ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পণ্যবাহী গাড়ির পাস ইস্যুকে ঘিরে বন্দরে যানজট 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
পণ্যবাহী গাড়ির পাস ইস্যুকে ঘিরে বন্দরে যানজট  বন্দর কেন্দ্রিক যানজট। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) চট্টগ্রাম বন্দরে নিরাপত্তাজনিত কারণে পণ্যবাহী গাড়ির সহকারীর ‘পাস’ ইস্যুতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

নগরের আগ্রাবাদ থেকে শুরু করে বারিকবিল্ডিং, ফকিরহাট, নিমতলা, পিসি রোড, টোল রোড, বড়পুল, কাস্টম মোড়, সল্টগোলা, ইপিজেডসহ বিমানবন্দর সড়কে কার্যত অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর কেন্দ্রিক পণ্যবাহী গাড়ির প্রয়োজনীয় টার্মিনাল থাকায় সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার পণ্যবাহী গাড়ি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ সূত্র জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মানের বন্দর হিসেবে নিরাপত্তার স্বার্থে আমদানি-রফতানির পণ্য, কনটেইনার পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ির চালক ও সহকারীর ‘পাস’ ইস্যুতে কিছু ডকুমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। এর মধ্যে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সহকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ।

দুই মাস ধরে এ নিয়মে সব পণ্যবাহী গাড়ি পাস সংগ্রহ করলেও সম্প্রতি একটি চক্র জলাবদ্ধতা, সড়ক সংস্কার ইস্যুতে বিমানবন্দর সড়কে সৃষ্ট যানজটকে পুঁজি করে বন্দরের পণ্যবাহী গাড়ির সহকারীর পাস ইস্যুর বিষয়টি জুড়ে দেন। সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেল থেকে এ নিয়ে চালক ও সহকারীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

বন্দর কর্তৃপক্ষ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পরিচয়পত্র আছে এমন চালক এবং পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আছে এমন সহকারীর পাস ইস্যু করছে।

বন্দরের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি কোড (আইএসপিএস) বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বন্দরে অটোমেশন, ডাটাবেজ তৈরিসহ অনেক কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে পণ্যবাহী গাড়ির ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। এক্ষেত্রে চালকদের লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও সহকারীদের অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্রও দেখাতে পারছে না। অনেকের বয়স মাত্র ১৩-১৫ বছর। এসব সহকারীকে বন্দরে প্রবেশের পাস দিলে অনেক চালক তাদের হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ছেড়ে দেন। এর ফলে বন্দরের অভ্যন্তরে দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় প্রাণহানিও হচ্ছে।

তিনি বলেন, বন্দরের বাইরের সড়কে যানজট হচ্ছে ভারি বৃষ্টি, জলাবদ্ধতার কারণে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি এবং রং সাইডে গাড়ি চালানোর প্রবণতা বাড়ার কারণে।    

প্রাইম মুভার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরে প্রতিদিন প্রাইম মুভার, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের ৪ হাজারের বেশি গাড়ি যাওয়া-আসা করে। বন্দরে পণ্য পরিবহনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গাড়ি আসে। এখন গাড়ির সহকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, অনলাইন জন্মনিবন্ধন ছাড়া পাস ইস্যু না করায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বড় গাড়িগুলো সহকারী ছাড়া শুধু চালকের পক্ষে হুক পয়েন্টে বা টার্মিনালে গিয়ে পণ্য লোড-আনলোড, কাগজপত্র বুঝে নেওয়া সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।    

যানজটের কবলে পড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আগ্রাবাদে তীব্র যানজট দেখে বড় পোল দিয়ে আসি। সেখানেও যানজট। তারপর সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখা একপাশ দিয়ে উল্টোপথে বন্দর স্টেডিয়ামের পাশের পথ দিয়ে চলে আসি। আমার অনেক সহকর্মী আগ্রাবাদ থেকে হেঁটে কাস্টম মোড় এসেছেন।   

জুনিয়র চেম্বারের সাবেক সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, যানজটে অচল হয়ে পড়ছে বিমানবন্দর সড়ক। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের সামনে এভাবে চলতে থাকলে দেশের আমদানি, রফতানি, ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন ধস নামবে তেমনি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাতেগোনা যে ফ্লাইটগুলো আছে সেগুলোর শিডিউল বিপর্যয় ঘটবে। বিদেশিদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।  

বন্দরের মুখপাত্র ও সচিব ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরের বাইরের সড়কে যানচলাচল দেখভালের দায়িত্ব সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের। বন্দরের গেটে আমদানি-রফতানিকারকের গাড়ি আসলে পাস নিয়ে ঢুকে যাবে। এখন কোনো গাড়ির পাস ইস্যুতে যদি আইএসপিএস গাইডলাইন অনুযায়ী ডকুমেন্ট পাওয়া না যায় সেটি ফেরাতে কিছুটা সময় লাগছে। এরপর পেছনের গাড়ি সামনে আসতে পারছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।