ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

'সাগরে যখন ভাসছিলাম মাছে কামড়াচ্ছিলো আমাকে'

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৯
'সাগরে যখন ভাসছিলাম মাছে কামড়াচ্ছিলো আমাকে' উদ্ধার হওয়া ভারতীয় জেলে রবীন্দ্রনাথ দাস। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কেদুয়া থেকে শুক্রবার রাতে বের হই। শনিবার রাতে ঝড়ের কবলে পড়ি। তখন আমি ভারতীয় জলসীমায় ছিলাম। হঠাৎ সিগন্যাল দেওয়াতে আমি আর ভারত উপকূলে পৌঁছাতে পারিনি। আমাকে এদিকে ভাসিয়ে নিয়ে আসে। একসময় নৌকাটা উল্টে যায়। আমার বোটে ১৫ জন ছিলাম।

আমি কিন্তু মাঝি। একটি বাঁশে ১৪টি রশি (জার্কিং) বেঁধে ভেসেছিলাম।

আড়াই-তিন দিন ভেসেছিলাম সবাই। এরপর কেউ দুর্বল হয়ে, কেউ অবস হয়ে সাগরে তলিয়ে যায়।
সবশেষে আমার কাছে ছিল ভাইপো স্বপন দাশ (২২)। এসআর শিপিং কোম্পানির জাহাজ ‘এমভি জাওয়াদ’ আমাকে উদ্ধারের তিন ঘণ্টা আগে ভাইপোটা তলিয়ে যায় সাগরে।

এতটুকু বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন বঙ্গোপসাগরে উত্তাল ঢেউ আর নোনা পানির সঙ্গে লড়াই করে প্রাণে বেঁচে যাওয়া ভারতীয় জেলে রবীন্দ্রনাথ দাস (কানু দাস)।

‘সবার লাইফ জ্যাকেট ছিল, আমারই ছিল না। আমার প্যান্টের ভেতরে লাইফ জ্যাকেটের তিন-চারটি শোল (ফোম) ছিল। বোট যখন উল্টে যায় তখন আমি ট্রলারের ভেতরে ছিলাম। ভাইপোর লাইফ জ্যাকেট ছিল। সে আমার কাঁধে বসে ছিল। হঠাৎ এমন ঢেউ আসলো। দুইজন দুই দিকে চলে গেলাম। আমি উঠে ভাইপোকে আর দেখিনি। ’ যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, যখন বৃষ্টি হতো হা করে পান করতাম। কিন্তু মাছ আমার বাহুতে, ঘাড়ে কামড়াচ্ছিলো। দিন রাত কখনো ঘুমাইনি। বাবা, মা, ছেলে আর মেয়ের মুখটি ভেসে উঠছিলো।

উদ্ধার হওয়া ভারতীয় জেলে রবীন্দ্রনাথ দাস।  ছবি: সোহেল সরওয়ার

জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য বার বার কৃতজ্ঞতা জানান এমভি জাওয়াদ, কেএসআরএম, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি।

বলেন, ‘উনারা আমার জন্য যে কষ্ট করেছেন, জাহাজটা যেভাবে ঘুরিয়েছেন সে জন্য আমি এখনো বেঁচে আছি। নয়তো আমি কখন চলে যেতাম। ’

‘আমি আমার মা-বাবাকে দেখতে চাই। কাল (বৃহস্পতিবার) ভিডিও কলে মা-বাবা, ছেলে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার সঙ্গে কথা বলেছি জাহাজ থেকে। প্রায় ৫ হাজার লোক এসেছিল আমার বাড়িতে। আমার অনুভূতি বলে বোঝাতে পারছি না। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি এ জাহাজ কোম্পানিকে যেন আরও বড় করে। ’

আর মাছ ধরতে যাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আর সাগরে মাছ ধরতে যাবো না। আমি যে কষ্ট পেয়েছি, ভগবান ছাড়া কেউ বাঁচাত না।

যদি সাগরে কোস্টগার্ড, নেভি চেষ্টা করেন তাহলে আরও কাউকে জীবিত পাওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার এ ভাগ্যবান জেলে।

কেএসআরএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের জাহাজটি বুধবার (১০ জুলাই) বেলা পৌনে একটার দিকে কুতুবদিয়া থেকে ওই জেলেকে উদ্ধার করে।

শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে পতেঙ্গার বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি জেটিতে উদ্ধার করা জেলেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নৌবাণিজ্য দফতরের প্রধান কর্মকর্তা ড. সাজিদ হোসেন, কেএসআরএমের সিইও প্রকৌশলী মেহেরুল করিম, মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম, এমভি জাওয়াদের ক্যাপ্টেন এসএম নাসির উদ্দিন, মাস্টার পুলক কুমার ভাস্কর, মেরিন সুপার ওসমান গনি, ডিপিএ-সিএসএ ফয়েজ আহমদ জুকব, ডাক্তার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্রান্ড ম্যানেজার মনিরুজ্জামান রিয়াদ প্রমুখ।

এরপর রবীন্দ্রনাথ দাশকে কোস্ট গার্ড কার্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।