ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘নারীদের কাছে এখন দুঃসাধ্য বলতে কিছু নেই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪১ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
‘নারীদের কাছে এখন দুঃসাধ্য বলতে কিছু নেই’ বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: পুলিশে নিয়োজিত নারী সদস্যরা কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারীদের সামনে এখন দুঃসাধ্য বলতে কিছু নেই। তারা সবক্ষেত্রে এখন কৃতিত্ব রাখছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেল তিনটায় নগরের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) অ্যাওয়ার্ড প্রদান- ২০১৯ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান, পুলিশ নারী কল্যাণ (পুনাক) সমিতির সভাপতি হাবিবা জাবেদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্ডকার গোলাম ফারুক ও নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ অভিযান) আমেনা বেগম।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বৃষ্টি ও রোদের মধ্যেও পুলিশের নারী সদস্যরা সড়কে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো অবহেলা করেন না।

বিশেষ করে পুলিশের সাইবার ইউনিটে তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন-তিনি যদি ক্ষমতায় আসেন তাহলে দেশকে বদলে দেবেন। তিনি ঠিকই বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। একটি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ ও মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে আমরা পৌঁছে গেছি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। এখন তার টার্গেট দেশকে উন্নত দেশে নিয়ে যাওয়া। এ জন্য তিনি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন ২০৪১ সাল।

ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ২০১০ সালের দিকে নারী ক্ষমতায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নারী নীতি সংশোধন করেন। ওই সময়ে অনেকে তার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তার যে দূরদর্শিতা ছিলো অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন সেই বাংলাদেশ গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নারীরা যেন সব জায়গায় তাদের দক্ষতা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

‘এখন শিক্ষা ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এমনকি খেলাধুলা ক্ষেত্রেও নারীরা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিশোর নারীরা কয়েকদিন আগে পাকিস্তানকে ১৪টা গোল দিয়েছে। এমনকি হিমালয় পর্বতেও বাংলাদেশের নারীরা পতাকা উড়াচ্ছে। তাহলে নারীরা এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখতেন তা এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে’ বলেন-আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

পুলিশে নারী সদস্য ৫০ ভাগ করার দাবি নওফেলের

পুলিশে নারী সদস্য ৫০ ভাগ করার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা-উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী থাকে ৬০ ভাগ মেয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রেও পুরুষের সঙ্গে সমানতালে অবদান রাখছে নারীরা। কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমরা তাদের হারিয়ে ফেলছি। হারিয়ে ফেলার কারণ সামাজিক নিরাপত্তা। আর এই সামাজিক নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

‘তাই আমি অনুরোধ জানাবো ২০৩০ সালের মধ্যে নারী পুলিশ সদস্য যেন ৫০ ভাগে উন্নীত করা হয়’ বলেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী-পুরুষের ভেদাভেদ কমিয়ে আনছেন। বৈষম্য দূর করে আমরা এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল আমরা নির্দিষ্ট সময়ের আগে অর্জন করতে সক্ষম হই। বিশ্বাস করি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাও সময়ের আগেই অর্জন করতে পারব। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগগুলো নিচ্ছেন তা দেখে আমরা অভিভূত।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেন নারী ক্ষমতায়নে কাজ করতে। তিনি নারী ক্ষমতায়নে যেভাবে নারী নীতিগুলো বাস্তবায়ন করছেন তা নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। নারী ক্ষমতায়নে তিনি নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আমরা সেই বিপ্লবকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যেসব সেক্টরে উন্নয়ন হয়েছে, সব ক্ষেতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। তার নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে সব সূচকে পেছনে ফেলেছে। কয়েকটি সূচকে ভারতকেও বাংলাদেশ পেছনে ফেলেছে। পুলিশে বর্তমানে যারা নারী সদস্য আছেন, আপনাদের কৃতিত্বের কারণে এ বাহিনীতে নারী সদস্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জাবেদ পাটোয়ারি।

শান্তি রক্ষা মিশনে আরও এক নারী ইউনিট পাঠানো হবে

পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, জাতিসংঘে নারী পুলিশের সদস্যের সংখ্যা ১০ শতাংশ। প্রায় এক হাজার ৪০০ নারী পুলিশ সদস্য জাতিসংঘের শান্তি মিশনে কাজ করছেন। কঙ্গো, সুদানসহ আফ্রিকা মহাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ দেশে সাহসের সঙ্গে এসব সদস্য দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে শান্তি রক্ষা মিশনে পুলিশের নারী সদস্যের এক ইউনিট কাজ করছে। সামনে আরও এক ইউনিট পাঠানো হবে।

পুরস্কার নিচ্ছেন কোতোয়ালী থানার ওসি মো. মহসীন।

অনুষ্ঠানে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের আয়োজনে ১১ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। তারা হলেন- পুলিশের এআইজি (পুলিশ হোডকোয়ার্টার্স) তাপতুন নাসরীন, অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রাণী সাহা ও পুলিশ সুপার স্পেশাল ব্রাঞ্চে কর্মরত মাহফুজা বেগম।

এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পিবিআই ঢাকা-মেট্রো) মিনা মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ( কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট) মাহফুজা লিজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সার্কেল) ফাহমিদা হক শেলী, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন, এসআই জান্নাতুল ফেরদৌস ও কনস্টেবল নুসরাত জাহান পুরস্কার পান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।