বুধবার (২৬ জুন) সকালে নগরের মোটেল সৈকতে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম মেট্রো উপ অঞ্চল এ সভা আয়োজন করে।
ডিআইজি খন্দকার মো. গোলাম ফারুক বলেন, মাদক হচ্ছে সব অপরাধের মা। মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, নির্মূল কঠিন কাজ।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানে পপি ফুলের চাষ হয়। মাদক ব্যবসা হলো তাদের আয়ের বড় উৎস। তারা পর্দার জন্য মেয়েদের গায়ে আলকাতরা মাখতে পেরেছে কিন্তু পপি ফুলের চাষ বন্ধ করতে পারেনি। পাকিস্তান মাদকের করিডোর। মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার মাফিয়া ডনদের বড় ব্যবসা। সারা বিশ্বের নারীদের পতিতালয়ে পাচার করে তারা।
ডিআইজি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আবেগপ্রবণ। যদি চায়-যেকোনো অসাধ্য সাধন করতে পারে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দমিয়ে রাখতে পারেনি। হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া, পুরোহিত হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জঙ্গিমুক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জঙ্গিদের আস্তানার খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছিল জনগণই। তারা জঙ্গিবাদ রুখে দিয়েছে। সামগ্রিকভাবে উদ্যোগ নিলে মাদকবিরোধী যুদ্ধে বিজয় আসবে। দেশপ্রেমের অভাবে আমরা মিয়ানমারের কাছে পরাজিত হচ্ছি। তারা ১২ লাখ রোহিঙ্গা চাপিয়ে দিয়েছে। তারা ইয়াবা দিয়ে এ দেশ থেকে টাকা পাচার করছে।
ঢাকার উচ্চশিক্ষিত, মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমারে পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে ঘোড়াকে ইয়াবা খাওয়ানো হয়। এটা সেবন করলে ক্ষুধা লাগে না, ঘুম আসে না।
মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন আইনে ২৫ গ্রাম ইয়াবাসহ ধরা পড়লে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাই সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে চাহিদা কমে যাবে। চাহিদা কমলে সরবরাহ কমে যাবে। মাদকসেবীদের চিকিৎসা করাতে হবে। মালয়েশিয়া অদ্ভুত স্টাইলে মাদক ব্যবসা বন্ধ করেছে। আমাদের মাদক নিরাময় কেন্দ্র বাড়াতে হবে। এখন যে বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র আছে সেগুলোতে সমস্যা অনেক। হয় মাদক তুলে দিচ্ছে নয়তো নির্যাতন করছে।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা, র্যাব-৭ এর উপ অধিনায়ক মেজর মো. মেহেদী হাসান।
মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মাদক একটি মানসিক ও সামাজিক রোগ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকাসক্ত আছে। কিশোর অপরাধীরা মাদক ব্যবসায় যুক্ত হয়। সমাজে মাদকসেবীদের, বখাটের উৎপাত বেড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে ভয় পান ভুক্তভোগীরা। সরকার আইন করার পরও পাবলিক প্লেসে ধূমপান চলছে। অনেক অফিসে কর্তা ব্যক্তিরা ধূমপান করে। ট্রেনের টয়লেটে ধূমপান চলছে।
তিনি কসবা, আখাউড়ায় সৎ, সাহসী পুলিশ অফিসার নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘হেলথ জাস্টিস, জাস্টিস হেলথ’ প্রতিপাদ্যে এবার মাদক পাচারবিরোধী দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। সুস্বাস্থ্যেই সুবিচার, মাদক মুক্তির অঙ্গীকার। মাদক হচ্ছে সকল পাপের মা। মাদকের মা হচ্ছে সিগারেট, যা মাদকের রাজ্যের দরজা। বিবেক জাগ্রত করতে হবে। ধূমপায়ীদের অফিসে, পরিবারে, সমাজে ‘না’ বলতে হবে।
গাজী গোলাম মাওলা বলেন, সরকার নতুন প্রজন্মের সুরক্ষায় মাদকের কুফল পাঠ্য করেছে, প্রাত্যহিক সমাবেশে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা হয়। সচেতনতা হচ্ছে বড় শিক্ষা। গতকাল মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকারি চাকরি প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করা হবে।
মেজর মেহেদী হাসান সন্তানের ওপর অভিভাবকের নজরদারি বাড়ানো, শিক্ষার্থীদের জন্য আউটডোর-ইনডোর খেলাধুলার আয়োজন ও ড্রাগ টেস্টিং কিডের মাধ্যমে পরীক্ষার আহ্বান জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
স্বাগত বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, মাদকাসক্তির মাধ্যমে এইডস ছড়াচ্ছে। মাদকাসক্তদের চিকিৎসার বিকল্প নেই। সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য, মাদকাসক্তদের কর্মের হাতিয়ার করা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী মিলি চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৯
এআর/এসি/টিসি