ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সচেতনতায় কমছে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৯
সচেতনতায় কমছে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা সচেতন করার পরও ঝুঁকি নিয়ে রেলক্রসিং পার হচ্ছে। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: রেললাইনে দুর্ঘটনা রুখতে আইনের কড়াকড়ি ও নাগরিকদের সচেতন করতে রেল কর্তৃপক্ষের নানা কার্যক্রমের সুফল মিলেছে। ২০১৮ সালে ট্রেনে কাটা পড়ে চট্টগ্রামে যেখানে ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৬ মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলেও ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) জিআরপি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে পূর্বাঞ্চলে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৮১৩ জনের। গড় হিসেবে প্রতিবছর মৃত্যু হয়েছে ৭০৩ জনের বেশি।

২০১৭ সালে মারা গেছে ৮১২ জন। ২০১৮ সাল জুড়ে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের সচেতনতার কার্যক্রম করার পর, ওই বছর মারা গেছে ৪৩৫ জন।
অর্থাৎ মৃত্যু হার ২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ সালে এসে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়া চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলে ৪৩ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।

মানুষ সচেতন না হলে আইন প্রয়োগে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  ছবি: সোহেল সরওয়ারজিরআরপি পুলিশ দাবি করেছে, ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত যেসব লোক ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই রেল লাইনের মধ্য দিয়ে অসতর্ক চলাচল, চলন্ত ট্রেনে সেলফি তোলা, কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তা পারাপারের কারণে।

চট্টগ্রামের জিআরপি পুলিশের ওসি মোস্তাফিজ ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার ১০ মাসে রেলওয়ের বিভিন্ন জায়গায় ২০টি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করেছি। সেখানে ট্রেন রাস্তার দু’পাশে বাজার না বসা, কানে হেডফোন লাগিয়ে ট্রেন রাস্তায় না হাঁটা, সেলফি না তোলাসহ নানা সচেতনামূলক বিষয় বুঝানো হয়। এই সচেতনতা কার্যক্রম করার ফলে সুফল মিলেছে, আগের বছরের তুলনায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকাংশে কমেছে।

রেলপথের দুই পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় সবসময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইনানুযায়ী ওই সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে তাকে আইনের ১০১ ধারায় গ্রেফতার করার নিয়ম আছে। এমনকি এই সীমানার ভেতরে গবাদিপশুও থাকলে আটক করে তা বিক্রি করে সেই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ারও বিধান রয়েছে।

ট্রেন খুব কাছে, এরমধ্যেও পার হচ্ছেন মানুষজন।  এ বিষয়ে মোস্তাফিজ ভূঁইয়া বলেন, রেললাইন দিয়ে হাঁটা আইনত নিষিদ্ধ। তারপরও মানুষ এগুলো মানছে না। অনেক সময় আইন দিয়ে হয় না। এ অবস্থায় জনগণকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার বাইরে এর কোনো সমাধান নেই। এ জন্য আমরা সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করছি।

রেলওয়ের ভূমি বিভাগ যদি ট্রেনের রাস্তার আশে পাশে গড়ে উঠা ঘর-বাড়ি ও দোকানপাট উচ্ছেদ করে তাহলে এ দুর্ঘটনা আরও কমে আসবে বলে মনে করছেন ওসি মোস্তাফিজ ভূঁইয়া।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কিসিঞ্জার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকদিন আগেও অবৈধ দখলে থাকা রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের এক একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। খুলশীর রেলগেট সংলগ্ন বিজিএমইএ ভবনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। আমাদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত আছে।

...রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম সৈয়দ ফারুক আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, রেললাইন ধরে হাঁটা, রেললাইন ধরে হাঁটার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বিভিন্ন বিষয় সতর্কতামূলক লিফলেট, ব্যানার প্রতিনিয়ত বিলি করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়েও বৈঠক করা হচ্ছে। এছাড়া মিডিয়াতেও প্রচারিত হচ্ছে দুর্ঘটনার খবর, প্রচার-প্রচারণা। এসব কার্যক্রমের কারণে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৯

জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।