ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যানজট

সঠিকভাবে গড়ে উঠেনি চট্টগ্রাম, বিকল্প সড়কও হয়নি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
সঠিকভাবে গড়ে উঠেনি চট্টগ্রাম, বিকল্প সড়কও হয়নি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যানজট নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজন

চট্টগ্রাম: বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম নগর যেভাবে গড়ে উঠা দরকার ছিল ঠিক সেভাবে গড়ে উঠেনি বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ।

তিনি বলেন, একটি শহরের যাতায়াতের জন্য প্রধান সড়কের পাশাপশি দুই-তিনটি বিকল্প সড়ক থাকা দরকার কিন্তু চট্টগ্রামে শুধু একটিই প্রধান সড়ক। বিকল্প সড়ক সেভাবে নির্মিত হয়নি।

যে কারণে বন্দর কেন্দ্রিক যানজট হচ্ছে। বন্দরকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি নগরে প্রবেশ করছে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই যানজটের সৃষ্টি হয়।

গত কয়েকদিনের ভয়াবহ যানজটের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায়ী নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, নগরে বিভিন্ন ভাবে সেবা সংস্থাগুলো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তা ছাড়া বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। এটাও যানজটের অন্যতম কারণ।

বে-টার্মিনালের প্রথম ধাপের নির্মাণকাজ চলছে উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বে টার্মিনালে ডেলিভারি ইয়ার্ড ও অত্যাধুনিক ট্রাক টার্মিনাল নির্মিত হবে। ফলে চট্টগ্রাম শহরে ট্রাকের যে যানজট সেটা আর হবে না। এ ছাড়া বন্দরের অর্থায়নে আগামী দুই বছরের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর ফলে সরাসরি মূল সড়ক বাদ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে বন্দরগামী গাড়িগুলো বন্দরে চলাচল করতে পারবে। ফলে জনদুর্ভোগ লাঘব হবে। চালু করা হবে ওয়াটার বাস বা প্যাসেঞ্জার শিপ।

বুধবার (১৭ জুলাই) বন্দর ও বিমানবন্দরমুখী সড়কে তীব্র যানজট থেকে এলাকাবাসীকে মুক্তি দিতে বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন দেখা করতে গেলে এসব কথা বলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ।

সুজন বলেন, আমাদের বাপ দাদার ভিটে মাটির ওপর চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্ঠিত। ভৌগোলিক কারণে এখানে চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বন্দর প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে এক যুগান্তকারী সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বন্দরের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আগামীতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নেবে চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরের আশাতীত সাফল্যে আমরা সবাই গর্বিত। তবে অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই যে, বন্দরের কারণে জায়গা জমি হারিয়ে আমরা এখন নিজভূমে পরবাসী। বন্দর কেন্দ্রিক যানজটের কারণে এ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা এবং অবকাঠামো নির্মাণের কারণে আমরা এখন জলাবদ্ধতার শিকার। বিভিন্ন এলাকায় পানি নিষ্কাশনের যে খালগুলো আগে ছিল বন্দরের স্থাপনার কারণে সেগুলো ভরাট হয়ে ক্রমান্বয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। বন্দরের স্কুল কলেজে এলাকার ছেলেমেয়েদের ভর্তির সুযোগ খুবই অল্প। বন্দরের হাসপাতালেও এলাকার জনসাধারণের চিকিৎসাসেবার সুযোগ নেই বললেই চলে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরির নিয়োগও বন্ধ।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে স্থাপিত অফডক কনটেইনার ইয়ার্ডগুলোর জন্য কার্যত ওই এলাকার জনগণের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। অফডক ইয়ার্ডগুলোর ভারী যানবাহন তথা কনটেইনার লরি, ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যানের কারণে বিমানবন্দর সড়কটি প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। তা ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম, সিইপিজেড, কেইপিজেডসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক বিদেশি নাগরিক আসা-যাওয়া করে। অফডক ও ইয়ার্ড কেন্দ্রিক যানজটের কারণে বিদেশি নাগরিকরা চট্টগ্রামে আসতে অনীহা প্রকাশ করছে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চট্টগ্রাম ব্যবসাশূন্য নগরে পরিণত হবে। যার প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন বলে জনগণের কাছে নেতাদের জবাবদিহি রয়েছে উল্লেখ করে সুজন বলেন, জনগণের দুঃখ কষ্টে আমরা কোনোভাবেই চুপ থাকতে পারি না। আমরা চট্টগ্রামের জনগণের পক্ষ থেকে আপনাকে অনুরোধ জানাতে এসেছি আপনি বিষয়গুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। প্রয়োজনে চট্টগ্রামের মেয়র এবং মন্ত্রীদের সহযোগিতা নিয়ে আপনি বিষয়গুলোর সমাধানে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসবেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক, নগর আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমদ, কার্যনির্বাহী সদস্য নূরুল আলম, কামরুল হাসান ভুলু, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, ইপিজেড থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হারুনুর রশীদ, যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. আবু তাহের, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াছ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ (সিবিএ) সভাপতি আবুল মনছুর, কার্যকরী সভাপতি মো. আজিম, সহ-সভাপতি মোকারম হোসাইন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছাদেক নান্না, সহ-সাধারণ সম্পাদক নাছির চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য আশীষ কান্তি মুহুরী, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সুলতান নাছির উদ্দিন, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. ইসকান্দর মিয়া, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোর্শেদ আলী প্রমুখ।

>> যানজটে বিদেশি ক্রেতাদের নিয়ে শঙ্কা গার্মেন্টস মালিকদের
>> পণ্যবাহী গাড়ির পাস ইস্যুকে ঘিরে বন্দরে যানজট 
>> বন্দর রোডের দীর্ঘ যানজট, নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা
>> বন্দরমুখী সড়কে যানজটে উদ্বেগ সিএমসিসিআই সভাপতির
>> কাস্টম মোড় থেকে বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।