঁটা পুনঃ পুনঃ ব্যবহৃত হবে কারখানাটিতে। সীতাকুণ্ডের পানি সংকটের কারণে ভারী শিল্প কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে গড়ে উঠেনি উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানে প্রচুর ছড়া আছে। ছড়ার মুখে সাগরের নোনা পানি না ঢোকার জন্য স্লুইসগেট আছে। যদি বৃষ্টির পানি ছড়ায় ধরে রাখা যায় তবে অনেক নৌপথের সৃষ্টি হবে। পাহাড়ে উৎপাদিত ফল ও সবজি সহজে বাজারজাত করা যাবে। বিকশিত হবে পর্যটন শিল্পেরও।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৯
এআর/টিসি