ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

টানা বর্ষণে চট্টগ্রামে পাহাড় ধস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৯
টানা বর্ষণে চট্টগ্রামে পাহাড় ধস কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় পাহাড় ধস। ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: টানা বর্ষণের মধ্যে নগরের বায়েজিদ থানার আরেফিন নগর এবং কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় পাহাড় ধসের সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে হাটহাজারী সার্কেলের অধীনে থাকা আরেফিন নগর এবং আগ্রাবাদ সার্কেলের অধীনে থাকা কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় পাহাড় ধসের সৃষ্টি হয়।

জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার রাজিব হোসেন বাংলানিউজকে জানান শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আরেফিন নগরের অদূরে অবস্থিত জানু বাপের ঘোনা সংলগ্ন পাহাড়ে ধসের সৃষ্টি হয়।

ধসের পরপরেই স্থানীয়দের সহায়তায় সেনাবাহিনীর একটি টিম এবং ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি ঘর।                                             <div class=

ছবি: বাংলানিউজ" src="https://www.banglanews24.com/media/imgAll/2019May/bg/ppp-bg220190713155737.jpg" style="margin:1px; width:100%" />

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় শাহানুর আক্তার (৪০) এবং মর্জিনা বেগম (১৮) নামে দুই নারীকে উদ্ধার করা হয়। সম্পর্কে মা-মেয়ে দুজনই পাহাড় ধসের কারণে ঘরে আটকে ছিলেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সম্রাট খীসা বাংলানিউজকে জানান, পাহাড় ধসের কারণে দুই নারী আটকে পড়ে। তাদের উদ্ধারের পর পুরো পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। ১৫টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাসবাস করা পরিবারগুলোকে সরে যেতে কয়েক দিন ধরেই আমরা মাইকিং করেছি। কিন্তু তারা সরেনি। এ কারণে অভিযান চালিয়ে আজকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পাহাড় ধসে ভেঙে পড়ে গাছ।  ছবি: বাংলানিউজ

৯টার দিকে গরিবুল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ স্টেশনের একটি দল ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চালায়। এসময় নুসরাত শারমিন নামে এক শিশুকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আখতার বাংলানিউজকে জানান, পাহাড় ধসের খবর পেয়ে ফায়ার স্টেশনের ৩টি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আটকে পড়া এক শিশুকে উদ্ধার করে। পরে ঘটনাস্থলের আশপাশে অভিযান চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা ১২টি পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে শনিবার (১৩ জুলাই) ভোরে সার্সন রোডে দেয়াল ধসের ঘটনা ঘটে। তবে এসময় সড়কে যানবাহন চলাচল সীমিত থাকায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে।

সার্সন রোডে দেওয়াল ধস।  ছবি: উজ্জ্বল ধর

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তালিকা অনুযায়ী নগরের ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। গত ১৬ মে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৯তম সভায় এসব পরিবারকে ১৫ জুনের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান।

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির বাধা সত্ত্বেও রমজানে উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম পর্যায়ে মতিঝর্ণা পাহাড়, বাটালী হিল, পোড়া কলোনি পাহাড় এবং একে খান পাহাড় থেকে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করা ৩৫০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়।

উচ্ছেদ অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায় শুরুর দিন গত ৩ জুলাই পরিবেশ অধিদফতর সংলগ্ন পাহাড় থেকে ৫০টি পরিবার উচ্ছেদ করা হয়। দ্বিতীয় দিন ৭ জুলাই জালালাবাদ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন মধু শাহ পাহাড় থেকে ৩৪টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়।

তৃতীয় দিন ৯ জুলাই ট্যাংকির পাহাড় থেকে ১৬ দখলদারের অধীনে থাকা ৮০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। সর্বশেষ ১০ জুলাই ফয়'স লেক সংলগ্ন শান্তিনগর এলাকার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা ১০০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন।  

এছাড়াও ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা লোকজনকে সাময়িক আশ্রয় দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে ত্রাণ ও খাবার দেওয়া হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৯
এমআর/এসি/টিসি       

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।