ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যেভাবে জঙ্গি হয় কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক ছাত্র আশফাক

সরওয়ার কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
যেভাবে জঙ্গি হয় কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক ছাত্র আশফাক ছবিতে সাদা পায়জামা পরা মো. আশফাক-উর-রহমান অয়ন প্রকাশ আরিফ প্রকাশ অনিক

চট্টগ্রাম: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ফেসবুক ও ইউটিউবে মোল্লা ইব্রাহিমের বক্তব্য শুনে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন মো. আশফাক-উর-রহমান অয়ন প্রকাশ আরিফ প্রকাশ অনিক। পরে বনে যান জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম নেতা।

সম্প্রতি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে আটক হওয়া মো. আশফাক-উর-রহমান অয়ন প্রকাশ আরিফ প্রকাশ অনিক সম্পর্কে এসব তথ্য জানা গেছে র‌্যাব কর্মকর্তাদের কাছে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেধাবী ছাত্র মো. আশফাক-উর-রহমান অয়নের জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হওয়ার পেছনের কথা।

ধরা পড়ার পর র‌্যাবের কাছে নিজের সম্পর্কে এসব তথ্য নিজেই জানিয়েছেন আশফাক-উর-রহমান অয়ন।

নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার নরোত্তম এলাকায় বাড়ি মো. আশফাক-উর-রহমান অয়ন প্রকাশ আরিফ প্রকাশ অনিকের (২৬)।

পরিবারের সঙ্গে থাকতেন চট্টগ্রামে। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন।

২০১১ সালে সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে মেধাবী আশফাক-উর-রহমান অয়ন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে অনার্স সম্পন্নও করেন তিনি।

২০১৪ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ফেসবুক ও ইউটিউবে মোল্লা ইব্রাহিমের বক্তব্য শুনে তার মধ্যে উগ্রবাদী চেতনা জাগে। মোল্লা ইব্রাহিমের বক্তব্য থেকেই বাংলাদেশে ‘জিহাদী তৎপরতা’ ও আল কায়দা সম্পর্কে ধারণা পান আশফাক-উর-রহমান অয়ন।  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোল্লা ইব্রাহিমের কয়েকজন অনুসারীর সঙ্গে পরিচয়ও হয় আশফাক-উর-রহমান অয়নের। তাদের মাধ্যমে আশফাক-উর-রহমান অয়ন সম্পৃক্ত হন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের সঙ্গে। আনসার-আল-ইসলামে যোগ দেওয়ার পর অনিক ও আরিফ দুইটি ছদ্মনাম ব্যবহার শুরু করেন আশফাক-উর-রহমান অয়ন।
 
২০১৫ সালে আনসার-আল-ইসলামের সামরিক শাখার আইটি বিভাগের দায়িত্বে নিযুক্ত হন আশফাক-উর-রহমান অয়ন। একই বছর ঢাকায় আনসার-আল-ইসলামের ১২ দিনের একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন তিনি। সেখানে ধারণা নেন গেরিলা যুদ্ধের। তার সঙ্গে পরিচয় হয় জঙ্গি নেতা মেজর জিয়ার। ঘনিষ্ঠতাও বাড়ে আনসার-আল-ইসলামের সঙ্গে।  

২০১৬ সালে অনার্স সম্পন্ন করে ঢাকায় চলে যান আশফাক-উর-রহমান অয়ন। ঢাকায় গিয়ে দায়িত্ব নেন আনসার-আল-ইসলামের মিডিয়া উইংয়ের।  

২০১৭ সালের মে মাসে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হন আশফাক-উর-রহমান অয়ন। একই বছরের শেষের দিকে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। পরিচয় প্রকাশ পাওয়ায় আশফাক-উর-রহমান অয়নকে আর সংগঠনে রাখেনি আনসার-আল-ইসলাম। পরে যোগ দেন জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশে (জেএমবি) এবং দায়িত্ব নেন সামরিক শাখার আইটি বিভাগের।  

গত ১১ জুলাই ল্যাপটপ, বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই ও লিফলেটসহ চট্টগ্রাম নগরের দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর এলাকা থেকে র‌্যাবের হাতে দুই সঙ্গীসহ আটক হন জেএমবি নেতা আশফাক-উর-রহমান অয়ন।

র‌্যাব-১১ এর অপারেশন অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ফেসবুক ও ইউটিউবে মোল্লা ইব্রাহিমের বক্তব্য শুনে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন মো. আশফাক-উর-রহমান অয়ন প্রকাশ আরিফ প্রকাশ অনিক। পরে বনে যান জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম নেতা।

মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, শুরুতে আনসার-আল-ইসলামে যোগ দিয়ে সেখানে সামরিক শাখার আইটি বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। পরে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে আনসার-আল-ইসলাম থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশে (জেএমবি) যোগ দেন এবং দায়িত্ব নেন সামরিক শাখার আইটি বিভাগের। দুই সঙ্গীসহ চট্টগ্রামে আত্মগোপনে থেকে জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছিলেন আশফাক-উর-রহমান অয়ন।

মো. আশফাক-উর-রহমান অয়ন প্রকাশ আরিফ প্রকাশ অনিকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানায় সস্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।